Supreme Court

বিরোধিতা গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ: বিচারপতি চন্দ্রচূড়

সিএএ, এনআরসি-র মতো বিষয়ে সরব হলেই দেশ-বিরোধী তকমা দিচ্ছে বিজেপি। সেই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ও বম্বে হাইকোর্টের মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনীতিকেরা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি ও মুম্বই শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:০৪
Share:

ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি।

যে কোনও বিরোধকেই (ডিসেন্ট) দেশ-বিরোধী বা গণতন্ত্র-বিরোধী তকমা দেওয়া সাংবিধানিক মূল্যবোধের গোড়ায় আঘাতের শামিল বলে মন্তব্য করলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিরোধিতা হল গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ (সেফটি ভালভ)।’’ নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘গণতন্ত্রে সংখ্যালঘুর কণ্ঠরোধ করা যায় না। বরং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ভারতীয় সংবিধানের উদার প্রতিশ্রুতির মধ্যেই বহুত্ববাদকে সম্মান করার কথা বলা হয়েছে। বৈধ সরকার রাজনৈতিক বিরোধিতার উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপায় না। বরং তাকে স্বাগত জানায়।’’

Advertisement

কোনও আইনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানালেই কাউকে বিশ্বাসঘাতক বা দেশ-বিরোধী তকমা দেওয়া যায় না বলে বৃহস্পতিবারই রায় দিয়েছে বম্বে হাইকোর্ট। মহারাষ্ট্রের বিড় জেলায় নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ ধর্নারও অনুমতি দিয়েছে হাইকোর্টের বেঞ্চ।

সিএএ, এনআরসি-র মতো বিষয়ে সরব হলেই দেশ-বিরোধী তকমা দিচ্ছে বিজেপি। সেই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ও বম্বে হাইকোর্টের মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনীতিকেরা। কংগ্রেসের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘বম্বে হাইকোর্টের নির্দেশ থেকে বিজেপির বোঝা উচিত, তারা আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বিজেপির উচিত এ বার আইন ও সং‌বিধানকে মেনে চলা।’’

Advertisement

বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মতে, প্রশ্ন ও বিরোধের পথ বন্ধ করে দিলে রাজনৈতিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বৃদ্ধির পথ বন্ধ হয়ে যায়। উত্তরপ্রদেশে সিএএ-বিরোধী আন্দোলনে হিংসার সময়ে সম্পত্তি ধ্বংসের মামলায় বেশ কয়েক জন অভিযুক্তের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে নোটিস পাঠিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মামলায় শীর্ষ আদালতের যে বেঞ্চ যোগী আদিত্যনাথ সরকারকে নোটিস পাঠিয়েছে, বিচারপতি চন্দ্রচূড় তার সদস্য। তাঁর কথায়, ‘‘বাক্‌স্বাধীনতাকে রক্ষা করাই রাষ্ট্রযন্ত্রের কাজ হওয়া উচিত। ভীতি ছড়িয়ে বাক্‌স্বাধীনতার অধিকার হরণের চেষ্টা করা হলে রাষ্ট্রযন্ত্রের উচিত সেই চেষ্টার বিরোধিতা করা।’’

চন্দ্রচূড়ের মতে, ভারত বহুত্ববাদের উপরে ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছিল। তাই এ দেশের জাতীয় ঐক্যের অর্থ হল বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বোধের মেলবন্ধন ও সংবিধানের মূল ধারণাগুলির প্রতি বিশ্বস্ত থাকা। তাঁর কথায়, ‘‘মনে রাখতে হবে আমাদের সংবিধান প্রণেতারা হিন্দু বা মুসলিম ভারতের ভাবনাকে স্বীকার করেননি। কেবল প্রজাতান্ত্রিক ভারতের ভাবনাকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।’’

বৃহস্পতিবার সিএএ-বিরোধী ধর্না সংক্রান্ত মামলায় প্রতিবাদের অধিকারকেই স্বীকৃতি দিয়েছে বম্বে হাইকোর্ট। বিড় জেলার মাজালগাঁওয়ে সিএএ-র বিরুদ্ধে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ধর্নায় বসতে চেয়েছিলেন ইফতিকার শেখ ও তাঁর সহযোগীরা। কিন্তু প্রশাসনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, ওই ধর্নার অনুমতি দেওয়া যাবে না। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন জানান ইফতিকার। বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট জানিয়েছে, পুলিশ-প্রশাসনের ওই নির্দেশ বেআইনি। সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হবে বলেই ওই ধর্নার অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিচারপতিদের বক্তব্য, ‘‘মনে রাখতে হবে আমরা গণতান্ত্রিক দেশে বাস করি। আমাদের সংবিধানে আইনের শাসনের কথা আছে, সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনের কথা নেই।’’ বেঞ্চের মতে, ‘‘সিএএ-র মতো আইন তৈরি হলে মুসলিমদের মতো কোনও একটি সম্প্রদায়ের মানুষ ভাবতেই পারেন যে, ওই আইন তাঁদের স্বার্থবিরোধী। তাই ওই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা প্রয়োজন। সেটা সেই সম্প্রদায়ের ধারণা বা বিশ্বাসের প্রশ্ন। তা নিয়ে আদালত মাথা ঘামাবে না।’’ বিচারপতিদের মতে, ‘‘কোনও সম্প্রদায়ের প্রতিবাদের অধিকার আছে কি না, তা বিচার করে দেখা আদালতের কর্তব্য। কিন্তু সেই প্রতিবাদের ফলে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা তৈরি হবে কি না, তা দেখা সরকারের কর্তব্য। সরকারের উচিত প্রতিবাদীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement