মুখে শুধু নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের বিরোধিতা করলেই চলবে না। সামনে রাখতে হবে বিকল্প ‘ম়ডেল’। সেই লক্ষ্যে সিপিএমের অন্যতম ভরসা এখন ত্রিপুরা।
কংগ্রেস ও বিজেপি থেকে পুরনো সমদূরত্বের লাইন ছেড়ে এখন গেরুয়া শিবিরকেই তাঁরা যে চরম বিপদ মনে করছেন, একটি ওয়েবপোর্টালকে সাক্ষাৎকার দিয়ে সেই কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাট। কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার এত দিন কট্টর বিরোধী কারাট সেখানে বলেছেন, বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবারের আগ্রাসনের রাজনীতি ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে এনেছে। এই বিপদের মোকাবিলায় এক দিকে যেমন ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তির ব্যাপকতম ঐক্য গড়ে তুলতে হবে, তার পাশাপাশিই বিকল্প উন্নয়নের পথ দেখাতে হবে। কেরল ও ত্রিপুরায় সরকার চালানোর অভিজ্ঞতা থেকেই তাঁরা বিকল্প পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করতে চান বলে জানিয়েছেন কারাট।
কারাট যেমন ত্রিপুরায় ফের বাম সরকার প্রতিষ্ঠার আশা করেছেন, তেমনই সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি গত কাল আগরতলায় ভিড়ে ঠাসা প্রাক্-নির্বাচনী সমাবেশ থেকে একই ডাক দিয়েছেন। ওই সমাবেশ থেকেই রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারের দামামা বাজিয়েছেন ইয়েচুরি, মানিক সরকার, বিজন ধর, খগেন দাশেরা। বিজেপি-র বিরুদ্ধে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদে’ মদত দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন বাম নেতারা। মোদীর জয়রথ উত্তর-পূর্বে ত্রিপুরায় এসেই থমকে যাবে বলে দাবি করেছেন ইয়েচুরি। তিনি বলেন, ‘‘ত্রিপুরার যুদ্ধ ক্ষেত্রে বিজেপি-র অশ্বমেধের ঘোড়াকে রুখে দেবে শ্রমিকের হাতুড়ি, কৃষকের কাস্তে! নির্বাচনে ত্রিপুরা থেকেই বিজেপি-র পরাজয়ের সূচনা হবে।’’
সমাবেশে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের পলিটব্যুরো সদস্য মানিকবাবু বলেন, রাজ্যে ‘অর্থনৈতিক অবরোধ’ তৈরি করছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। তাঁর বক্তব্য, ত্রিপুরাকে বিভক্ত করার চক্রান্তে আলাদা রাজ্যের দাবিদার আইপিএফটি-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিজেপি ত্রিপুরার স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চাইছে। বামফ্রন্টের এই জনসভাকে ঘিরে আগরতলা গত কাল কার্যত অচল হয়ে যায়। সকাল থেকেই মিছিলের দখলে চলে যায় আগরতলার রাস্তাঘাট। সমাবেশে সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা, ফরওয়ার্ড ব্লকের নরেন চট্টোপাধ্যায়, আরএসপি-র মনোজ ভট্টাচার্য প্রমুখ বক্তা ছিলেন।
বাম নেতাদের ওই বক্তব্যকে হাতিয়ার করে পাল্টা সরব হয়েছে বিজেপি। উত্তর-পূর্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব আজ মন্তব্য করেছেন, ‘‘ত্রিপুরায় পরাজয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সিপিএমের ভাষা হঠাৎ বদলে গিয়েছে! ওরা যেন লব-কুশ! মার্ক্স নেই, মাও নেই। সিপিএম নেতারা বলছেন অশ্বমেধের ঘোড়া রুখবেন!’’ রাম মাধবের আরও দাবি, ত্রিপুরার এক মন্ত্রী বলেছেন, পাণ্ডবদের মতো এই মহাভারতে বামেরাই জিতবে। তার মানে বিজেপি-র ভাবনা ও ভাষা সিপিএমকে প্রভাবিত করেছে!