সুখেন্দুশেখর রায়।
‘তৃণমূল কারও নিমন্ত্রণ বা ডাক পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে বসে নেই’।
মঙ্গলবার সনিয়া গাঁধীর ডাকা বিরোধীদের বৈঠকে তৃণমূল বাদ পড়ার প্রসঙ্গে আজ দিল্লিতে তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্যসচেতক সুখেন্দুশেখর রায় এ ভাবেই তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, “কংগ্রেসের বিরোধী ভূমিকা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে তারা সিপিএমের সঙ্গে জোট গড়ে কার্যত বিজেপির হাত শক্ত করতে চেয়েছিল। আমাদের প্রত্যেক দিন আক্রমণ করেছে। তা সত্ত্বেও দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যথেষ্ট সৌজন্য দেখিয়ে দিল্লিতে এসে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তার পর চার মাস কংগ্রেস ঘুমিয়ে ছিল।”
চলতি শীতকালীন অধিবেশনে কংগ্রেসের সঙ্গে খোলাখুলি সংঘাতে যেতে দেখা যাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে। ১২ জন রাজ্যসভার সাংসদকে সাসপেন্ড করার প্রতিবাদ নিয়ে বিরোধী ঐক্যের ছবি তৈরি হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তার মধ্যেও চলছে তৃণমূল এবং কংগ্রেসের মধ্যে চোরাস্রোত। গত কাল সনিয়ার ডাকা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শিবসেনা, ডিএমকে, এনসিপি-র নেতারা। সূত্রের খবর, সনিয়া জানিয়েছেন, তৃণমূলকে বিরোধী বৈঠকে ডাকা নিয়ে দলের একটা অংশের (রাহুল গাঁধী) আপত্তি রয়েছে। এই খবর বাইরে আসার পরই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তৃণমূল।
অন্য দিকে, কংগ্রেসের সাংসদ মানিকম টেগোর আজ বলেছেন, “কংগ্রেস সমস্ত বিরোধী দলকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসছে। চোদ্দোটি বিরোধী দল অধিবেশন কক্ষে আমাদের সঙ্গে রয়েছে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার ব্যাপারে আমরা আত্মবিশ্বাসী। আমরা দেখতে পাচ্ছি তৃণমূল হতাশাগ্রস্ত, কারণ কেউ আর তাদের সঙ্গে নেই। সবাই রয়েছে কংগ্রেসের সঙ্গে।”
তবে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের দাবি, অনেক বিরোধী দলই কংগ্রেসের সঙ্গে নেই। তিনি বলেছেন, “আমরা তো ওদের ডাকা বৈঠকে যাব না-ই, এসপি-ও যাবে না। আপ-এরও সমস্যা রয়েছে কংগ্রেসকে নিয়ে। টিআরএস শুরুতে সঙ্গে ছিল, আবার নিজেদের জায়গায় ফিরে গিয়েছে।”
ডেরেক গত কালই বলেছিলেন, তৃণমূলের তৈরি করা কৌশলের কৃতিত্ব কংগ্রেস নিজেরা নিতে চাইছে। তাঁর বক্তব্য, “আমরা যে হেতু কংগ্রেসের ঘরে বৈঠকে যাচ্ছি না, বাম এবং ডিএমকে-কে জানিয়ে দিয়েছিলাম ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাংসদদের সাসপেন্ড করার প্রতিবাদে ধর্না চালু রাখা হোক গাঁধীমূর্তির সামনে। ধর্না যত দীর্ঘ হবে ততই সরকারের উপর চাপ বাড়বে। কংগ্রেস কখনওই এত দিন ধরে আন্দোলন চালাতে উৎসাহী ছিল না। কিন্তু এই আন্দোলনে সব বিরোধী দলের যোগদান দেখে নড়ে বসে নিজেরা নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করছে। গত কাল কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপাল এই মর্মে টুইট করেও পরে মুছে দেন।”
ডেরেকের রাজ্যসভার সতীর্থ সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, “রাজ্যসভায় অন্তত ৪টি বিল পাশের সময় কংগ্রেস অংশ নিয়েছে। আবার নিজেদের সুবিধামতো হঠাৎ হঠাৎ বিপ্লবী হয়ে ধর্না আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করছে।” সূত্রের খবর, কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ জয়রাম রমেশকে সুখেন্দুশেখরবাবু বলেছেন, কংগ্রেস নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ফলে তাদের হ্যাঁ-য়ে হ্যাঁ মেলানোর কোনও দায় তৃণমূলের নেই।