সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বেলা ত্রিবেদী ও বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা। ছবি সংগৃহীত।
তফসিলি জাতি, জনজাতির জন্য সংরক্ষণ অনির্দিষ্ট কালের জন্য চলতে পারে না বলে মত দিলেন সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি।
আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকাদের জন্য সংরক্ষণের পক্ষে সায় দিয়েও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বেলা ত্রিবেদী ও বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালার মত, শ্রেণিহীন, জাতপাতহীন সমাজের জন্য এই সংরক্ষণ ব্যবস্থার পুনর্বিবেচনা হওয়া উচিত। সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে তিন জন ইডব্লিউএস কোটার পক্ষে রায় দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিচারপতি ত্রিবেদী ও বিচারপতি পারদিওয়ালা সংরক্ষণের সময়সীমা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। বিচারপতি ত্রিবেদী বলেন, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরে এই সংরক্ষণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা উচিত।
বিচারপতি ত্রিবেদী রায় ঘোষণা করার সময় বলেন, ‘‘সংবিধানের প্রণেতারা যা ভেবেছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ সংরক্ষণ নিয়ে যা প্রস্তাব দিয়েছিল এবং সংবিধান তৈরির ৫০ বছরের মধ্যে কী লক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল, তার ভিত্তিতে বলা যায়, সংরক্ষণের সময়সীমা রয়েছে।’’ সংবিধানের ৩৩৪-তম অনুচ্ছেদের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, সংসদে, বিধানসভায় এসসি, এসটি-দের জন্য সংরক্ষণে সময়সীমার কথা বলা হয়েছিল। তা সময়ে সময়ে বাড়ানো হয়েছে। এখন তার সময়সীমা ২০৩০ সাল। সংসদে, বিধানসভায় অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের জন্য সংরক্ষণের আসন সংরক্ষণে ইতি টানা হয়েছে। একই ভাবে সংবিধানের ১৫ ও ১৬-তম অনুচ্ছেদে এসসি, এসটি, ওবিসিদের জন্য যে সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে, তারও সময়সীমা থাকা উচিত। তা শ্রেণিহীন, জাতপাতহীন, সকলের জন্য সমান অধিকার রয়েছে— এমন সমাজের পথে পদক্ষেপ করা হবে।
বিজেপি জাতপাতের ভেদাভেদের বদলে গোটা হিন্দু সমাজকে হিন্দুত্বের ছাতার তলায় আনতে চায়। তাতে এসপি, বিএসপি, আরজেডি-র মতো দলগুলি বিপদ দেখে। সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত সংরক্ষণের বিরুদ্ধে মুখ খুলে সমালোচনার মুখে পিছু হটেছেন। বিজেপিকে বলতে হয়েছে, তারা সংরক্ষণের বিরুদ্ধে নয়।
বিচারপতি পারদিওয়ালার মতে, সংরক্ষণ সামাজিক, আর্থিক ন্যায়ের পথে হাতিয়ার। তবে তা কায়েমি স্বার্থ হতে দেওয়া যায় না। আসল সমাধান হল, দুর্বলরা যে কারণে পিছিয়ে রয়েছেন, সেই বাধা দূর করা। স্বাধীনতার পরে সেই কাজ শুরু হয়েছিল। এখনও চলছে। উন্নয়ন, শিক্ষা বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে তফাত মুছেছে। যারা গ্রহণযোগ্য মানের শিক্ষা, রোজগার পেয়েছেন, তাঁদের অনগ্রসর তালিকা থেকে বাদ দিয়ে যাঁদের সত্যিই সংরক্ষণ প্রয়োজন, তাঁদের দিকে নজর দেওয়া উচিত।