রাজ্যসভার আলোচনায় বক্তৃতার ক্ষেত্রে অভিনব কৌশল নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। —ফাইল চিত্র।
সোমবার থেকে সংবিধানের উপর রাজ্যসভার আলোচনায় বক্তৃতার ক্ষেত্রে অভিনব কৌশল নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। সাধারণত এ ধরনের আলোচনায় দলের জন্য বরাদ্দ সময়ে দুই থেকে তিন জন সাংসদ বক্তৃতা করেন। সূত্রের খবর, এ বার রাজ্যসভার জন্য নতুন সিদ্ধান্ত, দলের ১০ অথবা ১১ জন সাংসদ বলবেন। প্রত্যেকের জন্য বরাদ্দ ৩ মিনিট।
সংসদের উচ্চ কক্ষে বাংলার শাসকদলের নয়া কৌশল হল, সংবিধানের প্রস্তাবনার এক একটি শব্দ ধরে ৩ মিনিট করে বলবেন এক এক জন সাংসদ। অর্থাৎ, কেউ বলবেন ‘সমাজতান্ত্রিক’, কেউ বলবেন ‘ধর্মনিরপেক্ষ’, কেউ বলবেন ‘গণতান্ত্রিক’এর মতো শব্দ নিয়ে। উদ্দেশ্য সংবিধান কী ভাবে বিপন্ন — তা তুলে ধরা। পাশাপাশি, পশ্চিমবঙ্গের বৈচিত্রময় বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, ভাষার প্রতিনিধিত্বের বার্তা দিতে চাইছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। বৈচিত্রের সমাহারে মানুষের সমস্যার কথা রাজ্যসভায় তুলে ধরতে চায় তৃণমূল।
গত কয়েক দিন ধরে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে আনা বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবের পর আদৌ সংবিধান নিয়ে এই কক্ষে আলোচনা হবে কিনা, তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছিল। ট্রেজ়ারি বেঞ্চ আমেরিকার ধনকুবের জর্জ সোরসের সঙ্গে গান্ধী পরিবারের স্বার্থের লেনদেনের কথা তুলে প্রতিদিনই সংসদ উত্তাল করছে।
অন্য দিকে, কংগ্রেস শিল্পপতি গৌতম আদানি এবং মোদীর যোগসাজসের কথা তুলে পাল্টা স্লোগান দিচ্ছে। পাশাপাশি, ধনখড় নিজে বাগ্যুদ্ধে জড়াচ্ছেন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের সঙ্গে। সব মিলিয়ে কতটা নির্বিঘ্নে সোম এবং মঙ্গলবার চলবে সংবিধান নিয়ে আলোচনা তা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে। যদিও আজ রাজ্যসভায় তৃণমূলের নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের কথায়, ‘‘আমরা চাই সংসদ চলুক। সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে যুক্ত এমন সব বিষয় তুলতে চাই। বিজেপি যদি সংসদ আবারও না অচল করে দেয়, আমরা সংবিধান নিয়ে আলোচনার সুযোগে সরকারের ভূমিকাকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসব।’’
বিরোধীরা মনে করছে, ধনখড়ের তরফে চেষ্টা চলবে বিরোধী নেতা সাংসদদের সঙ্গে ‘ট্র্যাক টু’ করার। অর্থাৎ তাঁর নিজের কক্ষে কফি, চা, মধ্যাহ্নভোজে বিরোধী দলনেতাদের ডাকতে পারেন তিনি। তৃণমূল, এসপি, শিবসেনা (ইউবিটি) এবং এনসিপি (এসসি), আপ-এর নেতারা নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিয়েছেন, তাঁর কাছ থেকে এই নিমন্ত্রণ এলে না যাওয়ার জন্য। সূত্রের খবর, কংগ্রেসও এ ব্যাপারে সহমত।
বিরোধী নেতৃত্বের অভিযোগ, যখন সংসদের বিরোধীরা কথা বলেন তখন রাজ্যসভার সম্প্রচারে ধনখড়কে দেখানো হয়। বক্তব্য, ধনখড়ের সঙ্গে বিরোধীদের কোনও ব্যক্তিগত লড়াই নেই। তবে তাঁদের অভিযোগ, তিনি রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের পদে বসে পক্ষপাতমূলক আচরণ করেন। যা সংসদ ও সংবিধানের জন্য বিপজ্জনক। বিরোধীদের একাংশের সাফ যুক্তি, তাঁরা সংবিধানকে রক্ষা করতে চান।
প্রসঙ্গত, রাজ্যসভায় সংসদ বিষয়কমন্ত্রী কিরেন রিজিজুর বিরুদ্ধে স্বাধীকারভঙ্গের প্রস্তাব এনেছেন তৃণমূলের সাগরিকা ঘোষ। তাতে সই করেছেন ‘ইন্ডিয়া’র ৬১ জন সাংসদ। সোমবার বিষয়টি নিয়ে সরকার পদক্ষেপ করে কি না, সে দিকে নজর বিরোধী পক্ষের। শনিবার লোকসভায় সরকার পক্ষ যে বক্তৃতা দিয়েছে সেগুলি নিয়েও বিচার বিবেচনা চলবে। লোকসভায় তৃণমূলের নেতা সূদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সংবিধান নিয়ে বক্তৃতা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে স্পর্শ করলেন না। এর থেকেই বোঝা যায় বিজেপি ডাবল ইঞ্জিন সরকারে বিশ্বাস করে। অর্থাৎ কেন্দ্র ও রাজ্যে এক দলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চায়।’’