ফাইল চিত্র।
সব বিরোধী দলই তিন কৃষি আইনের প্রবল বিরোধিতা করছে। তৃণমূলও। কিন্তু লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সংসদীয় স্থায়ী কমিটি মত দিল, তিন কৃষি আইনের অন্যতম অত্যাবশ্যক পণ্য সংশোধনী আইন কার্যকর হলে চাষিদের আয় বাড়বে। কৃষি ক্ষেত্রে লগ্নির পরিবেশ তৈরি হবে। কৃষি পণ্য বিপণনে প্রতিযোগিতা বাড়বে। তাই এই আইনের প্রতিটি ধারা কার্যকর করা উচিত বলে কমিটির মত।
সুদীপবাবুর নেতৃত্বাধীন এই খাদ্য, গণবন্টন ও উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটিতে কংগ্রেস, আপ, শিবসেনা, এনসিপি-র সাংসদরা রয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই শুক্রবার সংসদে এই রিপোর্ট পেশের পরে সব বিরোধী দলই অস্বস্তিতে পড়েছে। কৃষক সংগঠনগুলি এর নিন্দা করে প্রশ্ন তুলেছে, কেন রাজনৈতিক ভাবে কৃষি আইনের বিরোধিতা করা কংগ্রেস, এনসিপি, শিবসেনা সংসদীয় কমিটিতে তার পক্ষে সায় দিচ্ছে?
রিপোর্টটি বৃহস্পতিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গৃহীত হয়। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে ব্যস্ত সুদীপ সে দিনের বৈঠকে ছিলেন না। তাঁর বদলে বিজেপির অজয় মিশ্র তেনি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যই ছিলেন বিজেপির। তৃণমূলের কেউ বৈঠকে না-থাকলেও, কংগ্রেস, এনসিপি, শিবসেনা, আপ সাংসদরা ছিলেন। কিন্তু কেউই আপত্তি জানিয়ে ‘ডিসেন্ট নোট’ দেননি।
তবে সংসদে রিপোর্ট পেশের পরে আজ কংগ্রেসের সাংসদ সপ্তগিরি উলাকা ও রাজমোহন উন্নিথান এই রিপোর্টে আপত্তি তুলেছেন। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি দিয়ে সপ্তগিরি জানিয়েছেন, রিপোর্ট গৃহীত হওয়ার সময় তিনি বৈঠকে ছিলেন ঠিকই। কিন্তু খুব কম সময়ের নোটিসে বৈঠক ডাকায় তিনি খসড়া রিপোর্ট পড়ার সময় পাননি। তার আগেই কৃষি আইনের বিরুদ্ধে তিনি কমিটিতে নিজের আপত্তি জানিয়েছিলেন। কমিটিতে কোনও কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিকেও ডাকা হয়নি। তাঁর মতে, এই ভাবে রিপোর্ট তৈরি করে পেশ করা সংসদীয় গণতন্ত্র ও রীতি-নীতির বিরুদ্ধে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী এ দিন ফের টুইট করেছেন কৃষি আইন তিনটির বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রীর ৫৬ ইঞ্চি ছাতির প্রসঙ্গ টেনে লিখেছেন, “কৃষি বিরোধী সরকারকে তিনটি আইনই ফেরত নিতে হবে। ৫৬ তো দূর, আমরা এক ইঞ্চিও পিছু হটব না।” তৃণমূল কংগ্রেসের ডেরেক ও’ব্রায়েনের অভিযোগ, ‘‘পিছনের দরজা দিয়ে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। কমিটির চেয়ারম্যান যখন নির্বাচনের জন্য কলকাতায় ব্যস্ত, তখন সংসদীয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রতারণা করে এই রিপোর্ট গৃহীত হয়েছে।’’ তৃণমূল নেতৃত্ব এই যুক্তি দিলেও আজ সর্বভারতীয় কৃষক সভা সংসদীয় রিপোর্টের নিন্দা করে বলেছে, এই রিপোর্ট তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী কৃষক সংগঠনের অপমান। কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা বলেন, ‘‘তৃণমূল দাবি করে তারা কৃষি আইনের বিরুদ্ধে। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় প্রস্তাবও পাশ করেছে। কী ভাবে তৃণমূল সাংসদের নেতৃত্বাধীন কমিটি চাষিদের ধোঁকা দিয়ে এই রিপোর্ট দিল, তৃণমূলকে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠকে হাজির ছিলেন না বলে তৃণমূল এর দায় এড়াতে পারে না।’’ কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দলের সাংসদদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
মোদী সরকার অত্যাবশ্যক পণ্য আইনে সংশোধন করে কর্পোরেট সংস্থা, ব্যবসায়ীদের যত ইচ্ছে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, গম, ভোজ্য তেল, তৈলবীজ মজুত করার ছাড়পত্র দিয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, পচনশীল খাদ্যপণ্য বা শাকসবজির দাম স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ হলে তবেই সরকার নাক গলাবে। পচনশীল নয়, যেমন চাল-ডালের ক্ষেত্রে দেড়গুণ দাম বৃদ্ধি হলে, তবেই তা অস্বাভাবিক বলে ধরা হবে ও সরকার হস্তক্ষেপ করবে। স্থায়ী কমিটির মতে, এই আইনের ফলে কৃষি ক্ষেত্রে লগ্নির পরিবেশ তৈরি হবে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে রিপোর্ট গৃহীত হয়েছে বলে মেনে নিলেও সুদীপবাবুর যুক্তি, পুরো রিপোর্টটাই সার্বিক ভাবে পড়া দরকার। রিপোর্টে অত্যাবশ্যক পণ্যের দামের উপরে সরকারকে নজর রাখতেও বলা হয়েছে।