ফাইল চিত্র
নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিনে গত কাল আড়াই কোটি টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া গেলেও আজ এক ধাক্কায় নেমে এল সেই সূচক। আজ রাত সাড়ে ১১টায় কোউইন ওয়েবসাইট দেখিয়েছে, সারা দেশে টিকাকরণ হয়েছে ৮৫ লক্ষের সামান্য বেশি। বিজেপি-শাসিত যে রাজ্যগুলি গত কাল টিকাকরণের সংখ্যায় রেকর্ড গড়েছিল, আজ সেখানেও টিকা দেওয়ার হার ছিল তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কম। বিরোধীদের মতে, এমনটাই প্রত্যাশিত ছিল। গত কাল প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন থাকায় স্রেফ রেকর্ডের জন্যই টিকাকরণের হুজুগ তোলা হয়েছিল।
গত কাল মোদীর জন্মদিন উপলক্ষে রেকর্ড সংখ্যক টিকাকরণের লক্ষ্যে নেমেছিল বিজেপি। ফলে রাত বারোটা ছুঁতে ছুঁতে এক দিনে টিকাকরণের সংখ্যা আড়াই কোটি পেরিয়ে যায়। বিরোধীদের বক্তব্য, সংখ্যার দিক থেকে এক দিনে আড়াই কোটি টিকাকরণ প্রশংসনীয়। কিন্তু সরকারকে মনে রাখতে হবে, তৃতীয় ঢেউ আসার আগে দেশের সব মানুষের জন্য টিকার দু’টি করে ডোজ় প্রয়োজন। তার জন্য সমান গতিতে টিকাকরণ জরুরি। ভারতের মতো দেশে তৃতীয় ঢেউ আসার আগে সবাইকে টিকার দু’ডোজ় দিতে হলে রোজ অন্তত এক কোটির বেশি টিকাকরণ হওয়া উচিত।
আজ দেশের সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মোদী। তিনি বলেন, “সকলের চেষ্টায় ভারত গত কাল এক দিনে আড়াই কোটি টিকা দিতে সক্ষম হয়েছে, যা বিশ্বরেকর্ড। ভারত যা করে দেখিয়েছে, তা বিশ্বের কোনও ক্ষমতাশালী দেশও পারেনি। কাল প্রতি সেকেন্ডে ৪২৫ জনের টিকাকরণ হয়েছে। জন্মদিন আসে, আবার চলে যায়। আমি সে সব নিয়ে মাথা ঘামাই না। কিন্তু গত কালটা আমার জন্য বিশেষ স্মরণীয় দিন ছিল।’’ টিকার প্রথম ডোজ় দেওয়া ১০০% সম্পূর্ণ করা গোয়া সরকারের ভূমিকার প্রশংসাও করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিরোধীরা কালই প্রশ্ন তুলেছিলেন, প্রত্যেক দিনের বদলে কেন শুধু যোগ দিবস কিংবা প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের মতো বিশেষ দিনেই বেশি টিকাকরণ হবে? কালকের পরেই টিকাকরণের হার এক ধাক্কায় কমে যাবে বলেও আশঙ্কা করেছিলেন কেউ কেউ। বাস্তবে হয়েছেও তাই। গত কাল যেখানে বেলা দেড়টার মধ্যেই এক কোটি টিকা দেওয়া হয়ে গিয়েছিল, সেখানে আজ প্রায় মাঝরাতেও এক কোটির অঙ্কে পৌঁছনো যায়নি। বিজেপি-জেডিইউ জোট সরকার শাসিত বিহারে গত কাল ৩২ লক্ষ টিকাকরণ হয়েছিল। আজ হয়েছে মাত্র ১.৬২ লক্ষ। বিজেপি-শাসিত কর্নাটকে কাল টিকা নিয়েছিলেন ৩০ লক্ষ মানুষ। আজ নেন মাত্র ২.২৪ লক্ষ। প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য গুজরাতে গত কাল টিকাপ্রাপকের সংখ্যা ছিল সাড়ে ২৪ লক্ষ। আজ টিকা পেয়েছেন মাত্র ৩.৬৪ লক্ষ। যোগী আদিত্যনাথের রাজ্য উত্তরপ্রদেশে আজ সাড়ে পাঁচ লক্ষের কিছু বেশি মানুষ টিকা নিয়েছেন। অথচ কাল সংখ্যাটি ছিল ২৮ লক্ষ।
কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার মতে, বিশেষ বিশেষ দিনে টিকাকরণে জোর না দিয়ে সরকারের উচিত রোজ সমান গতিতে টিকাকরণ করানো। আজ রাজ্যগুলির স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা। সূত্রের খবর, রাজ্যগুলিকে কেন্দ্র বলেছে, সংক্রমণ কমলেও টিকাকরণে যেন গা-ছাড়া মনোভাব না আসে। গৌবা জানান, বিভিন্ন দেশে দ্বিতীয় ঢেউ চলে যাওয়ার পরেও সংক্রমণ বেড়েছে। ফলে কোনও জেলায়, বিশেষত আসন্ন উৎসবের মরসুমে সংক্রমণ হঠাৎ বাড়তে শুরু করলেই পত্রপাঠ ব্যবস্থা নিতে হবে। চলতি মাসে ২৫ কোটি প্রতিষেধক রাজ্যগুলিকে সরবরাহ করবে কেন্দ্র। তার মধ্যে কোভিশিল্ড ২০ কোটি, কোভ্যাক্সিন ৩.৫ কোটি ও বাকি স্পুটনিক।
বিরোধীরা, বিশেষ করে কংগ্রেস নেতৃত্ব রেকর্ড টিকাকরণের সাফল্য মেনে নিতে পারছেন না বলে আজ অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি নেতারা। মোদীও নিজের বক্তব্যে নাম না করে কংগ্রেস নেতৃত্বকে আক্রমণ শানিয়ে বলেন, ‘‘টিকা নিলে লোকের অনেক সময়ে জ্বর হয়। আমার জন্মদিনে আড়াই কোটি টিকাকরণ হওয়ায় একটি রাজনৈতিক দল জ্বরে পড়েছে।’’