আধাআধি মুখ্যমন্ত্রিত্ব চেয়ে বিজেপিকে চাপে ফেলল শিবসেনা, চাইল লিখিত প্রতিশ্রুতিও

রাজ্যের মোট ২৮৮ আসনের মধ্যে বিজেপির দখলে রয়েছে ১০৫টি, শিবসেনার দখলে ৫৬। সরকার গড়তে প্রয়োজন ১৪৫টি আসন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মুম্বই শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৯ ১৪:৪৯
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

কংগ্রেসের আশায় জল ঢেলে ত্রিশঙ্কু হরিয়ানায় বিজেপি নিজের ঘর গুছিয়ে নিয়েছে। কিন্তু ভোটের আগেই জোট বেঁধে যে রাজ্যে স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠা হাতের মুঠোয়, সেই মহারাষ্ট্রে, পদ্মশিবিরে ফের কাঁটা হয়ে ফুটছে শরিক শিবসেনা। বিধানসভা নির্বাচনের ফল বেরনোর দু’দিনের মাথাতেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদের আধাআধি ভাগ চেয়ে বিজেপিকে শর্ত দিয়ে দিল উদ্ধব ঠাকরের দল। আর তা না পেলে, বিজেপির বদলে অন্য কারও সঙ্গে হাত মেলানোর হুমকিও দিচ্ছে তারা।

Advertisement

রাজ্যের মোট ২৮৮ আসনের মধ্যে বিজেপির দখলে রয়েছে ১০৫টি, শিবসেনার ঝুলিতে ৫৬ আসন। মোট ১৬১। ম্যাজিক ফিগার ১৪৫ থেকে বেশ কয়েকটাই বেশি। কিন্তু গত বারের তুলনায় দুই শরিকেরই আসন সংখ্যা এ বার কমেছে। শিবসেনার কমেছে ৭, বিজেপির কমেছে ১৭। অন্য দিকে কংগ্রেসের জোট এ বার ১০০ ছাড়িয়েছে। এই সব অঙ্ক কষেই, ‘ঝোপ বুঝে কোপ’ মেরেছে শিবসেনা।

লোহা ‘গরম’। তাই এই সুযোগে বিজেপি নেতাদের দেওয়া ‘আশ্বাস’-এর কথা স্মরণ করিয়েই পদ্মশিবিরকে ‘ঘা’ দিতে চাইছে শিবসেনা। শুক্রবার উদ্ধব ঠাকরে বলেন, ‘‘যখন লোকসভা ভোট হয়, তখন আমরা ৫০-৫০ ফরমুলা ঠিক করি। মহারাষ্ট্র বিজেপির প্রধান চন্দ্রকান্ত পাতিল কিছু ইস্যু তুলে ধরেন ... একমাত্র আমরাই বেশি সহ্য করতে পারি। যদি প্রয়োজন হয় তা হলে অমিত শাহকেই এখানে আসতে হবে, তিনি আগে যা স্থির করেছিলেন তা বলতে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: কংগ্রেসের আশায় জল ঢেলে হরিয়ানায় ঘর বাঁচালেন শাহ

উদ্ধব ঠাকরের ওই মন্তব্যের রেশ ধরেই, শনিবার বৈঠকে বসেন শিবসেনার বিধায়করা। সেখানে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরেন বিধায়ক প্রতাপ সরনায়েক। সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিজেপিকে দেওয়া শর্তের কথা তুলে ধরেছেন তিনি। তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী পদের অর্ধেক ভাগ দিতে হবে শিবসেনাকে। প্রতাপ বলেন, ‘‘উদ্ধবজি বিজেপির উচ্চতম নেতৃত্বের থেকে লিখিত প্রতিশ্রুতি চান। তিনি অমিত শাহ হতে পারেন বা দেবেন্দ্র ফড়ণবীসও হতে পারেন। বিজেপিকে ৫০-৫০ ফরমুলায় বিশ্বাস রাখতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর পদ দু’দলের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করতে হবে।’’ অর্থাৎ, মোট পাঁচ বছরের শাসন কালে আড়াই বছর মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকতে চাইছে শিবসেনা। আর বাকি আড়াই বছর মুখ্যমন্ত্রিত্বের রাশ থাকবে বিজেপির দখলে। তবে শিবসেনার তরফে মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন তা এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে ঠিক হয়নি বলে জানিয়েছেন ঠানে লোকসভার অন্তর্গত ওভালা মাজিওয়াড়ার বিধায়ক প্রতাপ। তবে পাল্লা যে আদিত্য ঠাকরের দিকেই ঝুঁকে রয়েছে, তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। দক্ষিণ মুম্বইয়ের ওরলি থেকে নির্বাচনে লড়েছিলেন আদিত্য। ৬৬ হাজারেরও বেশি ভোটে জয়লাভ করেন তিনি।

মহারাষ্ট্রে এই দুই শরিকের টানাপড়েন অবশ্য নতুন নয়। গত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তর দর কষাকষি চলেছে, কখনও হাত ছাড়াছাড়ি হওয়ার পরিস্থিতি পর্যন্ত তৈরি হয়েছে।

কিন্তু এ বার বিজেপি শর্ত না মানলে কী পদক্ষেপ নেবে শিবসেনা? তার উত্তরে ভিন্ন সমীকরণের কথাও শুনিয়ে দিয়েছেন প্রতাপ সরনায়েক। পদ্মশিবির শর্ত না মানলে তাঁরা অন্য কারও হাত ধরতেও প্রস্তুত, এমন ইঙ্গিতও দিয়ে রাখলেন তিনি। বলেন, ‘‘বিজেপি যদি আমাদের দাবি না মানে, তা হলে আমাদের কাছে অন্য পথও খোলা রয়েছে। এই মুহূর্তে আমরা সেই অবস্থায় রয়েছি।’’ এই ‘অন্য পথ’ বলতে কী বোঝাতে চান, তা অবশ্য খোলসা করেননি তিনি। তবে এই মুহূর্তে মহারাষ্ট্র বিধানসভার যে অঙ্ক, তাতে বিজেপিকে বাদ দিয়েও সরকার তৈরি হওয়া সম্ভব। শরদ পওয়ারের এনসিপি (৫৪ আসন) ও কংগ্রেস (৪৪ আসন) মিলে মোট ৯৮টি আসন রয়েছে। এই জোটের অন্য তিন শরিক পেয়েছে চারটে আসন। তাতে শিবসেনার ৫৬টি আসন যোগ হলে তা অনায়াসেই ম্যাজিক ফিগার ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: হাউডি মোদী-র এক মাস! কী পেল ভারত

নির্বাচনী লড়াই শেষ করে উঠে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই নতুন সমস্যার সামনে দেবেন্দ্র ফড়ণবীসরা। জোট শরিক হয়েও সেনার ‘বিদ্রোহ’। শিবসেনার এই শর্ত নিয়ে কী বলছে বিজেপি? আগামী ৩০ অক্টোবর দলীয় বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছে পদ্মশিবির। সেনার এই ‘শর্ত’ যে আসলে ঘুরিয়ে তাদের চ্যালেঞ্জ জানানোর কৌশল তা বুঝেই পাল্টা চাপের আবহ তৈরি করতে চাইছে বিজেপিও। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, শনিবার দেবেন্দ্র ফড়ণবীস বলেন, ‘‘১৫ জন নির্দল বিধায়ক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং তারা আমাদের সঙ্গে আসতেও প্রস্তুত। অন্যরাও আসতে পারে, তবে এই ১৫ জন নিশ্চিত ভাবেই আমাদের সঙ্গে আসবেন। তাঁদের বেশিরভাগই বিজেপিশিবসেনার বিদ্রোহী বিধায়ক।’’

শিবসেনার এই অবস্থানের পরেও বিজেপির আরেকটি পক্ষ অবশ্য মনে করছে, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। মহারাষ্ট্রের শিক্ষা মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা আশিস শেলার বলেন, ‘‘বিজেপি ও শিবসেনা জোট বেঁধে নির্বাচনে লড়েছে ও জিতেছে। আমরা আবার সরকার গঠন করব। জোটে যা স্থির করা হয়েছিল তাই হবে।’’ শেলারের এই মন্তব্যই মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ভাগাভাগি হওয়ার জল্পনা নতুন করে উস্কে দিয়েছে। যদিও, বিজেপি ক্ষমতায় এলে মহারাষ্ট্রে দেবেন্দ্র ফড়ণবীসই যে মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন তা আগেই শুনিয়ে দিয়েছিলেন তা নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ।

বিজেপি এবং শিবসেনার মধ্যে টানাপড়েন নতুন করে ইন্ধন পেতেই তা আরও উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার। তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রিত্বের আধাআধি ভাগ চেয়ে কোনও ভুল করেনি শিবসেনা। তবে সেনাকে সমর্থনের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। একই কথা জানিয়েছে কংগ্রেসও। মহারাষ্ট্র কংগ্রেসের প্রধান বালাসাহেব থোরাট অবশ্য জানিয়েছেন, শিবসনেরা তরফে সরকার গঠনের প্রস্তাব এলে তা উচ্চ নেতৃত্ব খতিয়ে দেখবে।

আরও পড়ুন: তিন মাসে এক হাজার বই পড়েছি: রাজ্যপাল​

শরিক হলেও, শিবসেনার সঙ্গে বিজেপির সম্পর্কে যে গলায় গলায় তা মোটেই বলা যাবে না। বরং, সেই সম্পর্ক যে অম্লমধুর তারই নানা উদাহরণ উঠে এসেছে বারবার। সম্প্রতি শিবসেনার মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত যে টুইট করেন তা বিজেপি শিবিরে জ্বালা ধরিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। তাতে দেখা যায়, একটি বাঘ হাতে পদ্মফুল নিয়ে শুঁকছে। টুইটে সঞ্জয় রাউত লেখেন, ‘‌মহারাষ্ট্রে বিজেপি একা ক্ষমতায় আসতে পারবে না। শিবসেনা সরকারের একটা বড় অঙ্গ হয়ে থাকবে।’‌ সেই সঙ্গে, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আদিত্য ঠাকরের পক্ষেও সওয়াল করেন সঞ্জয়। উদ্ধব ঠাকরেদের নয়া শর্ত ভাবনায় রেখে দিল পদ্মশিবিরকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement