ছবি: সংগৃহীত।
সর্বভারতীয় বাম রাজনীতিতে বাংলার গুরুত্ব অনেক দিনই নিম্নমুখী। এ বারও বাংলায় বিধানসভা ভোটে যখন বেনজির ভাবে শূন্য আসন নিয়ে ফিরতে হয়েছে সিপিএমকে, সেই সময়েই কেরলে নজির গড়ে পরপর দু’বারের জন্য বাম সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এম কে স্ট্যালিনের ডিএমকে-র সঙ্গে জোট বেঁধে তামিলনাড়ুতেও শাসক ফ্রন্ট এসপিএ-র শরিক তারা। দলের আগামী পার্টি কংগ্রেস আয়োজনের জন্য সিপিএমের অন্দরে লড়াইয়ে রয়েছে দক্ষিণের ওই দুই পড়শি রাজ্যই।
বাংলা, তামিলনাড়ু-সহ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন এবং তার উপরে অতিমারি পরিস্থিতি— এই কারণে চলতি বছরে সিপিএমের যে পার্টি কংগ্রেস হওয়ার কথা ছিল, তা পিছিয়ে গিয়েছে। সিপিএম সূত্রের খবর, বকেয়া ২৩তম পার্টি কংগ্রেস আয়োজন করার জন্য দলের কেরল ও তামিলনাড়ুর রাজ্য নেতৃত্ব দাবি পেশ করেছেন পলিটবুরোর কাছে। সরকারে থাকায় কেরলের পাল্লা তুলনায় ভারী। কেন্দ্রীয় কমিটিতে আলোচনা করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। তবে সবই শেষ পর্যন্ত নির্ভর করবে কোভিড পরিস্থিতি কেমন থাকে, তার উপরে। বিশেষত, কেরলে কোভিড সংক্রমণের হার এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে। যদিও কেরল সিপিএম নেতৃত্বের আশা, আগামী বছর এপ্রিলে পার্টি কংগ্রেস হওয়ার আগে রাজ্যে টিকাকরণের কাজ সম্পূর্ণ করে ফেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।
সেই ২০০৮ সাল থেকে সিপিএমের পরপর সবক’টি পার্টি কংগ্রেসই হয়েছে দক্ষিণ ভারতে। যে কারণে ‘দক্ষিণ ভারতের পার্টি’ বলে তাদের কটাক্ষও শুনতে হয়েছে! কিন্তু পরিস্থিতির বিচারে এ বারও পার্টি কংগ্রেসের সম্ভাব্য গন্তব্য হতে পারে সেই দক্ষিণেই। কেরলের রাজ্য নেতৃত্বের যুক্তি, দীর্ঘ দিনের রেওয়াজ ভেঙে পিনারাই বিজয়নের সরকার সেখানে ক্ষমতায় ফিরতে পেরেছে। এই সাফল্যের ‘স্বীকৃতি’ হিসেবে আসন্ন পার্টি কংগ্রেস কেরলেই করা হোক। সে রাজ্যের কোঝিকোড়ে শেষ বার পার্টি কংগ্রেস হয়েছিল ২০১২ সালে। আবার তামিলনাড়ু সিপিএমের বক্তব্য, ২০১৯ সালের লোকসভা এবং এ বার বিধানসভা ভোটে সে রাজ্যে সাফল্যের মুখ দেখেছে দল। লোকসভায় সিপিএম ও সিপিআইয়ের চার জন সাংসদ পাঠানোর পরে বিধানসভাতেও বামেদের চার জন বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। তার মধ্যে আছেন তামিলনাড়ু সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কে বালকৃষ্ণনও। ডিএমকে-র সঙ্গে শাসক জোট ‘সেক্যুলার প্রগেসিভ অ্যালায়েন্স’ (এসপিএ)-র শরিক এখন তাঁরা। এই অবস্থায় তামিলনাড়ুতে পার্টি কংগ্রেস হলে দলের কর্মী-সমর্থকদের উৎসাহ বাড়ানো যাবে, আবার শাসক ফ্রন্টে থাকায় এমন বড় আসর আয়োজনেও সুবিধা হবে।
সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা, নানা রাজ্য থেকে আসা প্রতিনিধিদের থাকা-খাওয়া এবং প্রয়োজনীয় প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থা করতে বড় অঙ্কের খরচ হয়। দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে দলের তহবিলে চাঁদা জমা পড়ার পরিমাণ অন্যান্য জায়গার চেয়ে বেশি। তাই পার্টি কংগ্রেস আয়োজনে ইদানিং তারাই এগিয়ে থাকে। দলের এক পলিটবুরো সদস্যের বক্তব্য, ‘‘সম্ভাব্য সব দিক বিবেচনায় রেখেই পার্টি কংগ্রেসের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তবে কেরলে সিপিএমের নেতৃত্বাধীন এলডিএফ যে ইতিহাস গড়েছে, তা অনস্বীকার্য।’’