মেঘালয়ে ভোটপ্রচারে অনেকটাই সময় দিয়েছেন অভিষেক, মমতা। — ফাইল চিত্র।
উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যের ফলাফলে বৃহস্পতি তুঙ্গে হতে পারে তৃণমূলের। ত্রিপুরা বা নাগাল্যান্ডে দাগ কাটতে না পারলেও গোয়া নিয়ে ভাঙা স্বপ্ন পূরণ করে দিতে পারে মেঘালয়। আগে থেকেই বাঙালির প্রিয় পর্যটনের মানচিত্রে থাকা রাজ্য নিয়ে এমনিতে আশাবাদী ছিল তৃণমূল। আর সেই আশা অনেকটা বেড়ে গিয়েছে বুথফেরত সমীক্ষা প্রকাশ্যে আসার পরে। সব সমীক্ষাই বলছে, মেঘের দেশে নিছক পর্যটক হিসাবে থেকে যাবে না বাংলার শাসকদল। বরং, আগামী পাঁচ বছর মেঘালয় কারা শাসন করবে তাতে বড় ভূমিকা নেওয়ার শক্তি পেয়ে যেতে পারে তৃণমূল। এমনকি, ঠিক ঠিক সমর্থন জোগাড় করতে পারলে পৌঁছে যেতে পারে ক্ষমতার অলিন্দেও। এমনটা আন্দাজ করেই মেঘালয়ের প্রচারে অনেকটা সময় দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম দিকে ত্রিপুরা নিয়ে অনেক আশায় থাকা তৃণমূল এখন মেঘালয়ের দিকেই তাকিয়ে।
যে ক’টি বুথফেরত সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে তাতে সকলেই বলছে, দুই সংখ্যায় পৌঁছে যেতে পারে তৃণমূল। এমন সমীক্ষা যে সব সময় সঠিক কথা বলে তা-ও নয়। তবে অনেক সময়েই সমীক্ষার প্রতিফলন দেখা যায় ফলাফলে। সমীক্ষা বলছে, মেঘালয়ে তৃণমূল সবচেয়ে কম ৮টি আসন পেতে পারে। আর সর্বোচ্চ ১৪টি। অর্থাৎ, সমীক্ষার সমীক্ষা বলছে তৃণমূলের ১১ আসনে জয়ের সম্ভাবনা।
তৃণমূল যদি দুই সংখ্যায় সত্যিই পৌঁছে যায় তবে অনেক কিছুই হতে পারে। কারণ, এ বার মেঘালয়ের বিধানসভা নির্বাচনে কোনও জোট নেই। কংগ্রেস, বিজেপি সবাই একক শক্তিতে লড়ছে। এখন এনপিপি ও বিজেপি জোট সরকার চালালেও এ বার দুই দল আলাদা। বিভিন্ন বুথফেরত সমীক্ষার হিসাব বলছে, এনপিপি সর্বোচ্চ ২৬টি আসনে জিততে পারে। আর বিজেপির শক্তি ২ থেকে বেড়ে সর্বোচ্চ ১১ হওয়ার সম্ভাবনা। ফলে আপাতত ইঙ্গিত, মেঘালয়ের ফল ত্রিশঙ্কুর পথে। আর তাতেই দুই সংখ্যার বিধায়ক রাখতে পারলে তৃণমূল নির্ণায়ক শক্তি হয়ে যেতে পারে। ভোট পরবর্তী জোট সরকারের শরিক হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও রয়েছে। মেঘালয়ে অনেক ছোট ছোট দল রয়েছে যারা নির্দিষ্ট কিছু এলাকাতেই শক্তিশালী। তেমন দলগুলি যে কোনও জোটের পাল্লাই ভারী করে দিতে পারে।
কলকাতায় এসে সদলে তৃণমূলে যোগ দেন মুকুল সাংমা। — ফাইল চিত্র।
তৃণমূলের জন্য এমন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা। এ বার তিনি দু’টি আসন থেকে তৃণমূলের প্রার্থী। ১৯৯৮ থেকে টানা পাঁচ বার কংগ্রেসের টিকিটে বিধায়ক হয়েছেন মুকুল। ২০০৯ সালে রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী এবং ২০১০ সালে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। এখন তিনি বিরোধী দলনেতা। ২০২১ সালের নভেম্বরে ১১ জন বিধায়ক নিয়ে তিনি তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরেই বাংলার শাসকদল তৃণমূল মেঘালয়ে প্রধান বিরোধী দল।
মুকুলের এই দলবদলের ফলেই এ বার অনেকটা এগিয়ে থেকে লড়াইয়ে তৃণমূল। যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরা সকলেই যে তৃণমূলে রয়েছেন তা নয়। তবুও লড়াই এগিয়ে থেকেই। মেঘালয়ে গারো পার্বত্য এলাকাই আসল লড়াইয়ের ভূমি। সেখানকারই ভূমিপুত্র মুকুল। যাঁর বিরুদ্ধে প্রধান লড়াই তিনি, অর্থাৎ, মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমাও এই অঞ্চলেরই। মেঘালয়ের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী উইলিয়ামসন এ সাংমা থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত আট জন মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন এই এলাকা থেকে। মুকুল এবং কনরাডও রয়েছেন সেই তালিকায়। কনরাড তাঁর প্রচারে তৃণমূলকে ‘বহিরাগত’ বলে আক্রমণ করেছেন। কিন্তু তাঁর কাছে এটাই চিন্তার যে, তৃণমূল ‘বহিরাগত’ হলেও ‘ভূমিপুত্র’ মুকুলই সেই দলের মেঘালয়ের মুখ।
তৃণমূলের ভাগ্য নির্ভর করছে গারো পার্বত্য এলাকায় সাংমা বনাম সাংমা লড়াই কেমন হয় তার উপরে। রাজ্যের মোট ৬০টি আসনের মধ্যে ২৪টি রয়েছে এই এলাকায়। এক সাংমা (করনাড) বলছেন, ক্ষমতায় ফেরা শুধু সময়ের অপেক্ষা। অন্য দিকে, আর এক সাংমা (মুকুল) বলছেন, পরিবর্তন আসছেই। দাবি, গারো পাহাড়ে এ বার ঘাসফুল ফুটবেই ফুটবে।
মেঘালয়ে জোট সরকার নতুন কিছু নয়। ছোট দলের গুরুত্বও বেশি। ২০১৮ সালেই তেমন নজির দেখা গিয়ছে। ২০টি আসনে জিতেছিল এনপিপি। ইউডিপি, পিডিএফ, এইএসপিডিপি এবং বিজেপিকে নিয়ে সরকার গড়ে। এতগুলি দলের জোট সরকার নিয়ে পাঁচ বছর কাটিয়ে দেওয়া বড় কৃতিত্ব করনাডের। এ বার এনপিপি দাবি করছে, একাই ৩০-এর বেশি আসনে জয় পাবে। অন্য দিকে, পাঁচ বছর আগে রাজ্যে এক শতাংশেরও কম ভোট পাওয়া তৃণমূল ভাল ফলের কথাই ভাবছে। সেই ভাবায় অন্যায়ও নেই। কারণ, মেঘালয় সেই রাজ্যে বাংলার বাইরে যেখান থেকে লোকসভায় সাংসদ পেয়েছিল তৃণমূল। ২০০৪ সালে তুরা আসন থেকে জিতেছিলেন পি এ সাংমা।