ফাইল চিত্র।
অসমে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি থেকে বহু হিন্দু বাদ পড়ায় বিপদে পড়েছে বিজেপি। সংসদে তাই তড়িঘড়ি নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল এনে ভোটব্যাঙ্কের সেই ধস আটকাতে চাইছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, এনআরসি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে পার্থক্য নেই। একই টাকার এ পিঠ, ও পিঠ। বিভাজনের রাজনীতি ছাড়া কিছু নয়।
নাগরিকত্ব বিলের মূল লক্ষ্য প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়া। তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্য, সংবিধান অনুযায়ী ধর্মের ভিত্তিতে ভেদাভেদ করা যায় না। তাঁর সরকার ভেদাভেদ ছাড়াই রাজ্যে থাকা বিভিন্ন শরণার্থী কলোনির ৭০ হাজার মানুষের স্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা করেছে। কেন্দ্রীয় ও বেসরকারি জমিতে বসবাস করা প্রায় ১১,৯৮৬ শরণার্থী পরিবারের নিয়মিতকরণের কাজ চলছে। মমতার যুক্তি, চার দশক ধরে ওই জমিতে বসবাস করছেন ওই সব পরিবার। সরকার তাদের অধিকার রক্ষায় দায়বদ্ধ। তৃণমূলের দাবি, প্রথমে নোট বাতিল, জিএসটি। তার পর এনআরসি। এ বার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল এনে চতুর্থ ভুল করতে চলেছে মোদী সরকার। অতীতের তিন বিষয় নিয়ে সরকারকে শুরুতেই সাবধান করেন মমতা। চতুর্থ ভুলের আগেও তিনি বিজেপিকে সাবধান করছেন, কিন্তু মোদী সরকার শুনতে নারাজ।
শুরু থেকেই মমতা বলে আসছেন, তিনি পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হতে দেবেন না। গত কাল দিল্লির শাসক দল আপ-ও জানিয়ে দেয়, তারাও দিল্লিতে এনআরসি-র বিরুদ্ধে। নিজেদের রাজ্যে এনআরসি হতে দেবেন না বলে আজ সুর চড়িয়েছেন পঞ্জাব ও ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রীরা। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহের কথায়, এনআরসি ও নাগরিকত্ব দু’টি বিলই সংবিধানের গণতান্ত্রিক ভাবনার বিরোধী। তাই
পঞ্জাবে তা মেনে নেওয়া হবে না। তৃণমূল নেতৃত্বের আশা, পশ্চিমবঙ্গের পথে বিজেপি-বিরোধী রাজ্যগুলি মোদী সরকারের ওই বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন।
যদিও বিজেপি শিবিরের দাবি, কারা দেশের নাগরিক আর কারা বহিরাগত তা চিহ্নিত করার অধিকার কেন্দ্রের রয়েছে। গত ৭০ বছরে ওই কাজ হয়নি। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থেই সরকার ওই কাজ করছে। পাল্টা যুক্তিতে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘এনআরসি ও নাগরিকত্ব বিল— দু’টি ক্ষেত্রেই বিজেপির নিশানায় বাঙালিরা। বিজেপি কেন বাঙালিদের তাড়াতে এত তৎপর, সেই জবাব দিতে হবে।’’
রাজ্য বিজেপির বক্তব্য, নাগরিক সংশোধনী বিল পাশ হলে পশ্চিমবঙ্গে উপকৃত হবেন মতুয়া সম্প্রদায়ের ৭০ লক্ষ মানুষ। ওই সংখ্যা সম্পূর্ণ কাল্পনিক বলে দাবি করে, ডেরেক বলেন, ‘‘এনআরসি প্রশ্নে বেকায়দায় পড়ে বিজেপি রাজ্যের মানুষকে মিথ্যা বোঝাচ্ছে।’’ রাজ্য সরকার গোড়া থেকে বলছে, মতুয়ারা এ দেশে এসেছেন দেশ ভাগের সময়ে। তাঁদের নাগরিকত্বের কাগজ রয়েছে। তার পরে লক্ষ লক্ষ মতুয়া বাংলাদেশ থেকে এসেছেন, সরকারের কাছে এমন তথ্য নেই। সীমান্তরক্ষী বা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারাও তেমন তথ্য কখনও রাজ্য সরকারকে দেয়নি। ফলে বিজেপির দাবি অসত্য।