যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্তকেই অর্থহীন বলল তৃণমূল। প্রতীকী ছবি।
সংসদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বের আগে আদানি-কাণ্ডের তদন্ত ঘিরে বিরোধী দলগুলির মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠল। যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি) মাধ্যমে তদন্তের দাবি করেছে কংগ্রেস। সেই দাবিতে তারা অধিবেশনে ঝড় তুলবে বলে পরিকল্পনা করেছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে বেশির ভাগ বিরোধী দল। কিন্তু কংগ্রেস এবং বিভিন্ন রাজ্যে তাদের শরিক দলের বিপরীত মেরুতে গিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব আজ যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্তকেই অর্থহীন বলে তুলে ধরেছে। অতীতের উদাহরণ তুলে ধরে তাদের বক্তব্য, এই কমিটির তদন্ত নিরপেক্ষ হতে পারে না। স্পিকার এই কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে সবচেয়ে বড় দল অর্থাৎ শাসক দলের সাংসদ বা মন্ত্রীকে বাছবেন। নিরপেক্ষতার সম্ভাবনা সেখানেই অঙ্কুরে বিনষ্ট হবে।
চার দিন আগে আদানি-কাণ্ডের তদন্তে সুপ্রিম কোর্ট বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে ঠিকই কিন্তু এই কমিটিকে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণা ও শেয়ার দরে কারচুপির অভিযোগের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়নি। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বলেছে, সে বিষয়ে শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি যেমন তদন্ত করার করবে। সুপ্রিম কোর্ট কমিটিকে পরিস্থিতির সামগ্রিক পর্যালোচনা, সম্প্রতি শেয়ার বাজারে ওঠানামার কারণ এবং লগ্নিকারীদের সচেতনতা বাড়ানোর পদক্ষেপ খতিয়ে দেখতে বলেছে।
প্রশ্ন হল, এর ফলে আদানি গোষ্ঠীর তদন্ত কিন্তু সরাসরি সর্বোচ্চ আদালতের কমিটির হাতে থাকছে না, যাচ্ছে সেবি-র হাতেই। তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন আজ বলেন, “অবশ্যই এটা আদর্শ সমাধান হল না। কিন্তু জেপিসি-র তুলনায় তা অনেক কার্যকর।” তিনি উল্লেখ করেন, “খুবই বিরল ঘটনা হলেও এটা সত্যি যে এই একটা বিষয়ে বাম এবং তৃণমূল একই মতামত পোষণ করে। উভয় পক্ষই চেয়েছিল জেপিসি নয়, সুপ্রিম কোর্টের নিয়োজিত কমিটি।” ডেরেকের বক্তব্য, “তিনটি কারণে জেপিসি-র তদন্তকে অর্থহীন বলে মনে করছে তৃণমূল। প্রথমত, জেপিসি-র চেয়ারম্যান হবে সবচেয়ে বড় দল বিজেপির থেকে। কমিটিতেও দলীয় ক্ষমতা অনুযায়ী সদস্য সংখ্যা থাকবে। অর্থাৎ বিজেপি সাংসদদের প্রাধান্য থাকবে। দুই, অতীতের বেশির ভাগ জেপিসি-র ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, চূড়ান্ত রিপোর্টে কখনও ঐকমত্য হয় না। বিরোধী সাংসদদের আনা সংশোধনী মানা হয় না, কারণ তাঁরা কমিটিতে সংখ্যালঘু। রিপোর্টটিতে সংসদের ট্রেজারি বেঞ্চের সিলমোহর লাগিয়ে দেওয়া হয়। তৃতীয়ত, ৮৭-র বফর্স মামলা বা ৯২-এর হর্ষদ মেহতা কেলেঙ্কারি, কোনও ক্ষেত্রেই জেপিসি-র রিপোর্ট গ্রহণ করা হয়নি।” কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের বক্তব্য, ‘‘সরকার এবং বাণিজ্য সংস্থার মধ্যে সংযোগকে তুলে ধরতে হলে জেপিসি-ই সবচেয়ে ভাল উপায়। জেপিসি-র হাতে ক্ষমতা রয়েছে বিষয়টি সামনে আনার। হর্ষদ মেহতা কেলেঙ্কারির সময় জেপিসি অনেক তথ্য বার করতে পেরেছিল।’’