গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
লোকসভায় পাশ হয়েছিল আগেই। এ বার রাজ্যসভাতেও ঐতিহাসিক তিন তালাক বিল পাশ করাতে সফল হল বিজেপি নেতৃত্বাধীন নরেন্দ্র মোদী সরকার। মঙ্গলবার রাজ্যসভায় বিলটি উঠলে সেটি পুনর্বিবেচনার জন্য সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি ওঠে। তা নিয়ে ভোটাভুটি শুরু হলে, বিলটি পুনর্বিবেচনার পক্ষে ভোট দেন ৮৪ জন সাংসদ। তাঁদের বিপক্ষে মত দেন ৯৯ জন সাংসদ। তাই আর বিলটি পাশ হতে সমস্যা হয়নি।
রাজ্যসভায় পাশ হওয়ার পর তিন তালাক বিলটি পাঠানো হবে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে। তিনি সই করলেই সেটি আইনে পরিণত হবে। আইন হলেই তাৎক্ষণিক তিন তালাক প্রথা ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে। সে ক্ষেত্রে স্ত্রীকে তিন তালাক দিলে তিন বছর পর্যন্ত কারাবাস হতে পারে মুসলিম পুরুষদের।
তিনটি আসন খালি পড়ে থাকায় এই মুহূর্তে রাজ্যসভার মোট সাংসদ সংখ্যা ২৪২। তাই কোনও বিল পাশ করাতে গেলে বর্তমানে ১২১ জন সাংসদের সমর্থন প্রয়োজন হয়। সেখানে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের সদস্য সংখ্যা ১১৩। কিন্তু জেডিইউ এবং এআইএডিএমকে-র মতো শরিক দল ওয়াক আউট করলে এনডিএ-র সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ১০৭-এ।
আরও পড়ুন: পাঁজরে চোট পেয়ে আজও ভেন্টিলেশনে উন্নাওয়ের নির্যাতিতা, জেল থেকে ফোনে হুমকি বিধায়কের
অন্য দিকে, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টির মতো বিরোধী দলের সাংসদরা সভা ত্যাগ করেন। তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি ভোটদান থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে, সাংসদ সংখ্যা এসে ঠেকে ২৩৬-এ। এ ছাড়াও এ দিনের অধিবেশনে বিজেপির অরুণ জেটলি, কংগ্রেসের অস্কার ফার্নান্ডেজ, এনসিপির শরদ পওয়ার এবং প্রফুল্ল পটেল-সহ মোট ১৪ জন সাংসদ অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে ভোটাভুটির সময় সাংসদ সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২১৬। সে ক্ষেত্রে বিল পাশ করাতে মাত্র ১০৯টি ভোটের প্রয়োজন ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের। সেইসময় তাদের ত্রাতা হয়ে দাঁড়ায় নবীন পট্টনায়কের দল বিজেডি। এনডিএ-র শরিক না হওয়া সত্ত্বেও তিন তালাক বিলে সমর্থন দেন তাদের ৭ সাংসদ। তাতে তিন তালাক বিলের পক্ষে সমর্থন গিয়ে ঠেকে ১১৩-য়। এর পর আর বিলটি পাশ করাতে কোনও সমস্যা হয়নি মোদী সরকারের।
চলছে ভোটাভুটি।
বিলটি পাশ হয়ে গেলে টুইটারে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি লেখেন, ‘এত দিনে তিন তালাকের মতো একটি প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় প্রথাকে আবর্জনার স্তূপে ছুড়ে ফেলে দেওয়া গেল। মুসলিম মহিলাদের প্রতি এতদিন ধরে চলে আসা একটি ঐতিহাসিক ভুল শোধরানো সম্ভব হল সংসদে। এটা লিঙ্গ বৈষম্যে বিরুদ্ধে জয়। এর ফলে সমাজে সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার পথ আরও প্রশস্ত হল। আজ ভারতের খুশির দিন।’
আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ এ দিন সংসদে বলেন, ‘‘আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। মুসলিম মহিলাদের ন্যায় বিচার দিয়েছে সংসদের দু’কক্ষই।’’
আরও পড়ুন: কেশরীর খোঁচা ভুলে নতুন রাজ্যপালকে উষ্ণ অভ্যর্থনা মমতার
২০১ ৪-য় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তিন তালাক প্রথার অবসান চেয়ে সরব হয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। ২০১৭-য় তাৎক্ষণিক তিন তালাক প্রথাকে অসাংবিধানিক তকমা দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টও। তার পরেই তিন তালাককে ফৌজদারি অপরাধের তকমা দিয়ে তিন বছরের জেলের নিদান দিয়েও বিল আনে মোদী সরকার। কিন্তু প্রথম দফায় সেই বিল পাশ করাতে ব্যর্থ হয় তারা। দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেই তাই অসমাপ্ত কাজ সেরে ফেলতে উদ্যোগী হন মোদী-শাহরা। গত সপ্তাহে ৩০৩ ভোটে লোকসভায় বিলটি পাশ হয়। সংখ্যার ফেরে এত দিন আটকে থাকলেও, এ দিন শেষমেশ রাজ্যসভাতেও পাশ হয়ে গেল বিলটি।