রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় অশোধিত তেল কিনে আসলে লাভটা হচ্ছে কার? এমন প্রশ্ন তুললেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা প্রাক্তন আমলা জহর সরকার। প্রতীকী ছবি।
রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় অশোধিত তেল কিনে আসলে লাভটা হচ্ছে কার? আজ এই প্রশ্নটি তুলে পত্রবোমা ফাটালেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা প্রাক্তন আমলা জহর সরকার।
এক মাস আগে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রককে চিঠি লিখে জবাব পাননি। এ বার সরাসরি বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে দু’পাতার চিঠি লিখে তাঁর প্রশ্ন, সস্তায় রাশিয়া থেকে তেল কিনে এবং সেটা চড়া দামে বিদেশ রফতানি করে কোন কোন ভারতীয় বাণিজ্য সংস্থার লাভ হল? ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে বহু দেশকে (আমেরিকা তথা পশ্চিম) রুষ্ট করে ভারত যে কূটনীতি নিয়ে চলছে, তাতে এই বাণিজ্য সংস্থাগুলিই কি আসল সুবিধাভোগী? জহরের যুক্তি, যে দেশগুলিকে রুষ্ট করা হচ্ছে, তারা তো এর পর চিনের খাঁড়ার সামনে পাশে দাঁড়াবে না।
জহর নিজে কোনও বাণিজ্য সংস্থা বা কর্তার নাম উল্লেখ করেননি চিঠিতে। কিন্তু তাঁর ইঙ্গিত অত্যন্ত স্পষ্ট। গোড়াতেই তিনি আদানি গোষ্ঠীর নাম উল্লেখ করে বাংলাদেশে তাদের চড়া দামে বিদ্যুত সরবরাহের কথা উল্লেখ করেছেন। এর পর বিদেশমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, আদানির ওই কারখানা থেকে ঢাকাকে রফতানি করার জন্য আগে চড়া দামে কয়লা আমদানি করছিল তারা। এখন তা কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপে কমানো হয়েছে।
এর পরই তাঁর বক্তব্য, ‘গুজরাতের দু’টি বেসরকারি তেল শোধনাগার সংস্থা ব্যাপক লাভ করছে রাশিয়া থেকে সস্তায় পাওয়া তেল বিদেশে চড়া দামে রফতানি করে।’ তাঁর দাবি, বিদেশমন্ত্রীর উচিত সমস্ত বিষয়টি স্পষ্ট করা। কারণ, বিদেশ মন্ত্রকের বদান্যতায় এই সংস্থাগুলি খুব কম দামে অশোধিত তেল পাচ্ছে এবং অভূতপূর্ব লাভের মুখ দেখছে। অথচ দেশবাসীর ঘাড় থেকে পেট্রল-ডিজেলের মূল্যের বোঝা কমছে না।
সম্প্রতি ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ) নামে ফিনল্যান্ডের একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্কের প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ভারত রাশিয়া থেকে ঝেঁটিয়ে তেল কিনছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্য কিছু দেশকে বিক্রি করার জন্য। এই রিপোর্টের বক্তব্য নিয়েও রা কাড়েনি মোদী সরকার। জয়শঙ্করকে লেখা চিঠিতে এই বিষয়টিরও উল্লেখ করেছেন জহর। আমেরিকা এবং চিনের পরে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেলের গ্রাহক। ভারত তার চাহিদার ৮৫ শতাংশ জ্বালানি তেল অন্য দেশ থেকে আমদানি করে। আগে দেশের প্রধান অপরিশোধিত তেলের সরবরাহকারী ছিল পশ্চিম এশিয়া। গত এক বছরে রাশিয়া ভারতের এক নম্বর অপরিশোধিত তেলের সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য থেকে মস্কো যত বিচ্ছিন্ন হয়েছে, ভারত এবং চিনের সঙ্গে তাদের তেল-বাণিজ্য ততই বেড়েছে।