ত্রিপুরা টার্গেট তৃণমূলের। মোকাবিলায় জোটবদ্ধ বাংলা ও ত্রিপুরা বিজেপি।
বাংলার শাসকের নজরে ত্রিপুরা। গত কয়েকদিনে আগরতলা হয়ে উঠেছে বঙ্গ রাজনীতির অঙ্গন। প্রথমে প্রশান্ত কিশোরের টিম এবং পরে একের পর এক তৃণমূল নেতার ত্রিপুরা সফর। যেটাআরও চলবে বলেই জানিয়েছে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে দুই রাজ্যের বিজেপি নেতারা পারস্পরিক আলোচনার মধ্য দিয়ে চলছেন। তথ্যের আদানপ্রদানও চলছে বলে গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর। বঙ্গ বিজেপি-র এক নেতা বলেন, ‘‘দুই রাজ্যে দলের প্রবক্তরা (মুখপাত্র) যাতে এক সুরে কথা বলেন, সে কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। ত্রিপুরায় কখন কী হচ্ছে তা যেমন রাজ্য নেতৃত্ব নজরে রাখছেন তেমনই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দলের কী বক্তব্য হবে তা-ও আলোচনার মধ্য দিয়ে ঠিক করা হচ্ছে।’’
বৃহস্পতিবারই আগাম জামিন নিয়েছেন আগরতলায় হোটেলে আটক তৃণমূলের ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাক-এর ২৩ জন কর্মী। তা নিয়ে এখনও রাজনৈতিক উত্তাপ বহাল রয়েছে। আইপ্যাক-কর্মীদের আটক করার পরেই বুধবার আগরতলায় গিয়েছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী ব্রাত্য বসু আরমলয় ঘটক। সঙ্গেগিয়েছেন তৃণমূলের শ্রমিক নেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার গিয়েছেন দলের দুই সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং কাকলি ঘোষ দস্তিদার। শুক্রবার দুপুরে পৌঁছনোর কথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এর পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ত্রিপুরায় যেতে পারেন বলে বুধবারই জানিয়েছেন ব্রাত্য। বিপ্লব দেবেরসরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা করে ব্রাত্য বলেন, ‘‘প্রয়োজনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আসবেন।”এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোমরবেঁধে তৈরি ত্রিপুরা বিজেপি। বাংলার শাসকদলের তৎপরতা মোকাবিলায় বঙ্গ বিজেপি-র সঙ্গেও প্রতি নিয়ত যোগাযোগ রাখছেন ত্রিপুরা নেতৃত্ব। ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে বাংলায় বিজেপি যা অভিযোগ তুলেছে তার পরিসংখ্যান ত্রিপুরা নেতৃত্বকে পাঠানো হয়েছে বলেও খবর।
তবে এর মধ্যে নতুন কিছু দেখছেন না ত্রিপুরা বিজেপি-র প্রধান মুখপাত্র সুব্রত চক্রবর্তী। তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘বিজেপি একটা সর্বভারতীয় দল। সব রাজ্যের সংগঠন একসঙ্গে কাজ করে। তথ্যের আদানপ্রদান হয়। গোটা দেশেই দল এক সুরে কথা বলে। সুতরাং, এ ক্ষেত্রেও আলোচনা হওয়াটা স্বাভাবিক।’’ তৃণমূলের ত্রিপুরা-তৎপরতার মোকাবিলা করতে কি বাংলার বিজেপি-র নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে? এই প্রশ্নের জবাবে সুব্রত বলেন, ‘‘আলাদা করে কিছু নয়। তবে বাংলার রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ থেকে অন্য নেতারা কিংবা আইটি সেলের সঙ্গে তথ্যের আদানপ্রদান হয়েছে। তবে সেটা তৃণমূলকে মোকাবিলার জন্য,এমন বলা ঠিক হবে না। আর আমরা কোনও দলকে মোকাবিলা করার কথা ভাবি না। ওটা তৃণমূলের সংস্কৃতি।’’
বাংলায় বড় মাপের জয় পাওয়ার পরে রাজ্য রাজ্যে তৃণমূল শক্তি বাড়াতে চায় বলে আগেই ঘোষণা করেছিল। সোমবার থেকে দিল্লিতে রয়েছেন মমতা। বিভিন্ন রাজ্যে শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি কংগ্রেসেরশীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন তিনি। তার মধ্যেই ত্রিপুরায় তৈরি হয়েছে বিজেপি-তৃণমূল সংঘাতের আবহ। ব্রাত্য বসু আগরতলায় সাংবাদিক বৈঠক করে বলেছেন, ‘‘ত্রিপুরার মানুষ আগে বাম দেখেছেন। এখন রাম দেখছেন। এর পর কাম অর্থাৎ কাজ দেখতে চাইছেন। তৃণমূলকে ভয় পেতে শুরু করেছে বিপ্লব দেবের সরকার।’’
প্রথমে আইপ্যাকের সদস্যেরা এবং তার পরে তৃণমূল নেতাদের ত্রিপুরা সফর থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, উত্তর-পূর্বের এই বাঙালি প্রভাবিত রাজ্যে সাংগঠনিক জমি শক্ত করতে চাইছে বাংলার শাসকদল। তবে বিজেপি নেতাদের দাবি, তৃণমূলের সেই চেষ্টা সফল হবে না। বুধবার ত্রিপুরা বিজেপি-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কিশোর বর্মণ আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমরা কাউকে বহিরাগত মনে করি না। সকলে স্বাগত। কিন্তু বাংলায় দুর্নীতি আর সন্ত্রাস চালানো তৃণমূলের পক্ষে ত্রিপুরায় জমি পাওয়া সহজ হবে না।’’ প্রসঙ্গত, অভিষেক ত্রিপুরায় গেলে তাঁকে বিজেপি-র তরফে বিক্ষোভ দেখানো হতে পারে বলেও গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর। যদিও কিশোর এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘দলের এমন কোনও পরিকল্পনা নেই। আমরা সকলকেই স্বাগত জানাতে তৈরি। তবে কেউ জনরোষের মুখে পড়লে তার দায় তো আর বিজেপি নিতে পারে না।’’