ছবি পিটিআই।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) আন্দোলন কোনও ভাবেই শুধু মুসলিমদের প্রতিবাদ নয়। আন্দোলনের গায়ে ‘মুসলিম বিদ্রোহে’র তকমা লাগিয়ে আরএসএস-বিজেপি যাতে ফায়দা তুলতে না পারে, তার জন্য রণকৌশল স্থির করতে বৈঠকে বসছে দেশের প্রথম সারির সমস্ত মুসলিম সংগঠন। সাম্প্রতিক অতীতে এমন উদ্যোগ বেনজির।
বর্ষশেষের দিন, মঙ্গলবার হায়দরাবাদে ওই বৈঠক বসছে। তাঁর নিজের শহরে এমন বৈঠকের আয়োজন হলেও অল ইন্ডিয়া মজলিস-ইত্তেহাদ-উল-মুসলিমিন (এইএমআইএম)-এর সভাপতি ও সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসিকে সেখানে ডাকা হয়নি। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা আগেই ঘোষণা করেছেন ওয়াইসি। কিন্তু অন্যান্য মুসলিম সংগঠনগুলির নেতৃত্বের মতে, অতিরিক্ত আগ্রাসী অবস্থান নিয়ে বারেবারেই বিজেপিকে মেরুকরণের ফায়দা করে দিয়েছে এমআইএম। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র আগেই এ রাজ্যে এমআইএম সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে অভিযোগ করেছিলেন, ওয়াইসির সংগঠন আসলে বিজেপির সুবিধা করে দেওয়ার জন্যই ময়দানে নামে!
হায়দরাবাদের বৈঠকে যোগ দেবে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড, দারুল উলুম দেওবন্দ, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ, জামাতে ইসলামি হিন্দ, মুসলিম মজলিসে মুশাওয়ারাত-সহ একাধিক সংগঠন। দেওবন্দের উপাচার্য মুফতি আবুল কাসিম নোমানি, জমিয়তের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মেহমুদ মাদানি, পার্সোনাল ল বোর্ডের খালিদ সইফুল্লা রহমানির পাশাপাশি বেশ কিছু মুসলিম বিশিষ্ট জন ও আইনজীবীর ওই বৈঠকে থাকার কথা। নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে কলকাতায় শান্তিপূর্ণ ভাবে বিরাট জমায়েতের প্রেক্ষিতে জমিয়তের রাজ্য সভাপতি এবং এ রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকেও হায়দরাবাদে ওই দিন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: যোগী সরকারকে নিশানা প্রিয়ঙ্কার
সূত্রের খবর, হিংসাত্মক আন্দোলন বর্জন করার পাশাপাশি শুধু মুসলিম সংগঠনের ব্যানার নিয়ে নিজেরা প্রতিবাদ করতে যাওয়াও বর্তমান পরিস্থিতিতে হঠকারী হবে— এই বার্তাই দেওয়া হবে সম্মেলনে। পার্সোনাল ল বোর্ডের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘দেশের সংবিধান রক্ষায় ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এটা ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের আন্দোলন। সব মত, সব ধর্মের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছেন বলেই প্রতিবাদ এত বড় চেহারা নিয়েছে। এই মনোভাব নিয়েই এগোতে হবে।’’
আরও পড়ুন: মেরঠের এসপিকে কড়া বার্তা নকভির
উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লির পুলিশ যে ভাবে প্রতিবাদ দমনে ‘বর্বরতা’ চালাচ্ছে, তার মোকাবিলায় কী করণীয়, তা নিয়েও বৈঠকে কথা হবে। উত্তরপ্রদেশে বাম নেতা-কর্মীদেরও গ্রেফতার করে জেলে ভরেছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের পলিটব্যুরো সদস্য কবিতা কৃষ্ণনের অভিযোগ, যোগীর রাজ্যে পুলিশ সংখ্যালঘু মহল্লায় ‘অকথ্য নির্যাতন’ চালাচ্ছে। এমতাবস্থায় সর্বত্র শান্তি বজায় রাখাই মুসলিম সংগঠনগুলির প্রথম লক্ষ্য। সিদ্দিকুল্লাও বলেন, ‘‘প্ররোচনা যেমনই থাকুক, হিংসার পথে যাওয়া যাবে না।’’