লখনউ বিমানবন্দরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অখিলেশ যাদব। নিজস্ব চিত্র।
প্রথম দেখা হয়ে গেল বিমানবন্দরেই। ভোটের প্রচার ও কৌশল নিয়ে সোমবার রাতে একপ্রস্ত কথা হয়ে গেল দু’জনের।
কর্মসূচি অনুযায়ী সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবের সঙ্গে আজ, মঙ্গলবারই তৃণমূলনেত্রীর দেখা হওয়ার কথা ছিল তাঁদের যৌথ জনসভায়। বস্তুত এটিই পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে প্রচারের অন্তিম দিন। সেখানে ভোট ১০ ফেব্রুয়ারি।
এ দিন, কলকাতা ছাড়ার আগে মমতা খবর পেয়েছিলেন, অখিলেশ তাঁর সঙ্গে রাতেই দেখা করতে চান। কিন্তু মমতা জানিয়েছিলেন, প্রচারের ব্যস্ততা সেরে রাতে অখিলেশের আসার দরকার নেই। কিন্তু তা হয়নি। তৃণমূলনেত্রীর বিশেষ বিমান লখনউ ছোঁয়ার পরেই সমাজবাদী পার্টির সর্বভারতীয় নেতা ও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মন্ত্রী কিরণময় নন্দ মমতাকে জানান, অখিলেশের বিমানও এখনই নামবে। মমতা তখন ভিআইপি লাউঞ্জে সামান্য অপেক্ষা করে সেখানেই অখিলেশের সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা সেরে নেন। নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ, মঙ্গলবার সকালে সমাজবাদী পার্টির অফিস থেকে অখিলেশকে পাশে নিয়ে ভার্চুয়াল সভা করবেন মমতা।
এ দিন বিমানবন্দরের সামনে উৎসাহী ভিড় ছিল মমতার জন্য। তাঁর ও অখিলেশের নামে মুহুর্মুহু স্লোগান ওঠে। মমতার ছবি দেওয়া পোস্টার, ফেস্টুনও দেখা যায়। বিমানন্দর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে হোটেল পর্যন্ত পথের নানা জায়গায় মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে অভিনন্দন জানাতে মানুষ দাঁড়িয়েছিলেন।
কলকাতা ছাড়ার আগে বিমানবন্দরে মমতা যা বলেছিলেন, এখানেও তারই পুনরাবৃত্তি করেন তৃণমূলনেত্রী। অন্য কোনও দলের নাম না করে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির বিরুদ্ধে শুধুই সমাজবাদী পার্টিকেই জেতানোর কথা বলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি অখিলেশকে, ওঁর দল সমাজবাদী পার্টিকে জেতাতে এসেছি। বিজেপির বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে আমি অখিলেশের পাশে আছি।’’ এর আগে কলকাতা বিমানবন্দরে মমতাকে উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে কংগ্রেস সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘‘কংগ্রেস একসঙ্গে থাকলে ভাল হত। কিন্তু ওরা শুনছে না। ভোট কাটার তো মানে হয় না। যিনি জিতবেন, তাঁর পাশে দাঁড়ানো উচিত।’’
আজ, মঙ্গলবার মমতার প্রথম কর্মসূচি সমাজবাদী পার্টির অফিস থেকে অখিলেশকে পাশে নিয়ে ভার্চুয়াল জনসভাটি পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ সহ গোটা রাজ্যে সরাসরি দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সভার পরে মমতার সাংবাদিক বৈঠক করার কথা রয়েছে। মমতার সঙ্গে কথাবার্তার সময় অখিলেশ এ দিন অভিযোগ করেন, ‘‘এখানে কেন্দ্রীয় এজেন্সির বড় বড় অফিসারদের আত্মীয়পরিজনকে বিজেপি প্রার্থী করেছে।’’ মমতা তাঁকে বলেন, ‘‘এ জিনিস পশ্চিমবঙ্গেও হয়েছিল। মালদহে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার স্ত্রী বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন। ও নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। ও সব করে কিছু লাভ হয় না।’’ তার পরেই রাজনৈতিক অভিভাবকের ভঙ্গিতে অখিলেশের উদ্দেশে মমতার
পরামর্শ, ‘‘নিজের প্রচার-প্রস্তুতি ঠিক মতো কর, ভোটে মন দাও। বিজেপির বিরুদ্ধে উত্তরপ্রদেশের মানুষ তোমাকেই চায়।’’
পূর্ব উত্তরপ্রদেশেও প্রচারের কর্মসূচি আছে মমতার। আপাতত স্থির হয়েছে, মার্চের গোড়ায়, শিবরাত্রির পরে তৃণমূলনেত্রী বারাণসী যাবেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লোকসভা কেন্দ্র বারাণসী উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে গুরুত্বের অন্যতম ভরকেন্দ্র। সেখানে মমতার প্রচারে যাওয়া
রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বারাণসীতে বহু বাঙালি আছেন। বাংলা ও বারাণসীর যোগাযোগও ঘনিষ্ঠ। সেখানে মমতা সঙ্গে
রাখতে চান প্রয়াত কংগ্রেস নেতা কমলাপতি ত্রিপাঠির এক ছেলে ও এক নাতিকে। তাঁরা ইতিমধ্যেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।