সুভাষচন্দ্র বসু। —ফাইল চিত্র।
যে কোনও বিষয় নিয়েই ‘সামগ্রিক ঐক্য’ বজায় রেখে কাজ করে মোদী সরকার। কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রকের মধ্যে কোনও পাঁচিল নেই, যেটা নাকি ছিল মনমোহন সরকারের সময়ে। ধারাবাহিক ভাবে এমন দাবিই করে থাকেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সম্প্রতি স্পষ্ট হয়ে উঠল, বিদেশ মন্ত্রক এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মধ্যে দায় ঠেলাঠেলির ছবি। সরকারের দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং অমিত শাহের মন্ত্রক কথা বলছে সম্পূর্ণ বিপরীত অভিমুখে। যে বিষয়টি নিয়ে একে অন্যের ঘাড়ে দায় ঠেলা হচ্ছে, তা সুভাষচন্দ্র বসুর তথাকথিত চিতাভস্ম ফিরিয়ে এনে ডিএনএ পরীক্ষা করানোর মতো দেশবাসীর কাছে অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়।
টোকিয়োর রেনকোজি মন্দির থেকে সুভাষচন্দ্রের চিতাভস্ম ফিরিয়ে ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন জানিয়ে রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ জহর সরকার চিঠি লিখেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। তাঁর মন্ত্রকের তরফে সাংসদকে জানিয়ে দেওয়া হয়, বিষয়টি বিদেশ মন্ত্রকের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে। এর পরে ফের তিনি চিঠি লেখেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে। এ বার জয়শঙ্করের পালা। তিনি উত্তর দেন, এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাজ, তাঁর নয়! আবার এক রাউন্ড করে প্রথমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং পরে এস জয়শঙ্করকে আবেদন করেন নাছোড়বান্দা প্রাক্তন এই সরকারি আমলা তথা বর্তমান সাংসদ। শেষে কিছুটা তিতিবিরক্ত স্বরেই গত ১৮ জুন (জহরবাবুর এই চিঠি লেখা শুরু হয়েছিল গত বছরে শেষের দিকে) বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জহরবাবুকে লেখেন, ‘এই বিষয়ে আমাদের মন্ত্রকের কোনও তথ্যই দেওয়ার নেই। আবার জানাচ্ছি, এই বিষয়টি অতীতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকই সামলেছে। এমনকি তা সংসদে এলেও।’ অথচ এপ্রিল মাসে জহরবাবুর চিঠির জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে তথ্য সংশ্লিষ্ট সাংসদকে জানানোর জন্য অনুরোধ করেছেন বিদেশ মন্ত্রককে। এর আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই-ও জহরের চিঠির জবাবে সুভাষের অন্তর্ধান নিয়ে তৈরি প্রাক্তন কমিটিগুলির কথা বলেন। তার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সুভাষচন্দ্রের ফাইলগুলি প্রকাশ্যে নিয়ে আসার কথা বলে দায় সারেন।
ভারতের স্বাধীনতার ৭৬তম বর্ষ পালনের দিনেই সুভাষ-কন্যা অনিতা পাফ দাবি জানিয়েছিলেন, চিতাভস্মের ডিএনএ পরীক্ষা করা হোক। জার্মানি নিবাসী অনিতা একটি সংবাদ সংস্থাকে বলেছিলেন, “অনেকেই তো বিশ্বাস করেন, ওই চিতাভস্ম সুভাষচন্দ্রের। আজ বিজ্ঞান অনেক উন্নত। চিতাভস্ম থেকে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব সে’টি ভারতের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী সুভাষচন্দ্র বসুর কি না।”