উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। ফাইল চিত্র।
পাকিস্তানের জয় উদ্যাপন করলে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে অভিযোগ দায়ের করা হবে— একটি সাক্ষাৎকারে এমনই বলেছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। পরে এ নিয়ে টুইটও করেন। সেই পথে হেঁটেই গত কাল আগরায় তিন কাশ্মীরি পড়ুয়াকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তিন জনেই রাজা বলবন্ত সিংহ কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। এর মধ্যে আর্শাদ ইউসুফ, ইনায়াত আলতাফ শেখ তৃতীয় বর্ষের এবং শওকত আহমেদ গনাই চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তাঁদের জগদীশপুরা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তাঁদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিদ্বেষ এবং সাইবার সন্ত্রাসের অভিযোগ আনা হয়েছে। যোগীর ঘোষণার পরে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগও আনা হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
কলেজ কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক বৈঠকে অবশ্য জানিয়েছেন, ওই দিন কোনও দেশবিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়নি। সে দিন বিনা অনুমতিতেই কয়েক জন বহিরাগত ক্যাম্পাসে ঢুকে অভিযোগ তোলে, দেশবিরোধী কাজে যুক্ত কলেজের ছাত্রেরা। কলেজের বক্তব্য, কোনও বিষয় নিয়ে কারও অভিযোগ থাকলে ঝামেলা না করে সরাসরি প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টরের কাছে অভিযোগ জানানো উচিত। কলেজের এক প্রতিনিধির প্রশ্ন, তাঁদের প্রতিষ্ঠান যদি দেশবিরোধীই হবে, তা হলে মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল কিংবা আরএসএস প্রধান কলেজে এসেছিলেন কেন?
বিষয়টি তুলে ধরে জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি কাশ্মীরি ছাত্রদের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন। অবিলম্বে ওই ছাত্রদের মুক্তির দাবি তুলেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, জম্মু-কাশ্মীরে কেন্দ্রের দু’বছরের দমননীতির জেরে পরিস্থিতি কী দাঁড়িয়েছে, তা বোঝাই যাচ্ছে। বিজেপির ‘ছদ্ম দেশভক্তি’ নিয়েও কটাক্ষ করেছেন মেহবুবা।
তবে পুলিশি গ্রেফতারের পরে ওই পড়ুয়াদের সাসপেন্ড করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যেই রাজ্যে আরও চার জনকে একই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন জন বরেলীর বাসিন্দা এবং এক জন লখনউয়ের।
আগরার পুলিশ সুপার বিকাশ কুমার জানিয়েছেন, ভারত-পাকিস্তানের খেলার শেষে দেশবিরোধী মন্তব্যের অভিযোগে এফআইআর করা হয় ওই তিন পড়ুয়ার বিরুদ্ধে। প্রাথমিক তদন্তের পরেই তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার নেতা গৌরব রাজাওয়াত জানিয়েছেন, ঘটনার দিন কলেজ ক্যাম্পাসে পৌঁছে দেখেন, পাকিস্তানের সমর্থনে স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল। এর পরেই তিনি কাশ্মীরি ছাত্রদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন।
শ্রীনগরের কর্ণ নগরে গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলেও একই ঘটনার জেরে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে (ইউএপিএ) মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ দিকে পাকিস্তানের সমর্থনে এক দল ছাত্রের স্লোগান দেওয়া ঘিরে আপত্তি জানানোয় স্কিমস সৌরার এক মেডিক্যাল ছাত্রীকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। অনন্যা জামওয়াল নামে ওই পড়ুয়া পুলিশকে বিষয়টি জানালে ইউএপিএ আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে কয়েক জন ছাত্রের বিরুদ্ধে।
পাকিস্তানের জয় উদ্যাপনের মুহূর্ত হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাসে রাখায় আজ রাজৌরীর গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজে অপারেশন থিয়েটারের এক টেকনিশিয়ানকে ছাঁটাই করেছেন কর্তৃপক্ষ। কলেজের অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানের কোনও কর্মীর দেশবিরোধী কার্যকলাপ বরদাস্ত করা হবে না। একই অভিযোগে রাজস্থানের এক বেসরকারি স্কুলের শিক্ষককেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রবিবার খেলার পরে পঞ্জাবের সাঙ্গরুর জেলায় কাশ্মীরি ছাত্রদের একটি দলের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারের এক দল ছাত্রের হাতহাতির খবর মিলেছে।