—ফাইল চিত্র।
শরিয়ত অনুযায়ী তিন তালাক প্রথা ‘অবাঞ্ছিত’। সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা জমা দিয়ে জানাল অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (এআইএমপিএলবি)। সোমবারই সুপ্রিম কোর্টে হলফনামাটি জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে, এর পর থেকে যে কোনও মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের সময় তিন তালাককে এড়িয়ে চলার কথা নিকাহনামার অন্তর্ভুক্ত করতে কাজিদের অনুরোধ করা হবে। যদি কোনও মুসলিম এর পরও তিন তালাকের আশ্রয় নেন, তা হলে তাঁর পরিবারকে অন্য মুসলিমরা বয়কট করবেন— এমন পরামর্শও মুসলিম সম্প্রদায়কে দেওয়া হবে বলে হলফনামায় জানানো হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টে তিন তালাক মামলার শুনানি শেষ। শুধু রায় ঘোষণার অপেক্ষা। —ফাইল চিত্র।
তিন তালাক প্রথা আদৌ বৈধ কি না, তা এখন সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন। ভারতীয় মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত এই প্রথার বিরুদ্ধে একগুচ্ছ আবেদন জমা পড়েছে সর্বোচ্চ আদালতে। তার প্রেক্ষিতেই বিষয়টির বিচার শুরু করেছে প্রধান বিচারপতি জেএস খেহরের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই মামলাকারী এবং তাঁদের বিরোধী অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের বক্তব্য শুনেছে। ভারত সরকারের বক্তব্যও বিচারপতিরা শুনেছেন। মামলার শুনানি শেষ, শুধু রায় ঘোষণা বাকি। তার আগে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা জমা দিয়ে তিন তালাক প্রথায় আদালতের হস্তক্ষেপ ঠেকানোর শেষ চেষ্টা করল এআইএমপিএলবি। তিন তালাক প্রথার প্রয়োগ মুসলিমদের মধ্যে এমনিতেই কমে এসেছে বলে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বল আদালতে আগেই দাবি করেছিলেন। আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করলে হিতে বিপরীত হতে পারে বলে সিব্বল আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট সিব্বলকে পাল্টা প্রশ্ন করেছিল, মুসলিমদের বিয়ের সময় মহিলারাই স্থির করবেন তাঁরা তিন তালাক প্রথা মানবেন কি না— এমন ব্যবস্থা মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড করতে পারবে কি না? বোর্ড সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আদালতকে সিদ্ধান্ত জানাবেন। সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছিলেন সিব্বল। কথা মতো নিজেদের অবস্থান সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়ে দিল এআইএমপিএলবি। ১৩ পাতার হলফনামায় বোর্ড জানাল, কাজিদের জন্য কিছু পরামর্শ পাঠানো হবে। বোর্ডের ওয়েবসাইট এবং পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে কাজিদের কাছে সেই পরামর্শ পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছে। বিয়ে দেওয়ার সময় এমন কিছু প্রক্রিয়া কাজিরা অনুসরণ করবেন, যাতে তিন তালাক আর না হয়, হলফনামায় এমনই জানিয়েছে বোর্ড। তিন তালাক প্রথার প্রয়োগ তাঁরা কখনও করবেন না, এমন কথা নিকাহনামার অন্তর্ভুক্ত করতে বর এবং কনেকে কাজি নিজেই যাতে রাজি করান, তার জন্য কাজিদের অনুরোধ করা হবে। সুপ্রিম কোর্টকে এমনই জানিয়েছেন এআইএমপিএলবি। তিন তালাক প্রথার প্রয়োগ না করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও যদি কোনও মুসলিম স্ত্রীকে তালাক দেন, তা হলে তাঁকে অন্য মুসলিমরা সামাজিক ভাবে বয়কট করবেন। বোর্ড এমন পরামর্শও দেবে বলে হলফনামায় জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:অরুন্ধতীকেই সেনা জিপে বেঁধে ঘোরানো উচিত: বিতর্কে পরেশ রাওয়াল
একগুচ্ছ ব্যবস্থার কথা বোর্ডের এই হলফনামায় জানানো হয়েছে ঠিকই। কিন্তু সে সবই পরামর্শের আকারে। অর্থাৎ কাজিদেরকে এআইএমপিএলবি কিছু পক্রিয়া মেনে চলার পরামর্শ দেবে বা অনুরোধ করবে। সেই পরামর্শ মেনেই কাজিরা নিকাহনামা তৈরি করতে বাধ্য থাকবেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।