ত্রিপুরায় হিংসা নিয়ে বিরোধীদের প্রতিবাদ। ছবি—পিটিআই।
এখন পুরভোট শেষ হয়নি আগরতলায়। তার আগেই আগরতলার সব ক’টি ওয়ার্ডে পুনর্নির্বাচনের দাবি তুলল ত্রিপুরা সিপিএম। সিপিএমের অভিযোগ, লাগামছাড়া হিংসা হয়েছে ত্রিপুরার পুরভোটে। মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি বিজেপি, ইচ্ছামতো রিগিং করেছে।
ত্রিপুরার ইন্দ্রনগরে সিপিএমের ক্যাম্প অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। বিজেপি-র বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেছে বিজেপি। ঘটনা নিয়ে ইন্দ্রনগরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
ত্রিপুরার পুরনির্বাচনে দুপুর ১টা পর্যন্ত ভোট পড়ল ৫৭ শতাংশ। নির্বাচন কমিশন এ তথ্য জানিয়েছেন। যদিও তৃণমূল এবং সিপিএম-সহ সে রাজ্যের বিরোধীরা ভোট লুঠের অভিযোগ এনেছে বিজেপি-র বিরুদ্ধে।
ভোট চলার সময়ই ত্রিপুরায় আরও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। যত দ্রুত সম্ভব বাহিনী পাঠানোর জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে নির্দেশ দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত।
ভোটারদেরও মারধর করে ভোট দিতে দিচ্ছে না বিজেপি। এই অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। ত্রিপুরা তৃণমূলের টুইটার হ্যান্ডল থেকে বেশ কয়েকটি ভিডিয়ো শেয়ার করা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, মাথা ফেটেছে এক ভোটারের। অন্য একটি ভিডিয়োয় এক বৃদ্ধা বলছেন কী ভাবে তাঁকে এবং তাঁর স্বামীকে বিজেপি-র গুণ্ডারা ভোট দিতে বাধা দিয়েছে। এবং তাঁর স্বামীকে ঠেলে ফেলে দিয়েছে। যদিও হিংসা নিয়ে নির্বাচন কমিশন নীরব বলে অভিযোগ তৃণমূলের।
আগরতলা পুরনির্বাচন নিয়ে সরব হলেন ত্রিপুরা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘‘নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। দিনদুপুরে গণতন্ত্রের অমাবস্যায় নামিয়ে এনেছে বিজেপি। এখানে গণতন্ত্র নেই, সংবিধান অচল। মাননীয় হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পরও টনক নড়েনি সরকারের।’’
ফের বেসুরো ত্রিপুরার বিজেপি বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ। প্রায়শই তার মুখে শোনা যায় ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের সমালোচনা। আজও তার অন্যথা হয়নি। পুরভোটে বিজেপি গুণ্ডাগিরি করছে বলে অভিযোগ করেছে সে রাজ্যের বিরোধী সিপিএম এবং তৃণমূল। সেই সুরে কার্যত সিলমোহর দিলেন বিজেপি-র এই ‘বিদ্রোহী’ বিধায়ক। সুদীপ বিপ্লবের উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘ভয় দেখিয়ে ভোট না করলেও পারতেন মুখ্যমন্ত্রী। নেতৃত্বের শিশুসুলভ আচরণের জন্য দলের বদনাম হচ্ছে। মানুষের অভিশাপ কুড়োতে হচ্ছে।’’ আগরতলার ৫১ নম্বর ওয়ার্ডে আহত তৃণমূলপ্রার্থীর পাশেও দাঁড়িয়েছেন তিনি।
পোলিং এজেন্টদের মেরে ভোটকেন্দ্র থেকে বার করে দেওয়ার অভিযোগ করলেন তৃণমূলের প্রার্থী। আগরতলার ১০ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন পান্না দেব। তাঁর অভিযোগ, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ৭ নম্বর বুথ থেকে তাঁর পোলিং এজেন্টদের মেরে বার করে দিয়েছে বিজেপি-র গুণ্ডারা। ৮ নম্বর ওয়ার্ডেও পোলিং এজেন্টকে মেরে বার করে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। যদিও এই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি।
আগরতলার ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিজেপি-র বিরুদ্ধে। ত্রিপুরা তৃণমূলের টুইটার হ্যান্ডলে শেয়ার করা হয়েছে সেই ছবি। সেখানে দেখা যাচ্ছে, আঘাতের জেরে তৃণমূলপ্রার্থীর এক চোখ ফুলে গিয়েছে।
আগরতলার একটি ওয়ার্ডের বুথে রিগিং এবং ছাপ্পাভোটের অভিযোগ তুলল তৃণমূল। ত্রিপুরা তৃণমূলের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডল থেকে শেয়ার করা হয়েছে একটি ভিডিয়ো। সেখানে দাবি করা হয়েছে, ভিডিয়োটি আগরতলার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথের। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, এক বয়স্ক মহিলা ভোট দেওয়ার জন্য ইভিএম মেশিনের কাছে গেলেন। কিন্তু মুখে মাস্ক, কালো জামা পরা এক যুবক সে দিকে এগিয়ে গিয়ে উল্টো দিক থেকে হাত বাড়িয়ে ইভিএম মেশিনের বোতাম টিপলেন। ওই বৃদ্ধা কিছু না বলেই বেরিয়ে চলে গেলেন। এর পর আর ব্যক্তি ভোট দেওয়ার সময়ও এই যুবক এসেছিলেন ইভিএমের কাছে। তখন ওই ব্যক্তিকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আপনি দাঁড়িয়ে থাকলে আমি ভোট দেব কী করে।’’ ‘সিপিএম ত্রিপুরা’ টুইটার হ্যান্ডল থেকেও ভিডিয়োটি শেয়ার করে নিন্দা করা হয়েছে।
পুরভোটের আবহে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ত্রিপুরায় অতিরিক্ত দুই কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
ত্রিপুরার পুরভোটের দিন সকালে টুইট করলেন তৃণমূলের নেতা ফিরহাদ হাকিম। বিপ্লব দেবের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে তিনি লিখেছেন, ‘বিপ্লব দেব এবং তাঁর গুণ্ডাবাহিনী ত্রিপুরার মানুষকে অত্যআচার করার জন্য সব কিছু করছে। আমরা এর বিরুদ্ধে লড়ব এবং যত দিন ত্রিপুরা সুশাসন পাচ্ছে তত দিন কাজ করে যাব।’
৪ নম্বর ওয়ার্ডের পাশাপাশি আগরতলার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বুথের সামনে বিজেপি-র বিরুদ্ধে অবৈধ জমায়েতের অভিযোগ উঠেছিল। সেই জমায়েত হঠিয়ে দেন এসডিপিও-র নেতৃত্বাধীন পুলিশবাহিনী।
আগরতলার বিভিন্ন ওয়ার্ডে বুথের বাইরে অবৈধ জমায়েতের অভিযোগ তুলল তৃণমূল। বিজেপি-র বিরুদ্ধেই অভিযোগ তাদের। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাইরে অবৈধ জমায়েতের অভিযোগ তুলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।
আগরতলায় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী শ্যামল পাল অভিযোগ করেছেন, বুধবার রাতে তাঁর বাড়িতে শাসিয়েছে বিজেপি-র বাইকবাহিনী। তিনি বলেছেন, ‘‘এক সঙ্গে অনেক বাইক এসে ঘুরতে থাকে। বাড়িতেও ধাক্কা মারে। বলছিল, ভোটে লড়ে লাভ নেই।’’ বাড়ির সামনে দোকানে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরায় এই দৃশ্যও ধরা পড়েছে।
আগরতলার একটি বুথে সকালে চলছিল মক পোলিং। সে সময়ই পোলিং এজেন্টদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিজেপি-র বিরুদ্ধে। আঘাতে এক পোলিং এজেন্টের মাথাও ফেটে গিয়েছে। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যদিও তৃণমূলের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি।
বিলোনিয়ায় তাদের প্রার্থীর বাড়িতে হামলার অভিযোগ করেছে সিপিএম। অভিযোগ সেই শাসক বিজেপি-র বিরুদ্ধেই।
ত্রিপুরার আমবাসায় তৃণমূল প্রার্থীর বাড়িতে হামলার অভিযোগ। ১২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থীর বাড়িতে বিজেপি-র বাইক বাহিনী এসে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল।
আগরতলা পুরসভার ৫১টি ওয়ার্ডের সব ক’টিতেই বিজেপি এবং তৃণমূল প্রার্থী দিয়েছে। কংগ্রেস লড়ছে ৩৩টিতে। সিপিএম ৪০ এবং সহযোগী সিপিআই ৩, আরএসপি ২, ফরওয়ার্ড ব্লক ১টি ওয়ার্ডে লড়ছে।
শাসকদল বিজেপি ৩৩৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১২টিতে জিতে গিয়েছে আগেই। ত্রিপুরায় পুর অঞ্চলগুলির বাকি ২২২টি আসনে ভোট হচ্ছে বৃহস্পতিবার। ২২২টি আসনে লড়াইয়ে আছেন মোট ৭৮৫ জন প্রার্থী। এর মধ্যে বিজেপি-র ২২২, সিপিএমের ১৯৭, তৃণমূলের ১২০ এবং কংগ্রেসের ৯২ জন রয়েছেন।