প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। ফাইল চিত্র।
যদি চিনকে এতই ভয়, তবে সড়ক উদ্বোধন করে তাদের ‘কড়া বার্তা’ দেওয়া হল কেন? আর যদি ভারত প্রতিবেশীর হুমকিতে পাত্তা না দেয়, তা হলে কেন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর অনুষ্ঠান থেকে মুছে দেওয়া হল অরুণাচলের নাম? কেন অনুষ্ঠানস্থল নিয়ে মিথ্যে বিবৃতি দিল সরকারি সংবাদ সংস্থাও? তবে কি, ইচ্ছাকৃত ভাবেই অরুণাচলের শহরকে অসমের শহর হিসেবে তুলে ধরতে চায় কেন্দ্র? এমন বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শুরু হয়েছে অরুণাচলে। চিনকে কড়া বার্তা দিতে গিয়ে রাজনাথ সিংহ নতুন কার্যত করে অসম-অরুণাচল সীমানা সমস্যাই উস্কে দিলেন।
ঘটনার সূত্রপাত ১৭ জুন। অরুণাচলের পাপুম পারে জেলার কিমিনে হাজির হয়ে কিমিন-পোতিন রোড-সহ ১২টি সড়কের উদ্বোধন করেছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। গালোয়ান প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেছিলেন, ‘‘ভারত শান্তির পুজারি হলেও প্রতিবেশী দেশের আগ্রাসনের মুখের মতো জবাব দেবে।’’
কিন্তু রাজনাথ সিংহ তাঁর টুইটে কিমিন প্রসঙ্গে অরুণাচলের নাম সযত্নে এড়ান। সরকারি সংবাদ সংস্থা আরও একধাপ এগিয়ে লেখে, অনুষ্ঠান হয়েছে অসমের লখিমপুরে। ফলে অনেক সংবাদমাধ্যমই ভেবে নেয় কিমিন অসমের কোনও এলাকা। অরুণাচলের নামোল্লেখ না করা মেনে নিলেও অসম-অরুণাচল সীমানা বিবাদের মধ্যেই কিমিনকে অসমের অংশ বলে প্রচার করায় আগুনে ঘি পড়ে।
বিভিন্ন সংগঠন অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা বিআরও-র দফতর কিমিন থেকে অবিলম্বে সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে। কিমিন ওয়ালফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, অনুষ্ঠানের আগে থেকেই রহস্যজনক ভাবে বিআরও আশপাশের সব বোর্ড, ফলকে কিমিন ও অরুণাচলের নাম ঢেকে দিয়েছিল। নিশি ও আপাতানি ছাত্র সংস্থা ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে। কিমিন গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য বামাং টাগাক জানান, রাজনাথকে স্মারকলিপি পাঠিয়ে ভ্রম সংশোধনের আর্জি জানানো হয়েছে। বিআরও অসম্পূর্ণ রাস্তার উদ্বোধন করলেও অনেক সেতু ও কালভার্ট তৈরি বাকি। তাও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।
বিজেপির প্রদেশ সভাপতি তথা সাংসদ তাপির গাও ঘটনায় ক্ষিপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘বিআরও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বিপথে চালিত করেছে। কিমিন অরুণাচলে জেনেও ইচ্ছাকৃত ভাবে তাকে অসমের অংশ বলে দেখানো হয়েছে। পরিকল্পনা করে আশপাশের সর্বত্র কিমিন ও অরুণাচল লেখা মুছে ফেলা হয়েছে।’’ অনুষ্ঠানে অরুণাচল ও অসম দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই ছিলেন। ছিলেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী তথা রাজ্যের সাংসদ কিরেণ রিজিজু। এত বড় অনুষ্ঠানের অনুষ্ঠান স্থল সম্পর্কে ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল তথ্য যারা দিয়েছে তাদের গ্রেফতার করা উচিত। অরুণাচলবাসীর আত্মসম্মানে আঘাত দেওয়ায় বিআরও-র বিরুদ্ধে এফআইআর করুক রাজ্য সরকার।
অবশ্য বিআরও সূত্রে বলা হচ্ছে, যেহেতু সড়কটি চিন সীমান্তগামী ও অরুণাচলে ভারতের মন্ত্রীদের সফর হলেই বেজিংয়ের তরফে প্রতিবাদ জানানো হয় তাই ইচ্ছে করেই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি না করে ও সংবেদনশীলতার দিকে নজর রেখে অরুণাচলের নাম ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। উল্লেখ্য, চিনা সেনা প্রায়ই অরুণাচলের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকাতেও ঢুকে পড়ে। ভারতের মাটি দখল করে তারা রাস্তা ও অন্যান্য নির্মাণকাজও চালিয়েছে।
গাও বিআরও-র যুক্তি উড়িয়ে বলেন, ‘‘রাজনাথ সিংহ চিন কী বলল তার পরোয়া করেন না। সকলেই জানে অনুষ্ঠান কোথায় হয়েছিল। তা লুকোনোর যুক্তি ছেঁদো।’’