— ফাইল চিত্র।
মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল যারা, তাদের দিকেই অভিমুখ রেখে নতুন করে লড়়াই শুরু করতে চাইছে সিপিএম।
ত্রিপুরার জনজাতি এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে এবং স্বশাসিত পরিষদ (এডিসি) গড়ে তুলে গড়় তৈরি করেছিল সিপিএম। কিন্তু গত বিধানসভা নির্বাচনে সেই জনজাতি এলাকায় জনসমর্থনে ধস তাদের ভিত নাড়়িয়ে দিয়েছিল। ক্ষমতা হারানোর পরে প্রথম রাজ্য সম্মেলনে উঠে এল ওই জনজাতি এলাকাতেই জমি পুনরুদ্ধারের জন্য রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সক্রিয়তা বাড়়ানোর কথা। দলের পলিটব্যুরো সদস্য প্রকাশ ও বৃন্দা কারাট এবং বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার— সম্মেলনে সকলের বার্তার মূল সুর একই।
কঠিন পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়়ানোর লড়়াইয়ে ত্রিপুরায় বদল আনা হল রাজ্য সম্পাদক পদেও। বিজন ধরের জায়গায় ২২তম রাজ্য সম্মেলন থেকে নতুন রাজ্য সম্পাদক হলেন গৌতম দাশ। দলের ৭৫ জনের নতুন রাজ্য কমিটিতে নতুন মুখ ১৬। আর নবগঠিত রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে চার জন আমন্ত্রিত নেতা এ বার পূর্ণাঙ্গ সদস্য হওয়ার পাশাপাশিই একেবারে নতুন অন্তর্ভুক্তি এডিসি-র মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য তথা জনজাতি নেতা রাধাচরণ দেববর্মা।
ত্রিপুরায় সিপিএম-এর নয়া রাজ্য সম্পাদক গৌতম দাশ।
জনজাতি এলাকার জন্য নতুন রাজ্য সম্পাদকের পরিকল্পনা কী? গৌতমবাবু আজ বলেছেন, ‘‘শুধু রাজ্য সম্পাদকের বিষয় নয় এটা। বিধানসভা নির্বাচনে কোথায় কোথায় ক্ষয় হয়েছে, দলগত ভাবেই আমরা চিহ্নিত করেছি। জনজাতি, ছাত্র ও যুবদের মধ্যে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। সেই বিভ্রান্তি কাটানোর জন্য রাজনৈতিক ও আদর্শগত লড়়াই আমাদের তীব্র করতে হবে।’’
সম্মেলনের শেষ দিনে প্রকাশ বলেছেন, শুধু নির্বাচনে কাউকে হারিয়ে দেওয়াই শেষ কথা নয়। জনজাতি এলাকায় সঙ্ঘ-বিজেপি কী ভাবে প্রভাব বিস্তার করল, তা বুঝে আদর্শগত ভাবেই ওই অংশের মানুষকে ফের কাছে টানতে হবে। বৃন্দা বলেছেন, গোটা দেশেই তফসিলি ও সংখ্যালঘু মানুষের উপরে আক্রমণ বেড়়েছে বিজেপি শাসনে। এই তথ্য জনজাতি এলাকায় নিয়ে গিয়ে তাঁদের আস্থা ফিরে পেতে পরিশ্রম করতে হবে। আর মানিকবাবুর মতে, পৃথক তিপ্রাল্যান্ডের স্লোগানের জন্য জনজাতি জনগণের যে অংশ বিজেপি-সঙ্ঘকে বিশ্বাস করেছিলেন, তাঁদের মধ্যেই এখন প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। পৃথক রাজ্যের স্লোগানে এঁদের আর ‘ভোলানো’ যাচ্ছে না, তাই এনআরসি-র বিষয়টাকে কখনও কখনও সামনে আনা হচ্ছে। মানুষের মোহ কাটছে বলেই জনজাতি এলাকায় গণমুক্তি পরিষদের (বামেদের গণসংগঠন) সদস্যপদ নিতে ফের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
মোহভঙ্গের এই বাতাবরণকে পুঁজি করে লোকসভা ভোটের আগে সংগঠনকে চাঙ্গা করাই এখন চ্যালেঞ্জ সিপিএমের নতুন নেতৃত্বের।