বাইরে বিরোধীদের হইচই। ভিতরে ভিতরে তখন ঘর গুছিয়ে রাখছে শাসক দল।
নির্দেশিকা বেঁধে দিয়ে জেলা নেতৃত্বকে পাঠানো হয়েছিল আগেই। সেই অনুযায়ী প্রাথমিক তালিকা রাজ্য নেতৃত্বের হাতে আসার পরে ঝাড়াই-বাছাইয়ের কাজও শেষ। একেবারে শেষ মুহূর্তে কোনও প্রয়োজন হলে রদবদলের দরজা খোলা রেখেই বিধানসভা ভোটের প্রার্থী তালিকা তৈরি করে ফেলেছে ত্রিপুরা সিপিএম। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘আমাদের তালিকা তৈরি। নির্বাচন কমিশন ভোটের দিন ঘোষণা করলে আমরাও তালিকা ঘোষণা করে দেব।’’
ছোট্ট এই রাজ্যে সিপিএম ক্ষমতায় রয়েছে টানা ২৫ বছর। তবু এ বারের বিধানসভা ভোটকে আলাদা গুরুত্বই দিচ্ছে তারা। প্রথম কারণ, বাংলায় আবার কবে বামেরা ঘুরে দাঁড়াবে, কোনও ঠিক নেই! গোটা দেশে দু’টি মাত্র বাম-শাসিত রাজ্যের মধ্যেও একটি হাতছাড়া হলে জাতীয় রাজনীতিতে আরও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়তে হবে বামেদের। আর দ্বিতীয়ত, অন্যান্য বারের তুলনায় এ বার ত্রিপুরায় বিরোধী ভোট ভাগাভাগির সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত ভাবে কম। কংগ্রেস আর তৃণমূল দুর্বল হয়ে যাওয়ায় বিজেপি-ই বাম-বিরোধী ভোট এক জায়গায় আনতে সচেষ্ট। যার ইঙ্গিত মিলেছে উপনির্বাচনে। এমন গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যেতে চাইছে না সিপিএম। নির্বাচনের জন্যই পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে দলের রাজ্য সম্মেলন।
দলীয় সূত্রের ইঙ্গিত, গুরুতর কোনও অভিযোগে নাম জড়ানো, এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা কমে যাওয়া এবং অসুস্থতা বা বয়সজনিত কারণ— সাধারণ ভাবে এই তিন মাপকাঠিতে ফেলে প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে পুরনো কিছু নাম। তবে ঢালাও ছাঁটাই হচ্ছে না। দলের এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, কিছু কেন্দ্রে বদল আনতে হবেই। কিন্তু বিস্তর বদল এনে চমকের রাস্তায় যেতে চাইছেন না তাঁরা।
ভোট-প্রস্তুতির দৌড়ের শেষ ল্যাপে সংগঠন এবং সরকারকে এখন পুরো দমে কাজে লাগাচ্ছে সিপিএম। যুব, শ্রমিক, মহিলা, আদিবাসী— সব গণসংগঠনকে সিপিএম তার নিজস্ব কায়দায় রাস্তায় রেখেছে। পাশাপাশিই, নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর হওয়ার আগে সরকারি কর্মচারী-সহ নানা অংশের মানুষের মন পেতে একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছে মন্ত্রিসভা। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী ভানুলাল সাহা যেমন জানিয়েছেন, সরকারি চাকরিতে থাকা মহিলাদের দুই সন্তান থাকলে তাদের দেখাশোনা করার জন্য তাঁরা একটানা বা দফায় দফায় দু’বছর পর্যন্ত সবেতন ছুটি পাবেন। পূর্ত দফতর আগরতলা শহরে উড়ালপুল নির্মাণে গতি বাড়িয়েছে।
যুব, শ্রমিক ও মহিলা সংগঠনের আয়োজনে বড় বড় জমায়েত ইতিমধ্যেই সারা। এ বার ৩১ ডিসেম্বর আস্তাবল ময়দানে বামফ্রন্টের সমাবেশ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ভোটের দামামা বাজানো হবে। সেখানে থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকেও।
তবে দামামো বাজানোর আগে ছোট একটা বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে দলের অন্দরে। সিপিএমের প্রচার শুরু হয়েছে অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার গড়ার ডাক দিয়ে। যদিও বিগত ৭টি বামফ্রন্ট সরকার পরপর আসেনি। প্রথম দু’বারের পর কংগ্রেসের পাঁচ বছর, ফের বামেদের পাঁচ বারে ২৫ বছর। মাঝখানে এই ছেদের কথা মাথায় রেখেই মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের মুখে কোথাও শোনা যাচ্ছে না ‘অষ্টম’ সরকারের আহ্বান!