তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটে বাংলায় শাসকদল তৃণমূল এবং কংগ্রেসের মধ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে টানাপড়েন চলছেই। সেই আবহে কংগ্রেসকে সরাসরি বিঁধলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অসমের উত্তর কাছাড় পাহাড় স্বায়ত্বশাসিত পর্ষদের (এনসিএইচএসি) নির্বাচনের ফলাফলকে সামনে রেখে ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদের কটাক্ষ, ‘‘ঘরের মাঠের জমিই আগলে রাখতে পারল না কংগ্রেস!’’ ঘটনাচক্রে, ওই ভোটে প্রথম বার লড়ে কংগ্রেসকেও ছাপিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। তা নিয়েও কংগ্রেসকে বিঁধতে ছাড়েননি অভিষেক।
এনসিএইচএসি ভোটে বড় জয় পেয়েছে বিজেপি। পর্ষদের মোট আসন সংখ্যা ৩০। দু’টি আসনের প্রার্থীরা মনোনীত হয়ে থাকেন। বাকি ২৮টি আসনে ভোট হয়। তার মধ্যে ছ’টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে বিজেপি। এ বার ভোট হয়েছে ২২টি আসনে। তার মধ্যে ১৯টিই দখল করেছে গেরুয়া শিবির। অন্য দিকে, কংগ্রেসে ২২টিতে লড়েও তাদের ঝুলি শূন্য। এই ভোটে প্রথম বার অংশগ্রহণ করেছিল বঙ্গের শাসকদল তৃণমূল। তারা ১১টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। কোনও আসনে জিততে না পারলেও ভোটের ফলাফলে দেখা গিয়েছে, ওই ১১টি আসনে মোট প্রাপ্ত ভোটের হারে কংগ্রেসের থেকে এগিয়ে তৃণমূল। তারা পেয়েছে ১২.৪০ শতাংশ ভোট। ওই ১১টি আসনের হিসাবে কংগ্রেস ৮.৮৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে। এ নিয়ে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিক কংগ্রেসকে কটাক্ষ করেছেন অভিষেক। যিনি ‘ইন্ডিয়া’-র সমন্বয় কমিটির অন্যতম সদস্যও বটে।
নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে তৃণমূল নেতা লিখেছেন, ‘‘প্রথম বার এনসিএইচএসি-র নির্বাচনে লড়াই করেও প্রাপ্ত ভোটের হারে কংগ্রেসকে ছাপিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। যেখানে কংগ্রেসই প্রধান বিরোধী দল।’’ যদিও ২২টি আসনের হিসাবে তৃণমূলের থেকে এগিয়ে কংগ্রেস। এই নির্বাচনে ইন্ডিয়া-র আর এক শরিক আপ (আম আদমি পার্টি)-ও অংশ নিয়েছিল। তারা মোট পাঁচটি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। তাদের ঝুলিও শূন্য।
গত বছর পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্য ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে বিজেপির সামনে মুখ থুবড়ে পড়েছিল কংগ্রেস। সেই সময় নাম না করে কংগ্রেসের ‘ভুল শুধরে’ নিতে বলেছিলেন অভিষেক। তার পর দিল্লিতে ইন্ডিয়ার বৈঠকের পর থেকেই বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের আসন নিয়ে দর কষাকষি শুরু হয়েছে। তা নিয়ে জোটের দুই শরিক দলের মধ্যে টানাপড়েনের আবহে এ বার সরাসরি কংগ্রেসকে আক্রমণ করলেন অভিষেক। এনসিএইচএসি-র ভোটের ফলাফলের একটি ছবি পোস্ট করে তৃণমূল সাংসদ লিখেছেন, ‘‘কেউ বলতেই পারেন যে, বাংলায় আসন নিয়ে এত আশা-আকাঙ্খার কথা বলেও ঘরের মাঠের জমিই আগলে রাখতে পারল না ওরা (কংগ্রেস)!’’
তৃণমূলের একাংশের মত, হিন্দিবলয়ে কংগ্রেস পর্যুদস্ত হওয়ার পরেও লোকসভার আগে বৃহত্তর জাতীয় রাজনীতির কথা মাথায় রেখেই সরাসরি আক্রমণের পথে না গিয়ে সেই সময় কংগ্রেসকে ‘পরামর্শ’ই দিয়েছিলেন অভিষেক। কারণ, তিনি জানেন, বাংলায় তৃণমূল কার্যত অপ্রতিরোধ্য হলেও সর্বভারতীয় স্তরে কংগ্রেসকে যেমন প্রয়োজন, তেমনই বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলকেও দরকার বিজেপি বিরোধী জোট সফল করার জন্য। কিন্তু বাংলায় আসন নিয়ে কংগ্রেস যে ভাবে দর কষাকষি শুরু করেছে, যে ভাবে কংগ্রেস নেতারা লাগাতার শাসকদলকে বিঁধে জোটের পরিবেশ নষ্ট করছেন, তাতে দলকেও সেই পথেই হাঁটতে হচ্ছে বলে মত শাসকদলের একাংশের।