ধৃত দিলওয়ার হোসেন। -নিজস্ব চিত্র।
কেরলের মালাপ্পুরম এবং কর্নাটকের বেঙ্গালুরুর পর এ বার ঝাড়খণ্ড থেকে গ্রেফতার হল জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর আরও এক সক্রিয় সদস্য। কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর গোয়েন্দারা দিলাওয়ার হোসেন নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করেছেন ঝাড়খণ্ডের পাকুড়িয়া থেকে। পুলিশ জানিয়েছে, মালদহের কালিয়াচকের বাসিন্দা দিলাওয়ার।
মঙ্গলবার বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেফতার করা হয় শীর্ষ জেএমবি নেতা বোমা মিজান ওরফে জহিদুল ইসলামকে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণের পর গত দু’বছরে জেএমবি সংগঠন নতুন করে তৈরি করছিল মিজান। মালদহ এবং মুর্শিদাবাদ জেলার একাধিক যুবককে সে এই নতুন সংগঠনে নিয়োগ করে। ওই নয়া জেএমবি বিভিন্ন মডিউলকে কাজে লাগিয়ে বুদ্ধগয়াতে বড়সড় হামলার ছক করেছিল মিজান। সেই মডিউলের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিল এই দিলাওয়ার। পুলিশের দাবি, বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণে যুক্ত ছিল সে।
মঙ্গলবার বেঙ্গালুরু থেকে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) এই নব্য জেএমবির মূল সংগঠক মিজানকে তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী আদিলের সঙ্গে গ্রেফতার করে। দিলাওয়ারও সেই একই মডিউলের সদস্য। এসটিএফ এবং এনআইএ সূত্রে খবর, বাংলাদেশ-সহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় আইএস-এর প্রভাব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেএমবি সংগঠনেও ভাঙন আসে। এক দল বাংলাদেশে আইএস মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে নব্য জেএমবি সংগঠন করে। যারা ঢাকার গুলশনে কাফে হামলার সঙ্গে যুক্ত।
অন্য দিকে, জেএমবি-র অন্য এক শীর্ষ নেতা সালাউদ্দিন সাহেলিনের নেতৃত্বে ভারতে বসে নতুন ভাবে সংগঠন তৈরি করা শুরু করে মিজান। সঙ্গে ছিল খাগড়াগড়ের পর গা-ঢাকা দেওয়া তার কিছু ঘনিষ্ঠ সহযোগী।
আরও পড়ুন- গোয়েন্দাদের ঘোল খাইয়েই পালিয়েছিল খাগড়াগড়ের কওসর
আরও পড়ুন- বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণে কেরল থেকে গ্রেফতার খাগড়াগড় কান্ডে ফেরার তুহিন
বর্ধমানের বিস্ফোরণের পর, গোয়েন্দাদের নজর এড়াতে তাঁরা অনেকেই দক্ষিণ ভারতে, এ রাজ্য থেকে কাজে যাওয়া শ্রমিকদের কলোনিতে ডেরা বাঁধে। কিন্তু সেখান থেকে মিজান এবং তার পুরনো সহযোগিরা প্রায়শই এ রাজ্যে আসত। এনআইএ গোয়েন্দারা স্বীকার করেছেন, কলকাতা শহরের আশেপাশে বিভিন্ন সময়ে থেকে গিয়েছে মিজান। মূলত, কিছু স্লিপার সেলের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য।
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, বাংলাদেশে সংগঠনের ভাঙনের ফলে সেখানে তার ফেরার রাস্তা ছিল না। বাংলাদেশ পুলিশের থেকেও তার বড় শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছিল নতুন সংগঠন, যারা আদর্শগত ভাবে আলাদা পথে চলে গিয়েছে।
তাই ভারতকে কেন্দ্র করেই জিহাদি কার্যকলাপ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে মিজান। এক গোয়েন্দা কর্তা বলেন, “কিন্তু ভারতে একটি বাংলাদেশি জিহাদি সংগঠনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন থেকে শুরু করে হুজি-বি সংগঠনের বিভিন্ন স্লিপার সেলের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছিল মিজান।” কিন্তু কেউই তাকে সাংগঠনিক ভাবে সাহায্যের আশ্বাস দেয়নি।
আর সেখান থেকেই বুদ্ধগয়াতে বড়সড় হামলার ছক কষে মিজান। এক গোয়েন্দা কর্তা ব্যাখ্যা করেন, “হামলার কারণ দু’টি। প্রথমত, হামলা করলে তার সংগঠন সারা ভারতে নজরে আসবে। জিহাদি মনোভাবাপন্ন মানুষদের কাছে তার সংগঠনের গুরুত্ব বাড়বে। দ্বিতীয়ত, দলাই লামার সফরের সময়ে এই হামলা রোহিঙ্গা শরনার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা। গোটা ভারতে রোহিঙ্গা শরনার্থীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। তাদের সংগঠনে যুক্ত করা সহজ হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশেও শরণার্থী শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রভাব বাড়িয়ে ফের বাংলাদেশে নিজের সংগঠনকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা ছিল মিজানের।”
কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, এ রাজ্যে আট-দশটি মডিউল তৈরি করেছিল মিজান। প্রতিটি মডিউলে ১০-১২ জন সদস্য। এক এসটিএফ আধিকারিক বলেন, “সেই মডিউলগুলির সূত্র ধরেই বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণে জেএমবির হদিশ পাওয়া যায়। বুদ্ধ গয়াতে ব্যবহৃত সমস্ত আইইডি এ রাজ্যেই তৈরি করা হয়েছিল।” মিজান গ্রেফতার হওয়ার পর সেই সব মডিউলকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি অন্য কোনও জেএমবি নেতা এখানে গা-ঢাকা দিয়ে আছে কি না তা-ও দেখছেন গোয়েন্দারা।