বাবা ছিলেন সবচেয়ে বেশি সময়ের জন্য শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি। বাবার পথ ধরে ছেলেও পেশা হিসাবে বেছে নিলেন আইনকেই। বাবার পথ ধরে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হওয়ার তালিকাতেও তিনি ঠাঁই করে নিয়েছেন। তিনি বিচারপতি ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড়।
সম্প্রতি অযোধ্যা মামলার মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় দিয়েছেন তিনি। চন্দ্রচূড়ের জন্ম মুম্বইয়ে ১৯৫৯ সালের ১১ নভেম্বর। তাঁর বাবা যশবন্ত বিষ্ণু চন্দ্রচূড় এখনও পর্যন্ত ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের প্রধান বিচারপতি হয়েছেন। তিনি ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন।
তাঁর মা প্রভাদেবীর অবশ্য আইন নিয়ে তেমন আগ্রহ ছিল না। স্বামী দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি থাকা সত্ত্বেও তিনি বেশিরভাগ সময়টা গান নিয়েই মেতে থাকতেন। ক্লাসিক্যাল মিউজিসিয়ান ছিলেন তিনি।
বিচারপতি বাবার ছেলেও ছোট থেকেই আইন নিয়ে উত্সাহী ছিলেন। মুম্বইয়ের ক্যাথেড্রাল অ্যান্ড জন কোনন স্কুল পাশ করার পর তিনি দিল্লির সেন্ট কলম্বাস স্কুলে ভর্তি হন।
মেধাবী ছাত্র চন্দ্রচূড় ১৯৭৯ সালে দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ থেকে অর্থনীতি এবং অঙ্কে স্নাতক হন। তবে দেশের অর্থনীতি বা অঙ্ক নিয়ে কাজ করার তাঁর কোনও ইচ্ছা ছিল না। চিরকাল বাবার মতোই দেশের আইনব্যবস্থাতে উত্সহী ছিলেন তিনি।
১৯৮২ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং ১৯৮৩ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তিনি আইনে পিএইচডি করেন।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনি নিয়ে পড়াকালীনই তিনি জুনিয়র অ্যাডভোকেট হয়ে আইনজীবী এবং বিচারকদের অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে কাজ শুরু করেন।
১৯৯৮ সালে বম্বে হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী হন তিনি। ২০০০ সালের ২৯ মার্চ ওই হাইকোর্টেরই বিচারপতি নিযুক্ত হন চন্দ্রচূড়।
এর পর ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবর তিনি এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন। ২০১৬ সালের ১৩ মে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাঁর। এর আগে তিনি অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলের দায়িত্ব সামলেছেন। সুপ্রিম কোর্টে আধার মামলায় বেঞ্চের সদস্যও ছিলেন।
সেই মামলায় পৃথক রায় দিয়ে সতর্ক করেছিলেন, প্রতিটি তথ্যভাণ্ডারের সঙ্গে আধার যুক্ত হলে ব্যক্তিপরিসরের অধিকারে আঘাতের আশঙ্কা থেকে যায়। মূলত আধারের বর্তমান ব্যবস্থার ১০টি গলদের কথা উল্লেখ করেছিলেন তিনি।
৯ নভেম্বর ২০১৯ দেশের সবচেয়ে বিতর্কিত মামলার রায় দিয়ে ইতিহাস রচনা করেছেন। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলোচনা করা একেবারে পছন্দ করেন না বিচারপতি চন্দ্রচূড়।
২০০৮ সালে বাবার মৃত্যুর ঠিক এক বছর আগে তাঁর স্ত্রী রাশমি চন্দ্রচূড়ের মৃত্যু হয়। তিনি ক্যানসার আক্রান্ত ছিলেন। জানা যায়, এর পর তিনি অত্যন্ত ভেঙে পড়েছিলেন। তার কয়েক বছর পর চন্দ্রচূড় মুম্বইয়ে নিজ বাসভবনে একান্ত ব্যক্তিগত পরিসরে ফের বিয়ে করেন।
তাঁর দুই সন্তান। তবে তাঁরা কেউই আইনের প্রতি আগ্রহী নন। অত্যন্ত মেধাবী দুই সন্তানের একজন লেখক।