Tripura Assembly Election 2023

ত্রিপুরায় চমক দেখাল তিপ্রা মথা, কিন্তু ‘শেষ ভোটে’ স্বপ্নপূরণ হল না রাজা প্রদ্যোৎ বিক্রমের

ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা রাজপরিবারের বংশধর প্রদ্যোতবিক্রম ২০২১ সালের গোড়ায় জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার রক্ষার দাবিতে তিপ্রা মথা দল গড়েছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আগরতলা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৩ ২১:২১
Share:

ত্রিপুরায় ভোটের প্রচারে প্রদ্যোত বিক্রম মাণিক্য দেব বর্মণ। ছবি: ফেসবুক।

এটাই তাঁর শেষ নির্বাচন। বিধানসভা ভোটের প্রচারের শেষবেলায় ত্রিপুরার জনজাতিদের বুবাগ্রা (রাজা) প্রদ্যোত বিক্রম মাণিক্য দেব বর্মণ এ কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘এটাই আমার শেষ নির্বাচন। আপনাদের কাছে আর ভোট চাইতে আসব না।’’ নিজে প্রার্থী না হলেও তাঁর এই ঘোষণা জনজাতি ভাবাবেগে প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করা হয়েছিল। সে পূর্বাভাস মিলে গিয়েছে।

Advertisement

কিন্তু মেলেনি রাজা প্রদ্যোতের পূর্বাভাস। ভোটের প্রচারে বার বার তিনি দাবি করেছিলেন, ত্রিপুরার পরবর্তী ত্রিশঙ্কু বিধানসভায় ‘কিং মেকার’ হবে তিপ্রা। ভোটের ফল বলছে, ৬০ সদস্যের বিধানভায় ৩২টিতে জিতে বিজেপি-আইপিএফটি জোট সুতোর ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় ‘স্বপ্নপূরণ’ হয়নি প্রদ্যোতের। যদিও সূত্রের খবর, মানিক সাহার সরকারকে ‘নিরাপদ’ করতে ইতিমধ্যেই তিপ্রার সঙ্গে জোটের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার বার্তা পাঠিয়েছে বিজেপি। ত্রিপুরায় এ বার ৪২টি আসনে লড়ে ১৩টিতে জিতেছে তিপ্রা। পেয়েছে ২০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট। জনজাতি এলাকার পাশাপাশি বাঙালি অধ্যুষিত বেশ কিছু আসনেও নজরকাড়া ভোট পেয়েছে তারা।

ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা রাজপরিবারের বংশধর প্রদ্যোতবিক্রম ২০২১ সালের গোড়ায় জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার রক্ষার দাবিতে তিপ্রা ইন্ডিজেনাস প্রোগ্রেসিভ রিজিয়োনাল অ্যালায়েন্স বা তিপ্রা মথা দল গড়েছিলেন। পাশে পেয়েছিলেন আশির দশকের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বিজয় রাঙ্খলকে। দলের জনভিত্তির প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় ২০২১ সালের এপ্রিলে, ত্রিপুরা ট্রাইবাল এরিয়াস অটোনমাস ডিসট্রিক্ট কাউন্সিল (এডিসি)-এর নির্বাচনে। বিভিন্ন আদিবাসী বা জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে তৈরি তিপ্রা মথা এডিসির ১৮টি আসনে জয়লাভ করে। বাকি ৯টি আসন মিলিত ভাবে পায় বিজেপি এবং তাদের জোট সঙ্গী জনজাতি আইপিএফটি।

Advertisement

তিপ্রা সমর্থকদের সঙ্গে প্রদ্যোৎ। ছবি: ফেসবুক।

১ জানুয়ারি আইপিএফটির প্রধান তথা জোট সরকারের মন্ত্রী এনসি দেববর্মার মৃত্যুর পর কার্যত নেতৃত্বহীন হয়ে পড়া দল তিপ্রার মিশে যাওয়ার জন্য আলোচনা শুরু করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তা ফলপ্রসূ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির সঙ্গে তিপ্রার সমঝোতা কথাও হয়। কিন্তু বিধানসভা ভোট ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় কেন্দ্রের পক্ষে প্রদ্যোতের দাবি মেনে বৃহত্তর তিপ্রাল্যান্ড গঠনের বিষয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেওয়া সম্ভব হয়নি। প্রদ্যোত ইতিমধ্যেই স্পষ্ট জানিয়েছেন, বর্তমান ত্রিপুরা রাজ্য ভেঙে পৃথক বৃহত্তর তিপ্রাল্যান্ড রাজ্য চান তাঁরা। যা, আয়তনের দিক থেকে হবে ভারতের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম। ২০১১ সালের জনগণনা রিপোর্ট তুলে ধরে তাঁর দাবি, বাঙালিদের সংখ্যাবৃদ্ধির কারণে ত্রিপুরার আদি বাসিন্দা জনজাতিরা নিজভূমে পরবাসীতে পরিণত হয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ওই জনগণনা রিপোর্ট বলছে, উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যের মোট ৩৬ লক্ষ ৭৪ হাজার নাগরিকের মধ্যে বাঙালি ২৪ লক্ষ ১৪ হাজার। অন্য দিকে, জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ ৮ লক্ষ ৮৭ হাজার। বিজেপির জোটে তিপ্রা শামিল হলে ত্রিপুরা রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement