রাজ্যসভায় সংখ্যার দিক থেকে শাসক শিবির সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। ফাইল চিত্র।
কাল থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের বাজেট অধিবেশনের শেষ সপ্তাহ। শেষ বেলায় সরকারের উপর চাপ বাড়াতে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ করানোর জন্য প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত নিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সূত্রের মতে, রাজ্যসভায় ওই বিলটি পাশ করানোর প্রশ্নে সরব হতে চলেছেন তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, দীর্ঘ দিন ধরে মহিলা সংরক্ষণ বিলটি পাশের অপেক্ষায় দিন গুনছে।
এই মুহূর্তে রাজ্যসভায় সংখ্যার দিক থেকে শাসক শিবির সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। তাই সরকারের উচিত এই সুযোগে মহিলা সংরক্ষণ বিলটি পাশ করিয়ে নেওয়া। তৃণমূল নেতৃত্ব ভাল করেই জানেন, এই মুহূর্তে সরকারের পক্ষে ওই বিতর্কিত বিল আনা বেশ সমস্যার। তাই সরকার না আনলে শাসক শিবির রাজনীতিতে মহিলাদের ক্ষমতায়নের বিপক্ষে— এই যুক্তিতে সরব হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন ডেরেকরা।
লোকসভা ও বিধানসভাগুলিতে যাতে আইন করে মহিলাদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষিত হয়, সে জন্য মহিলা সংরক্ষণ বিল আনার দাবি দীর্ঘ দিনের। মূলত মহিলা ইস্যুকে সামনে রেখে এ বার সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলতেই বাজেট অধিবেশনের একেবারে শেষ লগ্নে ওই বিলটি নিয়ে সরব হওয়ার কৌশল নিয়েছে তৃণমূল। তাদের বক্তব্য, দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলই একমাত্র সংসদীয় দল, যাদের মহিলা প্রতিনিধিত্ব এক-তৃতীয়াংশের বেশি। তৃণমূল শিবিরের দাবি, গোড়া থেকেই দেশের মহিলাদের স্বশক্তিকরণের কথা যদি কেউ সত্যি করে ভেবে থাকেন, তা হলে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল শিবিরের দাবি, রাজনৈতিক দলগুলির তাই উচিত, মহিলাদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রশ্নে ওই বিলকে সমর্থন করা।
মহিলা সংরক্ষণ বিলটি প্রথম ১৯৯৬ সালে দেবগৌড়া সরকারের আমলে লোকসভায় পেশ হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৮, ১৯৯৯ সালে লোকসভায় পেশ হলেও মূলত লালুপ্রসাদ যাদব, মুলায়ম সিংহ যাদবের মতো নেতার প্রবল বিরোধিতায় তা পাশ হয়নি। পরে ২০০৮ সালে ওই বিলটি রাজ্যসভায় পেশ হলে তা আইন মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানো হয়। পরের বছর কমিটি রাজ্যসভায় তাদের রিপোর্ট পেশ করে।
তার পরের বছর অর্থাৎ ২০১০ সালে বিলটি রাজ্যসভায় পাশ হয় ও বিলটিকে লোকসভায় পাশের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু ফের গো-বলয়ের কিছু দলের আপত্তিতে লোকসভায় বিলটি আটকে যায়। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালে লোকসভার মেয়াদ শেষ হতেই বিলটিও তামাদি হয়ে যায়।
মাঝে দীর্ঘ সময় বিলটি নিয়ে নড়াচড়া বন্ধ থাকলেও এ যাত্রায় ওই বিলটি ফের পাশের দাবি তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। লিঙ্গ বৈষম্য, ২০২১ সালের রিপোর্টকে হাতিয়ার করে ওই বিলটি পাশ করানোর যুক্তি সাজিয়েছে তারা। দলের দাবি, ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, লিঙ্গ বৈষম্যের নিরিখে ১৫৬টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ১৪০তম। এ ক্ষেত্রে আগের চেয়ে ২৮ স্থান নীচে নেমে এসেছে ভারত। যার প্রভাব দেখা গিয়েছে লোকসভা ও রাজ্যসভার মহিলা প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রেও। বর্তমানে লোকসভায় ১৫ শতাংশ মহিলা সাংসদ রয়েছেন। রাজ্যসভায় রয়েছেন ১২.২ শতাংশ। গোটা বিশ্বে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব যেখানে ২৫.৫ শতাংশ। তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, একমাত্র আইন করে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ হলে তবেই রাজনীতিতে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়া সম্ভব।
এই মুহূর্তে রাজ্যসভায় বিজেপির সদস্য সংখ্যা ১০০। গত ৩২ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনও দল একশো সাংসদের গন্ডি ছাড়িয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, লোকসভায় তো বটেই, রাজ্যসভাতে বিজেপির যা সাংসদ সংখ্যা, তাতে অনায়াসে ওই বিলটি পাশ করিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে শাসক শিবিরের পক্ষে। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘বিজেপি যদি সত্যিকারের মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য আগ্রহী, তা হলে আশা করব এই অধিবেশনেই বিলটি পাশ করাবে। কারণ একমাত্র মহিলাদের ক্ষমতায়ন হলেই তবেই সমাজের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব।’’
তৃণমূল ওই দাবি তুললেও আগামী চার দিনে লোকসভায় পাশ হওয়া অন্তত সাতটি বিল পাশ করাতে হবে শাসক শিবিরকে। তার ফলে মহিলা সংরক্ষণের মতো বিতর্কিত বিল এত দ্রুত এনে তা পাশ করানো যে কঠিন, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। আর সেটাকেই হাতিয়ার করে বিজেপি যে মহিলাদের স্বশক্তিকরণের প্রশ্নে আন্তরিক নয়, সেই প্রশ্ন তুলে আগামী দিনে শাসক শিবিরকে আক্রমণ শানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন ডেরেকরা।