নরেন্দ্র মোদী সরকারের উদ্দেশে তোপ দাগল কুড়িটি বিরোধী দল। প্রতীকী ছবি।
আগামী লোকসভা ভোটের আগে সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট অধিবেশনের অন্তিম দিনে আজ ‘তেরঙ্গা যাত্রা’ করে নরেন্দ্র মোদী সরকারের উদ্দেশে তোপ দাগল কুড়িটি বিরোধী দল। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, ডিএমকে, বিআরএস, আরজেডি, আপ, এনসিপি, জেডিইউ, এসপি-সহ বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতাদের আজ দিল্লিতে পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটতে দেখা গেল। তাঁরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেন দু’দফায়। প্রথমটি বিজয় চকে দাঁড়িয়ে, দ্বিতীয় বার কনস্টিটিউশন ক্লাবে। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, বিরোধী শিবির থেকে এত বেশি সংখ্যক দলকে এক ছাতার তলায় আসতে সাম্প্রতিক অতীতে দেখা যায়নি।
রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের কথায়, “মোদী সরকার গণতন্ত্র নিয়ে অনেক কথা বলে, কিন্তু যা বলে, সে ভাবে নিজেরা চলে না। পঞ্চাশ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট মাত্র বারো মিনিটেই পাশ করে দিল। মোদী সরকার প্রায়শই বিরোধীদের দোষারোপ করে। কিন্তু শাসক দলই সংসদীয় অধিবেশন ভন্ডুল করে দিচ্ছে। আলোচনার জন্য একের পর এক নোটিস আমরা দিলাম, বলতেই দেওয়া হল না। বাহান্ন বছরের রাজনৈতিক জীবনে এমনটা কখনও দেখিনি।” তাঁর পাশে বসে আপ-এর সঞ্জয় সিংহের বক্তব্য, “এই সরকার আসলে আদানির চাকর। মোদীকে নিয়ে বললে তা-ও সহ্য করে নেবে, কিন্তু আদানিকে নিয়ে বললে সংসদ চলতে দেবে না। তার কারণ আদানিই মালিক।” ডিএমকে নেতা টি আর বালুর কথায়, “শাসক দল সংসদ অচল করছে, এটা আগে কখনও হয়নি। রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রার পরে বিজেপি প্রবল শঙ্কিত। আমরা সমস্ত বিরোধী দল এখন একজোট।”
আজ সকালে সংসদ ভবন থেকে হেঁটে বিরোধী নেতারা পৌঁছন বিজয় চকে। মল্লিকার্জুন বলেন, “আমরা জানতে চাই, কী ভাবে মাত্র আড়াই বছরে আদানির সম্পদ ১২ লক্ষ কোটি টাকা হয়ে গেল। কেন সরকার এত সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে শুধুমাত্র এক জন পুঁজিপতিকে? আকাশ-পাতাল সর্বত্র সব প্রকল্প কেন আদানিকেই দেওয়া হবে? (প্রধানমন্ত্রীর) সব বিদেশ ভ্রমণে আদানি কেন যান? বিদেশি নেতা, বাণিজ্য কর্তাদের থেকে কেন আদানিকেই বরাত পাইয়ে দেওয়া হয়েছে? আমরা সব সময়ে এই ধরনের প্রশ্ন তুললেও সংসদে কথা বলতে দেওয়া হয়নি।’’ কংগ্রেস সভাপতির অভিযোগ, গণতন্ত্রের পক্ষে এমন কালো দিন অভূতপূর্ব। কিছু গোলমাল আছে বলেই জেপিসির তদন্তে এত আপত্তি কেন্দ্রের! এর পরেই প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে কটাক্ষ ছুড়ে মল্লিকার্জুন বলেন, ‘‘পুরনো ট্রেনে নতুন ইঞ্জিন লাগানো ছাড়া ওঁদের (মোদী সরকার) আর কোনও কাজ নেই। নয়া ইঞ্জিন লাগিয়ে লম্বা একটা বক্তৃতা, ব্যস, কাজ শেষ। ট্রেন উদ্বোধনে আপনার যাওয়ার কী প্রয়োজন? এই কাজটি তো স্থানীয় সাংসদদের দিয়ে করানো উচিত ছিল।’’
আজ এই বিরোধী জোটে উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিল তৃণমূলের। রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ হওয়ার আগে পর্যন্ত কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও মঞ্চে বা মিছিলে তৃণমূলকে দেখা যায়নি। মল্লিকার্জুনের ডাকা সকালের সমন্বয় বৈঠকেও এত দিন প্রতিনিধি পাঠায়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। তবে গত এক সপ্তাহে চিত্রটা বদলেছে। বিরোধী দলের বৈঠকে ও মিছিলে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার এবং লোকসভার সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আজ অবশ্য আগাগোড়া প্রসূন একাই ছিলেন। পরে তিনি বলেন, “দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ, গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়ানোর। কোনও দল বা সরকার গণতন্ত্রকে আক্রমণ করলে আমরা তার প্রতিবাদ করব।” সূত্রের খবর, প্রসূনকে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ জানিয়েছেন, মমতা প্রতিনিধি পাঠানোয় তাঁরা খুবই খুশি। প্রসূনের মাধ্যমে তৃণমূল নেত্রীর লড়াইকেও কুর্নিশ জানিয়েছেন জয়রাম।