National News

‘তিনসুকিয়ার ঘটনায় আমাদের রক্তে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যাচ্ছে’

তিনসুকিয়ার হামলা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং একগুচ্ছ ঘটনা পরম্পরার ফলশ্রুতি। বাঙালিদের মনোবল ভেঙে দিতে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী, বিভেদকামী শক্তির অপপ্রচেষ্টা।

Advertisement

পরম ভট্টাচার্য

শিলচর শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৮ ১৪:০৮
Share:

মৃতদেহের পাশে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিজনরা।

এনআরসি নিয়ে এমনিতেই চরম উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন অসমের বাঙালিরা। আর বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা তাঁদের রক্তে এক ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দিয়েছে।

Advertisement

আমরা থাকি শিলচরে। এখান থেকে তিনসুকিয়া প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে। এত দূরের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে অসমের সব বাঙালিকে। শুধু তিনসুকিয়া নয়, অসমের বাঙালি অধ্যুষিত যে কোনও এলাকাতেই এই ধরনের হামলার আশঙ্কা করছেন বাঙালিরা।

কিন্তু কেন এই হামলা? কেনই বা এই আতঙ্কের চোরাস্রোত?

Advertisement

এর উত্তর খুঁজতে গেলে একটু পিছিয়ে যেতে হবে। তিনসুকিয়ার হামলা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং একগুচ্ছ ঘটনা পরম্পরার ফলশ্রুতি। বাঙালিদের মনোবল ভেঙে দিতে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী, বিভেদকামী শক্তির অপপ্রচেষ্টা।

আরও পডু়ন: বাঙালি হত্যা: অসমে সেনা অভিযান, তিনসুকিয়ায় বন্‌ধ, বাংলায় বিক্ষোভ

সূত্রপাত সম্ভবত ১৯৮৫ সালের ১৫ অগস্ট অসম চুক্তির পর থেকে। ওই চুক্তির পর ১৯৫৬ সালের সিটিজেনশিপ অ্যাক্টে ৬-এ ধারা যুক্ত হল। ওই ধারায় বলা হল, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর যাঁরা অসমে এসেছেন তাঁদের আলাদা করে চিহ্নিত করা হবে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়লেন বাঙালিরা, মূলত নিম্নশ্রেণির বাঙালিরা।

আরও পড়ুন: অসমের তিনসুকিয়ায় পাঁচ বাঙালিকে গুলি করে হত্যা, সন্দেহে আলফা জঙ্গিরা

এরপর ২০১৫ সাল থেকে শুরু হল জাতীয় নাগরিকপঞ্জি। তার সঙ্গে আবার যোগ হল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৬। সব মিলিয়ে কার্যত আরও কোণঠাসা করার চেষ্টা করা হল বাঙালিদের। কিন্তু অসমের বহু বাঙালি সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন গণ সংগঠন নাগরিকপঞ্জির বিরুদ্ধে আন্দোলন ও প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন।

অসমের ঘোষিত বিদেশি এবং বহু সন্দেহভাজন ভিনদেশিদের রাখা হয়েছে উদ্বাস্তু শিবিরে। সেখানে তাঁদের উপর অমানবিক আচরণ এবং নির্যাতনের অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল একটি গোষ্ঠী। সেই মামলায় ৩১ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট অসম সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছে। আবার গতকাল ১ নভেম্বরই সুপ্রিম কোর্ট এনআরসি-র জন্য ১৫ নথিকেই প্রামাণ্য হিসাবে গ্রাহ্য করার নির্দেশ দিয়েছে। আবার ৩০ অক্টোবর কোচবিহারে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, অসম থেকে বিতাড়িত হলে আশ্রয় দেবে বাংলা।

আরও পড়ুন: ‘কাজে গিয়ে বেতন-খাবার-জল না পেয়ে দিন কাটাতে হবে, কে জানত!’

পর পর এই ঘটনায় বাঙালিরা যখন একটু একটু করে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন তখনই তিনসুকিয়ায় হামলা। পাঁচ বাঙালিকে নারকীয় ভাবে হত্যা। আসলে বাঙালিদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে এবং মনোবল ভেঙে দিতেই এই হামলা চালানো হয়েছে। আলফা জঙ্গিরা বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, তারা হামলা করেনি।

তাহলে কারা এর জন্য দায়ী? আসলে হামলা চালানো হয়েছে রাজ্য জুড়ে একটা অস্থিরতা ও আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তার ফায়দা লুঠতে পারে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক শক্তি। অসমের কোনও প্রান্তেই যাতে বাঙালিরা স্বাভাবিক জীবন ছন্দে ফিরতে না পারেন, তার জন্যই এই হামলা। এক দিকে এনআরসি-র জুজু আর প্রতিবাদ-প্রতিরোধের রাস্তা বন্ধ করতে ভয়-ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করতেই এই গণহত্যা।

শিলচরের বাসিন্দা প্রাবন্ধিক ও লেখক

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement