Rahul Gandhi

Rahul Gandhi: এই আছি এই নেই, তৃণমূলর অ্যালার্জি কি রাহুলে

দলীয় নির্দেশে রাহুলের সঙ্গে না গিয়ে একই আন্দোলনস্থলে গিয়েছিলেন তিন তৃণমূল সাংসদ দোলা সেন, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অপরূপা পোদ্দার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২১ ০৬:৫২
Share:

অন্য বিরোধী দলগুলির নেতাদের সঙ্গে শুক্রবার দিল্লির যন্তরমন্তরে কৃষকদের সমাবেশে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই।

রাহুল গাঁধীকে নিয়ে কি তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের কোনও অস্বস্তি রয়েছে?

সনিয়া গাঁধী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকের পরেও গত দশ দিনে তৃণমূল এবং কংগ্রেসের সম্পর্কে মেঘ-রৌদ্রের খেলা। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, রাহুলকে সংসদের ভিতরে ও বাইরে কিছুটা এড়িয়ে চলার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্বের। এই পরিস্থিতিতেই অ্যালার্জির প্রশ্নটি উঠেছে রাজধানীতে।

Advertisement

সূত্রের মতে, তৃণমূলের এই ‘রাহুল-বিতৃষ্ণা’র উদাহরণ অনেক। যেমন আজ যন্তরমন্তরে আয়োজিত কিসান সংসদে দুপুর একটার সময়ে বিরোধী দলের নেতারা গেলেন সমর্থন জানাতে। রাহুল গাঁধী সেখানে মধ্যমণি। সঙ্গে গেল আরজেডি, আপ, অকালি, শিবসেনা, ডিএমকে, এসপি-সহ তেরোটি বিরোধী দল। কিন্তু এক মাত্র তৃণমূল সেখানে অনুপস্থিত।

দলীয় নির্দেশে রাহুলের সঙ্গে না গিয়ে সকালে দশটা নাগাদ ওই একই আন্দোলনস্থলে গিয়েছিলেন তিন তৃণমূল সাংসদ দোলা সেন, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অপরূপা পোদ্দার। যেখানে সব বিরোধী এক হয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করার স্বপ্ন দেখছে, সেখানে ‘এই একলা চলো রে’ কেন? তৃণমূলের জবাব, এই কর্মসূচি অনেক আগেই স্থির হয়ে গিয়েছিল। কংগ্রেস তখন তাদের সঙ্গে কোনও কথা বলেনি। তাই সকালে পূর্বনির্ধারিত সময়েই তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁদের সাংসদদের পাঠিয়েছেন যন্তরমন্তরে।

Advertisement

গত কাল রাজ্যসভার নেতা তথা কংগ্রেস সাংসদ মল্লিকার্জুন খড়্গে ৬ জন সাংসদের সাসপেনশন এবং কাচ ভাঙার ঘটনা নিয়ে সংসদের ভিতরে ও বাইরে তৃণমূলের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। খড়্গের এই সক্রিয়তার প্রশংসা করে তৃণমূল সাংসদেরা বলেছিলেন, বিরোধী ঐক্যের জন্য এ বড় সুসংবাদ। কিন্তু সেই খড়্গেই যখন আজ সকালে বিরোধী দলগুলির বৈঠক ডাকেন, তাতে অনুপস্থিত থাকলেন তৃণমূলের লোকসভা বা রাজ্যসভার নেতা অথবা মুখ্যসচেতক। পাঠানো হল নাদিমুল হক আর সাজদা আহমেদকে। প্রশ্ন উঠছে, খড়্গের ডাকা ওই বৈঠকে রাহুল গাঁধী ছিলেন বলেই কি তৃণমূল কম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিদের পাঠাল? দলের রাজ্যসভার মুখ্যসচেতক সুখেন্দুশেখর রায়কে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “সব বৈঠকেই যে সংসদীয় দলের নেতাদের যেতে হবে, এমন কোনও কথা নেই। তা ছাড়া নাদিমুল হক আর সাজদা কম গুরুত্বপূর্ণ নন।” আলাদা করে যন্তরমন্তরে কৃষক মঞ্চে যাওয়ার প্রসঙ্গটি নিয়ে সুখেন্দুশেখরের ব্যাখ্যা, “শুক্রবার সকালে আমরা যাব, এটা আগেই স্থির ছিল। কংগ্রেসের আজ ঘুম ভেঙেছে।”

শুধু আজকের ঘটনাই নয়। রাজনৈতিক সূত্র বলছে, এর আগে রাহুলের ডাকা বিরোধী দলের বৈঠক বয়কট করেছে তৃণমূল। সম্প্রতি কনস্টিটিউশন ক্লাবে রাহুলের ডাকা প্রাতরাশ বৈঠকেও তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা বা মুখ্যসচেতককে পাঠানো হয়নি।

তৃণমূল সূত্র ঘরোয়া ভাবে জানাচ্ছে, দল মনে করে রাহুল গাঁধী নিছকই এক জন সাংসদ মাত্র, কোনও দলের নেতা নন। তিনি সমস্ত বিরোধী দলকে ডেকে নিজস্ব প্রচার ও প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। সেটা তাঁর দলের জন্য ঠিকই আছে। কিন্তু তৃণমূলের পদস্থ সাংসদরা কেন তাতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন? যদি বিজেপি বিরোধিতার মঞ্চ তৈরি করতেই হয়, তা হলে সমস্ত বিরোধী দলের নেতা বৈঠকে বসুন। এমনটাও তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, পেগাসাস থেকে কৃষি আইন, কোভিড মোকাবিলায় ব্যর্থতা থেকে পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি— সব বিষয়েই রাহুল গাঁধী প্রচারের ক্ষীরটুকু খেতে চান। তাঁদের দাবি— পশ্চিমবঙ্গে বিরাট জয়ের পরে তৃণমূল জাতীয় রাজনীতিতে এখন কার্যত সব চেয়ে বড় মোদী-বিরোধী মুখ। সেই জায়গাটিকে রাহুলের মতো নেতার কাছে ছেড়ে দেওয়ার কারণই নেই। এক ধাপ এগিয়ে তৃণমূলের এক নেতা এই প্রশ্নও তুলেছেন, “রাজনীতিতে আসার পরে রাহুলের ব্যাটে রান কোথায়? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন আজ তাঁর হাতে নেতৃত্বের রাশ তুলে দেবেন?”

সিপিএমের অবশ্য দীর্ঘদিনের অভিযোগ, দিদি-মোদী আঁতাঁতের। এখন রাজ্যের বিরোধীরা বলছেন, তৃণমূল নেত্রীর বাধ্যবাধকতা রয়েছে সময়ের মধ্যে রাজ্যে উপনির্বাচন করিয়ে আনার, যেখানে তাঁর নিজের হার-জিতের বিষয় রয়েছে। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী উপনির্বাচন করানো নিয়ে আপত্তি তুলছেন। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বন্যার জন্য জলাধার থেকে জল ছাড়াকে দায়ী করেছেন। এর আগে রাজ্য এমন অভিযোগ তুললে কেন্দ্র পাল্টা জবাব দিত। কিন্তু এই প্রথম প্রধানমন্ত্রীকে মমতার অভিযোগ খণ্ডন না করে, কার্যত সমর্থন করতেই দেখা গিয়েছে।

তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য বরাবরই এই অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে এসেছে। কংগ্রেস তথা রাহুলের সঙ্গে দূরত্ব রচনা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, “আমরা তো কোনও বিরোধী জোট তৈরি করিনি। একই রকম রাজনৈতিক কর্মসূচি করার বাধ্যবাধকতা তো নেই! বরং সবাই মিলে মোদী সরকারকে হটানোর জন্য নিজেদের মধ্যে সার্বিক একটা ঐকমত্যে আসার চেষ্টা করছি— এটাই এই মুহূর্তে বিরোধী রাজনীতিতে বড় সাফল্য।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement