কংগ্রেস আগেই অভিযোগ তুলেছিল। এ বার শিবসেনা।
শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত এ বার দলের মুখপত্র ‘সামনা’-য় সরাসরি অভিযোগ তুললেন, গোয়ায় তৃণমূলের উপস্থিতিতে লাভ হবে বিজেপিরই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে যখন বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, তখন তাঁর এই ধরনের অবস্থান মানায় না বলেও মন্তব্য করেছেন রাউত। গোয়ায় তৃণমূলের পক্ষে ঢেউ তোলার চেষ্টা হচ্ছে, তৃণমূল বিপুল পরিমাণে টাকা খরচ করছে বলে অভিযোগ করে সেই টাকার উৎস কী, তা নিয়েও রাউত প্রশ্ন তুলেছেন। বিশদে না গিয়ে শিবসেনা নেতা কটাক্ষের সুরে বলেছেন, ‘অনেকেই বলছে, এই টাকার উৎস অন্য কোথাও রয়েছে’!
গোয়ায় তৃণমূল সক্রিয় হওয়ার পরেই কংগ্রেস নেতৃত্ব এর পিছনে আসল উদ্দেশ্য কী, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। গত কয়েক মাসে গোয়ায় কংগ্রেসের একাধিক নেতা তৃণমূলে যোগ দেন। কংগ্রেসের অভিযোগ ছিল, তৃণমূল আসলে কংগ্রেসকে দুর্বল করে বিজেপির ফায়দা করে দিতে চাইছে। কিন্তু দু’দিন আগে তৃণমূলের গোয়ার ভারপ্রাপ্ত নেত্রী মহুয়া মৈত্র টুইট করে বিজেপিকে হারাতে কংগ্রেস-সহ সব দলকে সংযুক্ত করেন। তবে কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়, বিজেপিকে হারাতে কেউ যদি কংগ্রেসকে সমর্থন করতে চায়, তা হলে ‘না’ বলার কিছু নেই। ‘আনুষ্ঠানিক’ প্রস্তাব এলে বিবেচনা করা যাবে।
শিবসেনা কিছু দিন আগে মহারাষ্ট্রের মতো গোয়াতেও কংগ্রেস, শিবসেনা, এনসিপি-র জোটের কথা বলেছিল। রাউত নিজে গোয়ায় গিয়ে কংগ্রেস, এনসিপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ বার তিনি তৃণমূলকে নিশানা করায় নতুন করে গোয়ায় রাজনীতিতে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুম্বই সফরের সময় শিবসেনার তরফে আদিত্য ঠাকরে ও রাউত তৃণমূলনেত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তিনিই এ বার দলীয় মুখপত্রে লিখেছেন, কংগ্রেস-সহ অন্য দলের নির্ভরযোগ্য নয়, এমন নেতাদের তৃণমূল নিজের দলে নিয়ে এসেছে। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্যও তৃণমূলের সমালোচনা করে রাউত বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে এটা শোভা পায় না। তাঁর মন্তব্য, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপির লক্ষ্য, কংগ্রেসের অস্তিত্ব মুছে ফেলা, সেটা বোঝা যায়। কিন্তু মমতারও একই লক্ষ্য হলে সেটা তাঁর ভাবমূর্তির সঙ্গে খাপ খায় না।” তবে গত বিধানসভায় সবথেকে বেশি আসন জিতেও কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা ১৭ থেকে দুইয়ে নেমে আসার পিছনে দুর্বল নেতৃত্বও অন্যতম কারণ বলে রাউতের মত। তাঁর বক্তব্য, বিজেপির পক্ষেও ফের গোয়ায় জেতা সহজ হবে না। কিন্তু তৃণমূল ও আম আদমি পার্টি বিজেপিকে সাহায্য করতে কংগ্রেসের পথে বাধা তৈরি করছে। দুই দলই খ্রিস্টান ভোট ঝোলায় পুরতে চাইছে। কিন্তু খ্রিস্টানরা কংগ্রেসকেই ভোট দেবেন।
শিবসেনার সমালোচনা নিয়ে গোয়ায় তৃণমূলের সহ-ভারপ্রাপ্ত সুস্মিতা দেবের বক্তব্য, এ সবই আসলে ভোটের হাওয়া। পাশের রাষ্ট্র মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট রয়েছে বলে শিবসেনা গোয়াতেও সেই জোটধর্ম পালন করতে চাইছে। রাউত অবশ্য তৃণমূলের পাশাপাশি বিজেপিকেও নিশানা করেছেন। তাঁর অভিযোগ, ড্রাগের কারবারে জড়িতরা বিজেপিতে ঢুকছে। বিজেপি তাদের স্বাগত জানাচ্ছে। বিজেপি নেতাদের পাল্টা মন্তব্য, শিবসেনা গোয়া নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে মহারাষ্ট্রের বাইরে একটি আসনও দিততে পারেনি কেন, তা নিয়ে মাথা ঘামাক।
কংগ্রেস, শিবসেনা দু’দলই বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের গোপন আঁতাতের দিকে ইঙ্গিত করলেও বিজেপির অমিত মালব্য, শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতারা আবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের দাবি, তৃণমূল গোয়ার বাইরে থেকে লোক নিয়ে গিয়ে টাকা দিয়ে দলের কাজকর্ম করাচ্ছে। গোয়ায় ভূমিপুত্রদের তৃণমূলের হয়ে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে না।