ফাইল চিত্র।
আগামী সপ্তাহে রাজ্যসভায় অন্য সমস্ত বিষয়কে পাশে সরিয়ে রেখে (মুলতুবি প্রস্তাব গ্রহণ) আগে পেগাসাস-কাণ্ড নিয়ে আলোচনার দাবি তুলেছেন বিরোধীরা। তা মানা না-হলে, এ বার রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডুর বিরুদ্ধে তৃণমূল, কংগ্রেস-সহ অধিকাংশ বিরোধী দল অনাস্থা প্রস্তাব আনতে চলেছে বলে সূত্রের দাবি।
বাদল অধিবেশনের শুরু থেকেই সংসদের দুই কক্ষে পেগাসাস নিয়ে আলোচনার দাবিতে সরব বিরোধীরা। কিন্তু সরকার তাতে রাজি না-হওয়ায় কার্যত ভেস্তে গিয়েছে প্রথম দু’সপ্তাহের অধিবেশন। ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগে সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভের সাক্ষী থেকেছে সংসদ। অধিবেশন চলতে না-দেওয়া নিয়ে বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নায়ডু ও লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। এ দিন কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জ্জুন খড়্গের সংসদীয় কক্ষে বিরোধীদের রণকৌশল ঠিক করার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের দুই সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় ও সৌগত রায়। ওই আলোচনা শেষে সুখেন্দু বলেন, ‘‘সব দল মিলে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী সপ্তাহে ফের রাজ্যসভায় মুলতুবি প্রস্তাব আনা হবে। যাতে পেগাসাস নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব হয়। শেষ বার রাজ্যসভায় ওই প্রস্তাব এসেছিল ২০১৬ সালে। তারপর থেকে বর্তমান চেয়ারম্যানের আমলে একবারও তা আসেনি। তিনি যদি ওই প্রস্তাব গ্রহণ না-করেন, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’
আগামী সপ্তাহে লোকসভাতেও মুলতুবি প্রস্তাব আনার পরিকল্পনা নিয়েছে দলগুলি। বিরোধীদের দাবি, লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে পেগাসাস প্রশ্নে জবাব দিতে হবে। কিন্তু বিরোধীদের এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে আজ সংসদীয়মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী বলেন, পেগাসাস সাধারণ মানুষের বিষয় নয়। বিরোধীরা বরং তা নিয়ে সংসদে আলোচনা করুক।
সূত্রের খবর, সোম ও মঙ্গলবার যদি রাজ্যসভায় মুলতুবি প্রস্তাব গৃহীত না হয়, সে ক্ষেত্রে বুধ বা বৃহস্পতিবারে চেয়ারম্যান তথা উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডুর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল, কংগ্রেস, এসপি, ডিএমকে, আরজেডি, আপের মতো বিরোধী দলগুলি। গত কয়েক দিনের মতো আজও অবশ্য রাজ্যসভার অধিবেশন বানচাল হওয়ায় বিরোধী সাংসদদের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নায়ডু।
চেয়ারম্যানের অভিযোগ, ‘‘আমি জানতে পেরেছি, গতকাল কয়েক জন সাংসদ কক্ষে হুইসেল বাজিয়েছেন। কয়েক জন মার্শালদের কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়েছেন। ...দু’ভাবে এর সমাধান সম্ভব। হয় পুরোটাই না-দেখা করে রাজ্যসভাকে বাজারে পরিণত হতে দেওয়া অথবা ব্যবস্থা নেওয়া।’’
বিরোধী শিবির অবশ্য এতে পিছু হটতে নারাজ। তারা মনে করিয়ে দিচ্ছে, মনমোহন সিংহ সরকারের দ্বিতীয় পর্বে লোকসভা ও রাজ্যসভায় তখন বিরোধী আসনে বিজেপি দলনেতা সুষমা স্বরাজ ও অরুণ জেটলি। সেই সময়ে হইচই করে বিরোধীদের এমন সংসদীয় অধিবেশন ভণ্ডুল করা সম্পর্কে তাঁরা বলেছিলেন, ‘‘সংসদ অচল করাও গণতন্ত্রের অঙ্গ।’’ বিরোধীদের দাবি, এখন সেই সংসদ অচল করার পথেই গণতন্ত্র রক্ষার রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।