৯০ বছরের মাযের সঙ্গে খোশমেজাজে গল্প জুড়েছিলেন মেয়ে। বৃদ্ধা মা এখন ভাল করে হাঁটতে পারেন না। চোখের দৃষ্টিও আর আগের চেয়ে অনেক ঝাপসা।
মায়ের কী ভাল লাগে করতে, ৯০ বছর কাটানোর পর জীবনটাকে কী ভাবে দেখেন, এইসব নিয়ে কথা এগোচ্ছিল. কথা প্রসঙ্গেই মাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন মেয়ে, তাঁর জীবনে কোনও আক্ষেপ রয়েছে কি না।
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর মাথা নেড়ে মা জানিয়েছিলেন, জীবনে কখনও উপার্জন করতে পারলেন না তিনি। সে দিনের সেই গল্প সেখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল মায়ের কাছে। কিন্তু মেয়ের কাছে সেটা শেষ ছিল না। বরং ছিল মায়ের জন্য এক নতুন জীবন শুরুর অনুপ্রেরণা।
যে বৃদ্ধার কথা হচ্ছে, তিনি চণ্ডীগড়ের বাসিন্দা। নাম হরভজন কৌর। আর তাঁর মেয়ে হলেন রবিনা। মেয়ের কাছেই থাকেন তিনি। মেয়ে-জামাই-নাতনিকে ঘিরেই এখন তাঁর পরিবার।
মায়ের আক্ষেপের কথা জানার পর থেকেই রবিনা স্থির করে ফেলেছিলেন মায়ের জন্য কিছু করতে হবে। ছোটবেলায় তিনি দেখতেন, বাড়ির সকলেই মায়ের রান্নার প্রশংসা করতেন ভীষণ।
বাড়িতে যে কোনও উৎসব বা অনুষ্ঠানে দোকান থেকে কখনও মিষ্টি আসত না। বাড়িতেই সকলের জন্য মিষ্টি বানাতেন মা। নানারকম সুস্বাদু আচারও বানাতেন তিনি।
সে সময় মা ভীষণ লাজুক ছিলেন। তাঁর রান্না খেয়ে অতিথিরা প্রশংসা করতেন, অথচ মা লজ্জায় কখনও তাঁদের সামনে আসতেন না। দিনের বেশিরভাগ সময় ওই রান্নাঘরেই কাটাতেন।
আজ থেকে চার বছর আগে রবিনা মাকে গিয়ে তাঁর নিজের স্টার্ট আপ শুরুর প্রস্তাব রাখেন। এই বয়সে এসে ব্যবসা! প্রথমে ভাবতেই পারছিলেন না হরভজন কৌর।
পরে নাতনি এবং মেয়ে রবিনার জোরাজুরিতে ওই ৯০ বছর বয়সেই তিনি নিজের ব্যবসা শুরু করলেন। প্রথমে একদিন বেসনের বরফি আর নানা রকম আচার বানিয়ে কাছের একটি অর্গানিক বাজারে গিয়ে বিক্রি করেছিলেন।
প্রথম দিনেই সবটা বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। বাড়ি ফিরেছিলেন হাতে ২০০০ টাকা নিয়ে। সেটাই ছিল তাঁর প্রথম উপার্জন। মেয়ে রবিনা জানিয়েছেন, ওই প্রথম মায়ের চোখে মুখে ভরপুর আত্মবিশ্বাস দেখেছিলেন তিনি।
তারপর থেকে আর মেয়ে আর নাতনিকে জোর করতে হয়নি, নিজেই কাস্টমারদের থেকে অর্ডার নিতেন, বেসনের বরফি বানিয়ে দোকানে পাঠিয়ে দিতেন। নাতনি তাঁর প্যাকিংয়ের কাজ করে।
বর্তমানে ৯৪ বছর বয়স হরভজন কৌরের। গত চার বছর ধরে একই রকম উৎসাহ নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তাঁর এক কেজি বেসনের বরফির দাম ৮৫০ টাকা।
মিষ্টির বাক্সের ট্যাগলাইন ‘হরভজন’স.. বচপন ইয়াদ আজায়ে’ এই চার বছরে মোট ৫০০ কেজি বরফি বিক্রি করেছেন তিনি। নাতনির বিয়েতেও নিজের হাতে মিষ্টি বানিয়ে অতিথিদের খাইয়েছেন।
এতদিন সবকিছু একাই করতেন, এ বার লোক নিয়োগ করে তাঁর ব্যবসার আরও প্রসার ঘটাতে চান মেয়ে রবিনা।