ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ (বাঁ দিকে) ও বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। —ফাইল চিত্র
নেহরু-পটেল তথাকথিত ‘দ্বন্দ্ব’ নিয়ে ফের সরগরম টুইটার। রীতিমতো বাগযুদ্ধে জড়ালেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ। জওহরলাল নেহরু দেশের প্রথম মন্ত্রিসভায় সর্দার বল্লভভাই পটেলকে রাখতে চাননি বলে সম্প্রতি একটি টুইট করেন জয়শঙ্কর। সেই টুইট ঘিরেই শুরু হয় দু’জনের তথ্যের লড়াই। বিতর্কে যোগ দিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরও।
দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনীতিতে নেহরু ও পটেলের মধ্যে সংঘাত ছিল কি না, তা নিয়ে কম লেখালেখি হয়নি। কিন্তু সে বিতর্ক আজও চলে। বিজেপি মনে করে, বল্লভভাই পটেলকে প্রাপ্য গুরুত্ব দেননি নেহরু তথা কংগ্রেস। কংগ্রেস অবশ্য সে অভিযোগ কখনওই মানে না। তবু মাঝেমধ্যেই উঠে আসে সেই বিতর্ক। তাতে নতুন ইন্ধন জোগালেন এস জয়শঙ্কর এবং রামচন্দ্র গুহ।
সূত্রপাত প্রয়াত প্রখ্যাত আমলা ভিপি মেননের জীবনী ঘিরে। সেই জীবনীর সূত্র ধরেই বুধবার বিদেশমন্ত্রী একটি টুইটে লেখেন, ‘‘নারায়ণী বসুর সঙ্কলিত ভিপি মেননের জীবনীতে পটেলের মেনন এবং নেহরুর মেননের মধ্যে বিস্তর ফারাক।’’ জয়শঙ্কর আরও লিখেছেন, ‘‘ওই বই থেকেই জানতে পারলাম যে ১৯৪৭ সালে দেশের প্রথম মন্ত্রিসভায় পটেলকে বাদ দিয়েছিলেন। বহু বিতর্কের বিষয়।’’ ভি পি মেননকে উদ্ধৃত করে বিদেশমন্ত্রী আরও লেখেন, ‘‘সর্দার পটেলের মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতি মুছে ফেলতে ইচ্ছাকৃত ভাবে প্রচার চালানো হয়েছিল।’’
আরও পড়ুন: সমাবর্তন-সঙ্ঘাত তুঙ্গে, উপাচার্যকে শো কজ, শুরু বরখাস্ত করার ‘বিবেচনা’ও
কিন্তু বিদেশমন্ত্রীর এই মত অনেকেই সমর্থন করেননি। তার মধ্যে অন্যতম ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ। তাঁর মতে, এই তত্ত্ব ‘মিথ’ ছাড়া কিছু নয়। বিদেশমন্ত্রীর টুইট ট্যাগ করে তিনি লিখেছেন, ‘‘দ্য প্রিন্ট’-এ তাঁর লেখায় বিস্তারিত ভাবে এই মিথ খণ্ডন করেছেন অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের অধ্যাপক শ্রীনাথ রাঘবন। তা ছাড়া, ভুয়ো খবর বা দেশ গঠনের দুই কারিগরের মধ্যে মিথ্যে দ্বন্দ্ব প্রচার করা বিদেশমন্ত্রীর কাজ হতে পারে না। তাঁর উচিত এটা বিজেপির আইটি সেলের উপর ছেড়ে দেওয়া।’’
তার জবাবে আবার টুইটারে বিদেশমন্ত্রীর কটাক্ষ, কিছু বিদেশমন্ত্রী পড়াশোনা করেন। কিছু লোক সেই অভ্যেসটা করলে ভাল হয়। সে ক্ষেত্রে গতকাল আমি যেটা (ভিপি মেননের জীবনী) প্রকাশ করেছি, সেটা পড়ে দেখতে পারেন।’’
আরও পড়ুন: ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী হচ্ছেন নারায়ণমূর্তির জামাই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনক
সেই টুইটেরও পাল্টা খোঁচা দিতে ছাড়েননি রামচন্দ্র গুহ। ‘‘স্যর, আপনি যেহেতু জেএনইউ-এর পিএইচডি, আপনি অবশ্যই আমার থেকে বেশি বই পড়েছেন। তার মধ্যে নিশ্চয়ই দেখেছেন, নেহরু-পটেলের যে সব চিঠি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে নেহরু তাঁর মন্ত্রিসভার ‘স্ট্রংগেস্ট ম্যান’ হিসেবে পটেলকে উল্লেখ করেছেন। ১ অগস্ট নেহরু যে চিঠিতে পটেলকে মন্ত্রিসভায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তাতে তিনি ওই ‘স্ট্রংগেস্ট ম্যান’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছিলেন। কেউ এস জয়শঙ্করকে সেটা দেখাবেন?’’, লিখেছেন ইতিহাসবিদ। সেই চিঠিটিও টুইটারে শেয়ার করেন রামচন্দ্র গুহ।
বিতর্কে যোগ দিয়ে কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরও রামচন্দ্র গুহকেই সমর্থন করেছেন। জয়শঙ্করের উদ্দেশে তিনি লিখেছেন, ‘‘ভিপি মেননের মতো স্বাধীনতার বীর, যিনি আমার রাজ্যেরই ছিলেন, তাঁর প্রতি আমরা সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা রয়েছে। তবে মানুষের স্মৃতিবিভ্রম হতে পারে।’’