আচমকা রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিলেন তৃণমূলের লুইজিনহো ফেলেইরো। ফাইল চিত্র।
জাতীয় দলের মর্যাদা হারানোর পর দিনই তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ লুইজিনহো ফেলেইরো রাজ্যসভা থেকে ইস্তফা দিলেন। তিনি উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারপার্সন জগদীপ ধনখড়ের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে আসেন। তার পরেই আনন্দবাজার অনলাইনকে টেলিফোনে ফেলেইরো বলেন, ‘‘রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে আমি স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিয়েছি।’’
২০২৬ সালে ফেলেইরোর সাংসদ পদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু বছর তিনেক আগেই কেন তিনি পদত্যাগ করলেন? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই। গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কি তৃণমূলও ছাড়তে চলেছেন? এই প্রশ্নের জবাব অবশ্য এড়িয়ে গেলেন ফেলেইরো। তাঁর সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘‘দেখা যাক।’’
জগদীপ ধনখড়ের কাছে ইস্তফা দিলেন ফেলেইরো। নিজস্ব চিত্র।
২০২১ সালের কংগ্রেস ছেড়ে ফেলেইরো নাম লেখান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে। ওই বছরই ১৫ সেপ্টেম্বর রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেন নাট্যব্যক্তিত্ব অর্পিতা ঘোষ। ২৯ সেপ্টেম্বর কলকাতায় এসে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে সদলবদলে তৃণমূলে যোগদান করেন ফেলেইরো। অর্পিতার শূন্য আসনে নভেম্বর মাসেই তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন তিনি। পাশাপাশি সর্বভারতীয় সংগঠনে তাঁকে সহ-সভাপতির পদ দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় জানানো হয়েছিল, রাজ্যসভার সাংসদ হলেও, গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফেলেইরো ভোটে লড়েননি। ২০২২ সালের গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করলেও ভাল ফল করতে পারেনি তৃণমূল। বর্তমানে গোয়া তৃণমূলের পর্যবেক্ষক পদে রয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ কীর্তি আজাদ। তৃণমূল সূত্রে খবর, ফেলেইরোর ইস্তফা প্রসঙ্গে কোনও খবর ছিল না তাঁর কাছেও।
ফেলেইরোর পদত্যাগের ফলে রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদের সংখ্যা কমে দাঁড়াল ১২-তে। যদিও এই আসনে উপনির্বাচন হলে, বিধানসভায় বিধায়ক সংখ্যার হিসাবে তা সহজেই জিতে নেওয়ার কথা তৃণমূলেরই।
ফেলেইরোর আচমকা পদত্যাগের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। কোনও কোনও মহলে প্রশ্ন উঠছে, অর্পিতার মতো কি তাঁকেও পদত্যাগ করতে নির্দেশ দিল তৃণমূল? না কি নিজে থেকেই ইস্তফা দিলেন তিনি? দিল্লিতে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, অসুস্থতার কারণেই রাজ্যসভার সাংসদ পদ ছেড়েছেন তিনি। ফেলেইরো যাঁর জায়গায় রাজ্যসভায় যান, সেই অর্পিতার আগে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংসদ চলাকালীন বক্তৃতা করে নিজের রাজ্যসভার সাংসদ পদ ছেড়েছিলেন তৃণমূলের আর এক সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী। তিনি অবশ্য তৃণমূলের সাংসদ পদ ছাড়ার পরেই যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গোয়ার বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ভরাডুবির পর থেকেই দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে শুরু করেছিল এই সদ্য পদত্যাগী এই নেতার। এমনকি গোয়া তৃণমূলের রাজ্য কমিটিতেও তাঁকে বা তাঁর অনুগামীদের জায়গা না হওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিলেন তিনি। পরবর্তী কালে তৃণমূলের কর্মসূচিতে আর সক্রিয় ভাবে দেখা যেত না ফেলেইরোকে।