চলছে মার, তৈরি স্ক্রু-ড্রাইভারও। ছবি: টুইটার
আধমরা লোকটাকে দু’টো পা ধরে উল্টো করে টেনে তোলা হচ্ছে, আবার নামানো হচ্ছে। খোলার চেষ্টা হচ্ছে নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস। আর একটি লোক যত্ন করে স্ক্রু ড্রাইভারে নেকড়া জড়িয়ে সেটা বোতল থেকে ঢালা পেট্রলে ভেজাচ্ছে। তার পরে ওই স্ক্রু-ড্রাইভার ঢোকানো হচ্ছে মাটিতে উপুড় করা লোকটির পায়ুদ্বারে। এত ক্ষণ ডুকরে কাঁদা যুবক এ বার আর্ত চিৎকার করে উঠছেন। অদূরে মাটিতে বসে থাকা আর এক যুবকের উপরেও চলছে চড়থাপ্পড়।
ইন্টারনেটে এই ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পরে নড়ে বসেছে রাজস্থান থেকে দিল্লি। শিউরে উঠেছে নাগরিক সমাজ। এই ঘটনা রাজস্থানের নাগৌর জেলার করণু গ্রামের। আর ভিডিয়োয় যাঁদের নির্যাতিত হতে দেখা গিয়েছে, তাঁরা দু’জনেই দলিত। এক জনের বয়স ২৪, অন্য জন কুড়ির কাছাকাছি। সম্পর্কে দুই তুতো ভাই। যাঁদের অভিযোগ, তাঁরা শুধু দলিত বলেই ৫০০ টাকা চুরির মিথ্যে অভিযোগ চাপিয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁদের উপরে এমন অত্যাচার চালিয়েছে এক দল লোক। স্ক্রু-ড্রাইভার দিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্তই শুধু করা হয়নি, পেট্রল ঢেলে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের যৌনাঙ্গে। লোকগুলো পুড়িয়ে মারতেই চেয়েছিল তাঁদের।
কয়েক দিন আগে চেন্নাইয়ের ভিল্লুপুরমে রাস্তার ধারে শৌচ করায় এক দলিত যুবককে পিটিয়ে মারা হয়েছিল। আজ রাজস্থানের ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ার পরে কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী টুইটারে লিখেছেন, ‘‘দুই দলিত যুবকের নির্যাতনের এই ভিডিয়ো ভয়াবহ, ঘৃণ্য। রাজ্য সরকারকে বলছি, যারা এই অপরাধ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনি ব্যবস্থা নিন।’’ রাজস্থানের কংগ্রেস সরকারের উদ্দেশে রাহুলের এই টুইট লুফে নিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর দল। বিজেপির আইটি সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অমিত মালব্য টুইটারে রাহুলকে পাল্টা লিখেছেন, ‘‘রাজ্য সরকার? মুখ্যমন্ত্রীই তো স্বরাষ্ট্র দফতরের মন্ত্রী আর তাঁর নাম অশোক গহলৌত। রাজ্যে দলিত-নিগ্রহের জন্য কে দায়ী, যদি আপনার জানা না-থাকে, তাই জানালাম।’’ গহলৌত অবশ্য টুইটারে লিখেছেন, ‘‘অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাত অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপরাধীদের শাস্তি ও আক্রান্তদের সুবিচার নিশ্চিত করব।’’
ভীম সিংহ, ইদান সিংহ, হনুমান সিংহ, রঘুবীর সিংহ, ছইল সিংহ, ছত্তর সিংহ এবং রহমতুল্লা নামে সাত জনকে গ্রেফতারের পাশাপাশি আরও সাত জনকে এই ঘটনায় আটক করেছে পুলিশ। ভারতীয় দণ্ডবিধি ও তফসিলি জাতি-জনজাতি আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলা হচ্ছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। ডিজি ভূপেন্দ্র সিংহ জানান, দুবৃত্তিপূর্ণ অপরাধের নজরদারি শাখা বিষয়টি দেখছে। তদন্ত করতে আইজি (মানবাধিকার) নগৌরে গিয়েছেন। টাকা চুরির অভিযোগেও একটি এফআইআর দায়ের হয়েছে। কত টাকা ‘চুরি’ হয়েছে, খতিয়ে দেখা হবে তা-ও।
দুই দলিত যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মূলত অভিযোগের আঙুল ওই এলাকারই মোটরবাইকের একটি ওয়ার্কশপের কিছু কর্মী এবং আরও কিছু লোকের দিকে। ভিডিয়োয় অনেকেরই মুখ দেখা গিয়েছে। কেউ হাসছে, কেউ জেরা-মারধরে পাণ্ডার ভূমিকা নিয়েছে। স্থানীয় সূত্রের বক্তব্য, ওই ওয়ার্কশপ থেকেই টাকা চুরির অভিযোগে দু’জনকে ধরে পেটানো শুরু হয়। মার খেয়ে আধমরা হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা দুই ভাইকে পরে এলাকারই কিছু মানুষ হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। গত কাল দুই যুবক পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান। অস্বীকার করেন চুরির অভিযোগ।
ঘটনাটি নিয়ে আজ হইচই হয় রাজস্থান বিধানসভায়। রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টির তিন বিধায়ক নারায়ণ বেনিওয়াল, ইন্দ্রা দেবী এবং পুখরাজ হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে ওয়েলে নেমে আসেন। স্পিকার আসনে ফিরে যেতে বললে প্রথমে তাঁরা ওয়াক-আউট করেন, পরে ধর্নায় বসেন বিধানসভার সিঁড়িতে।