মৃত দুই পর্যটকের দেহ আগলে পোষ্য সারমেয়। ছবি: সংগৃহীত।
হিমাচল প্রদেশে বরফঢাকা পাহাড়ে ট্রেকিং করতে গিয়ে মৃত্যু হল দুই পর্যটকের। দু’দিন ধরে পাহাড়েই পড়ে রইল দেহ। আর সেই দেহ আগলে বসে ছিল তাঁদেরই এক জনের পোষ্য সারমেয়। যত ক্ষণ না কেউ ওই দেহ দেখতে পেয়ে উদ্ধারে এসেছেন, তত ক্ষণ পর্যন্ত সারমেয়টি সমানে ডেকে গিয়েছে। আর সেই সারমেয়টির আওয়াজ শুনেই দুই পর্যটকের দেহ খুঁজে পায় সন্ধানকারী দল।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত দুই পর্যটকের নাম অভিনন্দন গুপ্ত (৩০) এবং প্রণীতা ওয়ালা (২৬)। অভিনন্দন পঞ্জাবের পঠানকোটের বাসিন্দা। প্যারাগ্লাইডিং এবং ট্রেকিংয়ের মতো ‘অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস’-এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গত চার বছর ধরে তাই হিমাচলেই থাকছিলেন তিনি। প্রণীতা মহারাষ্ট্রের পুণের বাসিন্দা। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ মনে করছে, বরফে পা পিছলে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। মঙ্গলবার তাঁদের দেহ উদ্ধার হয়।
কাংড়া জেলা পুলিশ সুপার বীর বাহাদুর জানিয়েছেন, বীর বিলিংয়ে ট্রেকিংয়ে গিয়েছিলেন অভিনন্দন এবং প্রণীতা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ হাজার ফুট উচ্চতায় এই বীর বিলিং ট্রেকিংয়ের জন্য জনপ্রিয়। ফেব্রুয়ারির গোড়া থেকে হিমাচলে তুষারপাত শুরু হয়েছে। ফলে আবার পর্যটকদের ঢল নেমেছে ওই রাজ্যে। প্রণীতাও কয়েক দিন আগে সেখানে গিয়েছিলেন। অভিনন্দনের সঙ্গে প্রণীতা এবং আরও দু’জন বীর বিলিংয়ে যান ট্রেকিংয়ের জন্য। একটি বিশেষ পয়েন্ট পর্যন্ত তাঁরা চার জনে গাড়ি করে যান। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ হতে থাকায় আর এগোনো সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে তাঁরা গাড়ি ছেড়ে হাঁটতে শুরু করেন। কিন্তু কিছু দূর যেতেই পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় প্রণীতা-অভিনন্দনের সঙ্গে থাকা দু’জন ওই পয়েন্ট থেকে ফিরে আসেন। কিন্তু প্রণীতা এবং অভিনন্দন বীর বিলিংয়ে যাওয়ার জন্য মনস্থির করেন।
এক দিন পেরিয়ে যাওয়ায় ট্রেকিং থেকে অভিনন্দন-প্রণীতা না ফেরায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন তাঁদের দলের অন্য সদস্যরা। অনুসন্ধানকারী দু’টি দল দু’ভাগ হয়ে দু’জনের তল্লাশি চালাতে থাকে। যে পয়েন্ট থেকে প্যারাগ্লাইডিং হয়, সেখান থেকে তিন কিলোমিটার দূরে অভিনন্দন এবং প্রণীতার দেহ উদ্ধার হয়। তা-ও আবার নিখোঁজের ৪৮ ঘণ্টা পর। তবে উদ্ধারকারীরা জানাচ্ছেন, সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় যে, ওই দুই পর্যটকের দেহের পাশেই বসেছিল একটি সারমেয়। তাঁদেরই এক জনের পোষ্য সেটি। দু’দিন ধরে সেই দেহ আগলে রেখেছিল সে।