Mamata Banerjee

তৃণমূলই সরকার গড়বে মেঘালয়ে, জনসভায় মমতা

ধবার উত্তর গারো পাহাড়ের মেন্দিপাথারে ডিলমা এ পাল উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের সামনের তৃণমূলের জনসভায় আচ্ছাদনের ভিতরের সব আসন বেলা ১২টার মধ্যেই শেষ।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

মেন্দিপাথার (মেঘালয়) শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:৩২
Share:

মেঘালয়ের মেন্দিপাথারের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

মেঘালয়ের নেতারা যখন তৃণমূল কংগ্রেসকে পশ্চিমবঙ্গের দল বলে প্রচার করছে, সে রাজ্যে পা দিয়ে বিজেপি-জোট সরকারকেই তখন সেই অভিযোগে বিদ্ধ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেত্রী এ দিন দাবি করেন, তাঁদের দলই আদতে মেঘালয়ের ভূমিপুত্রদের দল। মেন্দিপাথারের জনসভায় মমতা বলেন, “এখানে অসমে বসে থাকা ডিফ্যাক্টো প্রধানমন্ত্রীর দিল্লির নির্দেশ মেনে উত্তর-পূর্ব শাসনের দিন শেষ করুন। মাতৃভূমিকে ভালবাসুন। সরকারে বহিরাগতের জায়গা নেই। শাসন থাকবে ভূমিপুত্রদের হাতে।” ডিফ্যাক্টো প্রধানমন্ত্রী বলে মমতা যে হিমন্তবিশ্ব শর্মাকেই নিশানা করেছেন, সন্দেহ নেই। যে ভাবে শর্মা উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যের কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করছেন বলে অভিযোগ, তা নিয়ে ক্ষোভ যথেষ্ট। এ দিন সেই বিষয়টিই উস্কে দিলেন মমতা।

Advertisement

তৃণমূলকে ভূমিপুত্র প্রমাণে মমতা মেন্দিপাথারের জনসভায় ভাষণের শুরুতে খাসি ও গারো ভাষায় সম্বোধনের পরে বলেন, “পরের বার আপনাদের স্থানীয় ভাষা শিখে আসব।” বঙ্গের বিভিন্ন উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে তিনি বলেন, এখানকার সরকার আগে ৫ বছরের রিপোর্ট কার্ড দেখাক।

মেঘালয়ের শাসক দল এনপিপি-র প্রার্থী ঘোষণার জনসভায় বড় জোর হাজার পাঁচেক লোক হয়েছিল। পাহাড়ে বড় মিটিং মানে ২-৩ হাজার মানুষ। আর মেঘালয়ের সমতলের বড় মিটিংয়ে ৫ হাজার লোক হলেই তা ‘হিট’। কিন্তু বুধবার উত্তর গারো পাহাড়ের মেন্দিপাথারে ডিলমা এ পাল উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের সামনের তৃণমূলের জনসভায় আচ্ছাদনের ভিতরের সব আসন বেলা ১২টার মধ্যেই শেষ। ভিড় যদি জনপ্রিয়তার প্রমাণ হয়, তবে বুধ-দুপুরের হাজার দশেক মানুষের ভিড় মমতাকে আশাবাদী করতেই পারে।

Advertisement

তিনি ছাত্রাবস্থায় ও কংগ্রেসে থাকার সময়ে বামেদের সঙ্গে লড়াইয়ের কথা টেনে বলেন, “এখানকার ভাইবোনেরা কল্পনা করতে পারবেন না কী অত্যাচার আমায় সইতে হয়েছে। আমার সারা দেহ ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। কিন্তু আমি নত হইনি।” মমতা দাবি করেন, বামেদের সঙ্গে লড়াইয়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব পর্যাপ্ত সাহায্য না-করাতেই তাঁকে দল ছাড়তে হয়েছিল। মমতার পাশাপাশি এ দিন কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন অভিষেক বন্দ্য‌োপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “বিজেপি-এনপিপির সঙ্গে লড়তে হলে একমাত্র বিকল্প তৃণমূল। কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া মানে বিজেপিকেই ভোট দেওয়া।” কলকাতায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এ দিন বলেন, “মেঘালয়ে গিয়ে মোদী ও অভিষেক এক সুরে বলছেন, কংগ্রেসকে ভোট দেবেন না। তৃণমূল বিজেপির কাছ থেকে সুপারি খেয়ে বসে আছে!” বিজেপি-তৃণমূল জোটের কথা বলেছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, “মেঘালয়ে গিয়ে পিসি-ভাইপো ধরা পড়ে গেলেন! এক জন বলছেন, কংগ্রেস ছাড়া যাকে খুশি ভোট দাও। আর এক জন বলছেন, কংগ্রেসকে সমর্থন করা মানে বিজেপিকেই সমর্থন করা।”

ভাষণের শেষ দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার পাশাপাশি স্থানীয় ভাষাতেও ‘খেলা হবে’ স্লোগান তোলেন। বললেন, “এই অকর্মণ্য সরকারকে বদলাতে তৃণমূলই একমাত্র বিকল্প। পরের বার মেঘালয়ে তৃণমূল সরকারের শপথ গ্রহণে আসব।” উত্তর-পূর্বের সব রাজ্য ঘুরেছেন বলতে গিয়ে মমতা বলে ফেলেন, “উত্তর-পূর্বের সব দেশ ঘুরেছি।” তৃণমূলের ‘উই’ ও ‘মাই’ কার্ডকে ‘ধারবাকির কার্ড’ বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা। মমতা বলেন, “আমরা সরকার গড়ার ১০০ দিনের মধ্যে ওই দুই প্রকল্প রূপায়ণ করব।” রাজ্যের শাসক দল এনপিপি সেই ঘোষণার সমালোচনা করে বলেছে, বাংলার লক্ষ্মীর ভান্ডারের নাম বদলে মেঘালয়ের মানুষকে বোকা বানাতে চাইছেন মমতা। বাংলায় এই প্রকল্পের জন্য রাজ্যকে ৮০-৯০ হাজার কোটি টাকার ঋণের বোঝা বইতে হচ্ছে। যার অর্থ মাথাপিছু ঋণ ৫৯ হাজার টাকা। মেঘালয়ের মানুষকে তৃণমূলের ঋণের ফাঁদে পা দিতে দেবে না এনপিপি। এনপিপির দাবি, তৃণমূল দাবি মতো মাই কার্ড ও উই কার্ড গ্রাহকদের মাসে হাজার টাকা করে দিলে রাজ্যের তহবিল থেকে ২০০০ কোটি টাকা খরচ হবে, যা রাজ্যের মোট খরচের অর্ধেক। ফলে রাজ্যের অন্য উন্নয়ন স্তব্ধ হতে বাধ্য। কর্মীরা বেতনও পাবেন না।

উত্তর-পূর্বে তৃণমূলের ইতিহাস নড়বড়ে। অরুণাচলে প্রথম লড়তে নেমেই ৫টি আসন এবং মণিপুরে ৭টি আসন পেয়েও বিধায়ক ধরে রাখতে পারেনি তারা। মেঘালয়ে ১২ জন বিধায়ককে নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও ৪ জন দল ছেড়েছেন ভোটের আগেই। আজও মমতা যখন মেঘালয়ে, তৃণমূল ছেড়ে ইউডিপি-তে নাম লেখালেন বিধায়ক সিটলাং পালে। এ নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে মমতা বলেন, “বিজেপি বরাবরই টাকার জোরে গণতন্ত্রকে নষ্ট করতে চায়। তারা কেন্দ্রীয় সংস্থা ব্যবহার করে, ভয় দেখায়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement