আদালতে ঢোকার মুখে সঞ্জিরাম। ছবি: পিটিআই।
কাঠুয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে ছ’জনের মধ্যে তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল পাঠানকোটের বিশেষ আদালত। প্রমাণ লোপাট এবং দোষীদের আড়াল করার দায়ে বাকি তিনজনের ৫ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। তবে তথ্য প্রমাণের অভাবে অপর অভিযুক্ত বিশালকে বেকসুর খালাস করেছে আদালত।
গণধর্ষণ কাণ্ডের মূল চক্রী তথা রাজস্ব দফতরের প্রাক্তন অফিসার সঞ্জিরামের ফাঁসি চেয়েছিলেন সরকারি আইনজীবী। তবে তাঁকে যাবজ্জীবনই দেন বিচারপতি। অন্য দুই মূল অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার দীপ খাজুরিয়া এবং প্রবেশ কুমারকেও একই সাজা শোনানো হয়। সঞ্জিরামের নেতৃত্বে মুসলিম যাবাবর বাখরওয়াল সম্প্রদায়কে এলাকা ছাড়া করতে, তারা আট বছরের মেয়েটিকে অপহরণ করে ধর্ষণ করে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। ৩০২ (খুন), ৩৭৬-ডি (গণধর্ষণ) ধারায় তাদের সাজা হয়েছে। এই তিনজনকে আড়াল করার অপরাধে পুলিশ অফিসার তিলক রাজ, আনন্দ দত্ত এবং সুরেন্দ্র বর্মাকে জম্মু-কাশ্মীরের ২০১ রণবীর ধারায় (প্রমাণ লোপাট, ভুয়ো তথ্য) ৫ বছর করে সাজা শোনানো হয়েছে।
ঘটনায় অভিযুক্ত সঞ্জি রামের ছেলে বিশাল জানায়, ঘটনার দিন উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরে পরীক্ষা দিচ্ছিল সে। ঘটনায় তার ভূমিকা নিয়ে কোনও প্রমাণ না মেলায়, তাকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে জানান নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী ফারুকি খান। সঞ্জিরামের ভাইপো তথা অষ্টম অভিযুক্ত নাবালক কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক জারি। জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্টে বিষয়টির শুনানি চলছে।
আরও পড়ুন: কাঠুয়ায় নাবালিকাকে গণধর্ষণ ও খুনের মামলায় ছ’জনকে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত
গত বছর ১০ জানুয়ারি কাশ্মীরে কাঠুয়ায় মুসলিম যাযাবর বাখরওয়াল সম্প্রদায়ের আট বছরের মেয়েটিকে অপহরণ করা হয়। সেখানে একটি মন্দিরে তাকে আটকে রেখে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ধর্ষণ করা হয়। ১৭ জানুয়ারি স্থানীয় জঙ্গল থেকে তার ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে তাকে হত্যা করা হয়েছিল বলে উঠে আসে তদন্তে। এমনকি খুন করার আগেও তাকে একবার ধর্ষণ করা হয় বলে জানা যায়। এই ঘটনায় ফুঁসে ওঠে গোটা দেশ। অভিযুক্তদের সমর্থনে গেরুয়া শিবিরের নেতারা মিছিল বার করায় ফাটল ধরে উপত্যকার বিজেপি-পিডিপি জোটে। অভিযুক্তদের সমর্থনে মুখ খোলায় মেহবুবা মুফতি সরকার থেকে ইস্তফা দিতে হয় বিজেপির প্রকাশ গঙ্গা এবং লাল সিংহকে।
আদালতের বাইরে ভিড় সাধারণ মানুষের। ছবি: পিটিআই।
আরও পড়ুন: শাজাহান বাহিনীতে ‘রোহিঙ্গা’, সন্দেশখালি ফুঁসছে গ্রেফতারের দাবিতে, ৩ এফআইআর
এ দিন দুপুরে আদালত ছ’জনকে দোষী সাব্যস্ত করার পর জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা টুইটারে লেখেন, ‘‘দোষীদের চরম শাস্তি হওয়া উচিত। আর যে রাজনীতিকরা অভিযুক্তদের আড়াল করছিলেন, নির্যাতিতাকে অপমান করেছিলেন এবং বিচার ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দিতে চেয়েছিলেন, কোনও ভাষাই তাদের নিন্দা করার পক্ষে যথেষ্ট নয়।’’
মেহবুবা মুফতি টুইটারে লেখেন, ‘‘কাঠুয়া রায়ে স্বস্তি পেলাম। সত্যটাকে সামনে আনার জন্য আইজিপি মুজতবা, এসএসপি জালা, অতিরিক্ত এসপি নাভিদ, ডেপুটি এসপি শ্বেতাম্বরী এবং তালিবের প্রশংসা প্রাপ্য।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।