ছবি: সংগৃহীত।
কঙ্গনা রানাউতের সঙ্গে মহারাষ্ট্র সরকারের টানাপড়েনে জড়িয়ে গেল বঙ্গ রাজনীতিও। জাতীয় পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রীর ‘ওয়াই-প্লাস’ নিরাপত্তা পাওয়া নিয়ে তরজা বাধল তৃণমূল-বিজেপির। যে তরজায় তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিরাপত্তা নিয়ে খোঁচা দিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। পাল্টা আক্রমণে বাবুলের বিরুদ্ধে রোজ ভ্যালির সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ তুললেন তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান।
কঙ্গনার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পাওয়া নিয়ে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র গত কাল টুইটারে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উদ্দেশে। মহুয়ার বক্তব্য ছিল, ভারতে প্রতি এক লক্ষ জনসংখ্যায় ১৩৮ জন পুলিশ রয়েছেন। কাজেই ‘টুইটারে ব্যস্ত থাকা’ বলিউডের অভিনেতাদের ‘ওয়াই প্লাস’ নিরাপত্তা দেওয়ার বদলে কোনও ভাল কাজে কি সরকারি অর্থ ব্যবহার করা যেত না? এই সংক্রান্ত সংবাদ প্রতিবেদনটিই এ দিন নিজের টুইটার-ওয়ালে পোস্ট করে বাবুল বাংলায় লেখেন, ‘‘প্রশ্ন হলো: অভিষেক ব্যানার্জীকে কমান্ডো কভার কেন? কঙ্গনা তো কিছু অপ্রিয় সত্যি কথা বলে শিবসেনার রোষের মুখে পড়েছে, তাই সিকিউরিটি কিন্তু ভাইপোর সিকিউরিটি কি সত্যি কথা ‘ঢাকতে’?’’ (ভাষা ও বানান অপরিবর্তিত)
বলিউডের গায়ক তথা বিজেপি সাংসদের এই আক্রমণের উত্তর দেন তৃণমূলের অভিনেত্রী-সাংসদ নুসরত। তিনি লেখেন, ‘‘রোজ ভ্যালি চিট ফান্ডকে তুলে ধরা ছাড়া আপনার উল্লেখযোগ্য অবদান কী, যার জন্য আপনি ‘জেড’ নিরাপত্তা পাচ্ছেন? নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে না-যাওয়া, গরিব ও বঞ্চিতদের লুট করার জন্য এ হল কেন্দ্রের সান্ত্বনা পুরস্কার। আমি বলব, প্রতিদান।’’
আরও পড়ুন: মাদক জোগান! গ্রেফতার রিয়া
কঙ্গনার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পাওয়া নিয়ে বিভিন্ন মহলের পাশাপাশি বলিউডেও প্রশ্ন উঠেছে যে, ছবি আটকাতে বিভিন্ন চরমপন্থী সংগঠনের হুমকির সময়ে কেন্দ্রের এই তৎপরতা কোথায় থাকে? কঙ্গনার সঙ্গে মহারাষ্ট্র প্রশাসনের চাপানউতোরের পারদ অবশ্য ক্রমশ চড়ছে। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ আজ জানান, মুম্বই পুলিশকে কঙ্গনার বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অভিযোগের তদন্ত করতে বলেছেন তিনি। পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে কঙ্গনা বলেছেন, ‘‘আমি খুব খুশি হব যদি মুম্বই পুলিশ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেশমুখকে সন্তুষ্ট করতে পারি। দয়া করে আমার মাদক-পরীক্ষা করান, কল-লিস্ট পরীক্ষা করে দেখুন কোনও মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি কি না। যদি কিছু পান, আমি ভুল স্বীকার করে বরাবরের মতো মুম্বই ছেড়ে চলে যাব। দেখা হওয়ার অপেক্ষায় রইলাম।’’
আজ মহারাষ্ট্র বিধানসভায় কঙ্গনার বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অভিযোগের তদন্তের আর্জি পেশ করেন শিবসেনার দুই বিধায়ক সুনীল প্রভু এবং প্রতাপ সরনাইক। পরে দেশমুখ বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমের খবর, অভিনেতা শেখর সুমনের ছেলে অধ্যয়নের সঙ্গে কঙ্গনার সম্পর্ক ছিল। অধ্যয়ন একটি সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন, কঙ্গনা মাদক নেন। তাঁকেও (মাদক নিতে) বাধ্য করেছিলেন। আমি বলেছি, মুম্বই পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।’’
শিবসেনার ওই বিধায়কদের দাবি, তাঁদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। সরনাইক বলেছেন, ‘‘কঙ্গনার ভাবমূর্তি যাতে নষ্ট না-হয়, সেই জন্যই তদন্তের আর্জি জানিয়েছি। মাদক সেবনের অভিযোগ মিথ্যে হলে অধ্যয়ন সুমনের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিক পুলিশ। আর অভিযোগ সত্যি হলে গোটা মাদক-চক্রে কারা রয়েছে, তা প্রকাশ্যে আসা জরুরি।’’ কঙ্গনা বলেছিলেন, মাফিয়াদের চেয়েও পুলিশকে বেশি ভয় পান তিনি। ওই মন্তব্যের জন্য আজ তাঁর সমালোচনা করেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস।
গত কাল কঙ্গনা অভিযোগ করেন, মুম্বইয়ের পুর-কর্তারা তাঁর অফিস ভাঙার হুমকি দিয়ে গিয়েছেন। তা নিয়েও সরগরম হয়ে ওঠে টুইটার। আজ কঙ্গনা তাঁর বাড়ি তথা অফিসের দেওয়ালে পুরসভার তরফে সেঁটে দিয়ে যাওয়া নোটিসের ছবি টুইট করেছেন। লিখেছেন, ‘‘আমার বন্ধুদের সমালোচনার পরে আজ ওঁরা বুলডোজ়ার নিয়ে আসেননি। বরং আমার অফিসে লিকেজ মেরামতির যে কাজ চলছিল, তা বন্ধের নোটিস ঝুলিয়ে দিয়ে গিয়েছেন।’’ পুরসভার অভিযোগ, তাদের অনুমতি ছাড়াই অনেক কিছু অদলবদল করা হয়েছে বান্দ্রার পালি হিলের ওই বাংলোটিতে। যেমন, শৌচাগার ভেঙে অফিস কেবিন বানানো হয়েছে। পরে ফের টুইট করে কঙ্গনা জানান, তাঁর বিরুদ্ধে কোর্টে ক্যাভিয়েট দায়ের করে রেখেছে পুরসভা। বাড়ি ভাঙতে তারা এতটাই মরিয়া। একটি সংবাদ প্রতিবেদনের শিরোনামকে কটাক্ষ করে কঙ্গনা লেখেন, ‘‘(বিজেপি-শিবসেনার লড়াইয়ে) আমাকে দাবার বোড়ে হিসেবে ব্যবহার করবে, এমন কেউ এখনও জন্মায়নি।’’