Suicide

আত্মঘাতী বেকার শিক্ষকের চিতায় শুয়ে পড়লেন স্ত্রী

ত্রিপুরায় চাকরি খোয়ানো ১০,৩২৩ জন শিক্ষক চাকরির দাবিতে ৭ ডিসেম্বর থেকে লাগাতার গনবস্থান করছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আগরতলা শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২১ ০২:৫৮
Share:

শেফালী ত্রিপুরাকে চিতা থেকে তুলে আনছেন এক আত্মীয়া। নিজস্ব চিত্র

সংসারের অভাব অনটনের কারণে দিশাহারা হয়ে দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার চাকরিচ্যুত শিক্ষক উত্তম ত্রিপুরা গত কাল রাতে আত্মহত্যা করেন। আজ তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করার আগেই চিতার উপরে শুয়ে পড়েন তাঁর স্ত্রী শেফালী ত্রিপুরা। চিৎকার করে বলতে থাকেন, “আমি এর বিচার চাই। আমাকেও স্বামীর সঙ্গে চিতায় পুড়িয়ে দাও।” আত্মীয়-স্বজনরা টেনে তাঁকে চিতা টেনে তুলে পারছিলেন না। শেফালী কাতর ভাবে আবেদন করতে থাকেন, স্বামীর আগে যেন তাঁর গায়ে আগুন দেওয়া হয়।

Advertisement

ত্রিপুরায় চাকরি খোয়ানো ১০,৩২৩ জন শিক্ষক চাকরির দাবিতে ৭ ডিসেম্বর থেকে লাগাতার গনবস্থান করছেন। শীতের মধ্যে তাঁরা গত ২৭ দিন ধরে আগরতলার প্যারাডাইস চৌমুহনীতে গণবস্থান করছেন। তাঁদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকে অবস্থানস্থলে এসে চাকরির লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। এখনও পর্যন্ত সরকারের কোন প্রতিনিধি তাঁদের সঙ্গে দেখা করে কোনও কথা বলেননি।

ত্রিপুরায় বাম আমলে এই শিক্ষকদের নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু আইনি জটিলতায় চাকরি হারান তাঁরা। তবে স্কুল পরিচালনার জন্য সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের অ্যাড হক ভিত্তিতে নিয়োগ করার অনুমতি দেয়। ক্ষমতায় আসার আগে বিজেপি এই শিক্ষকদের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু তার পরে তারাও কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ চাকরি খোয়ানো শিক্ষকদের।

Advertisement

এই ১০,৩২৩ জন শিক্ষকের এক জন ছিলেন উত্তম ত্রিপুরা (৩২)। দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার তৃষ্ণা গাঁওপঞ্চায়েত এলাকার কমলাকান্ত পাড়ায় এই শিক্ষক তার স্ত্রী, দুই সন্তান এবং মা-বাবা-বোনকে নিয়ে থাকতেন। চাকরি চলে যাওয়ার পর থেকেই অনটনে দিন কাটাতে হচ্ছে। শেফালীর বিলাপ, সংসারের এত জনের দ্বায়িত্ব, তার উপরে ব্যাঙ্কের ঋণ, সংসারের খরচ সামলাতে বাইরেও এ-দিক ও-দিক ধারদেনা। প্রায়ই পাওনাদারের তাগাদা এবং ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ মিটিয়ে দেওয়ার জন্য নোটিস। আমার স্বামী দিশাহারা হয়ে পরেছিল।

পুরাতন রাজবাড়ী থানার আধিকারিক অর্জন চাকমা জানাচ্ছেন, এত দিনেও চাকরি ফিরে পাওয়ার কোনও আশা-ভরসা না পেয়ে ইদানীং হতাশায় ভুগছিলেন। গত কাল রাতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন উত্তম। রাতেই পরিবারের লোকজনেরা তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টায় তড়িঘড়ি নামিয়ে নিয়েছিল তপনকে। আজ সকালে পুলিশ গিয়ে দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়। দুপুরে শেষকৃত্য হয়।

চিতা সাজানো হয়েছিল গ্রামেই। তার উপরে শুয়ে শেফালী বলতে থাকেন, “যারা আমার স্বামীর মৃত্যুর জন্য, দায়ী তাদের বিচার করতে হবে। আমাকেও স্বামীর সঙ্গে একই চিতায় পুড়িয়ে ফেল তোমরা।” স্বামীহারার কান্নায় এলাকার মানুষ, আত্মীয়-স্বজনেরা কথাহারিয়ে ফেলেন সান্ত্বনা দেওয়ার। অনেক কষ্টে শেফালীকে চিতা টেনে তুলে আনা হয়।

উত্তম যখন পুড়ছেন, উপস্থিত মানুষদের একটাই প্রশ্ন, কাদের ভুলে এই ঘটনা। আরও কত চাকরি হারানো শিক্ষককে আত্মহত্যা করতে হয়েছে! শেফালীর হাহাকার কি পৌঁছবে সরকারের কানে, এই প্রশ্নই ভাবাচ্ছে রাজ্যবাসীকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement