পঞ্চম শ্রেণিতেই চুকে গিয়েছিল স্কুলের পাঠ। দীর্ঘ কয়েক দশক সামলে আসছেন ২০০০ কোটি টাকার বিশাল ব্যবসা-সাম্রাজ্য। আর চার বসন্ত পরেই স্পর্শ করবেন শতবর্ষ। এখনও ব্যবসার কাজে সমান সক্রিয়। তিনি ধর্মপাল গুলাটি, বেশি পরিচিত মহাশয় ধর্মপাল গুলাটি নামে। ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য সম্মানিত হয়েছেন ‘পদ্মবিভূষণ’-এ।
‘অসলি মশলা সচ সচ’, এই জিঙ্গল শুনেছেন নিশ্চয়ই। ধর্মপালের দাবি, শুধু বিজ্ঞাপনের গানই নয়। সত্যিই তাঁর সংস্থা মশলার গুণমান নিয়ে কোনও আপস করে না। তাই ভারতীয় মশলার বাজারে তাঁর সংস্থা ‘মহাশিয়ান দি হাট্টি’ বা সংক্ষেপে ‘এমডিএইচ’ প্রথম সারিতে রয়েছে দাপটের সঙ্গে।
বর্তমানে দেশের এফএমজিসি সেক্টরে ধর্মপাল সর্বোচ্চ বেতনভুক সিইও। বিভিন্ন সাইটে প্রকাশ, ২০১৮-১৯ আর্থিক বর্ষে নিজের সংস্থা থেকে তিনি বার্ষিক বেতন পেয়েছেন ২৫ কোটি টাকারও বেশি।
পাকিস্তানের শিয়ালকোটে ধর্মপালের জন্ম ১৯২৩-এর ২৭ মার্চ। দেশভাগের পরে যখন তাঁর পরিবার ওয়াঘার এ পারে এল, তখন হাতে সম্বল দেড় হাজার টাকা। সংসারের দিকে তাকিয়ে বাধ্য হয়ে ধর্মপাল টাঙ্গা চালানোর কাজ শুরু করলেন।
কয়েক বছরের মধ্যে দিল্লির করোল বাগের আজমল খান রোডে মশলার দোকান শুরু করল গুলাটি পরিবার। এখন ব্যবসার প্রধান ধর্মপাল গুলাটি। ভারত ও দুবাই মিলিয়ে সংস্থার কারখানা আছে মোট ১৮টি। ভাঁড়ারে আছে মোট ৬২ রকমের প্রোডাক্ট।
৯৬ বছর বয়সেও প্রতিদিন দিল্লি বা তার সংলগ্ন এলাকার অন্তত একটি কারখানা ধর্মপাল পরিদর্শন করবেনই। বিশাল ব্যবসা দেখভাল করতে তাঁকে সাহায্য করেন তাঁর ছয় মেয়ে এবং এক ছেলে।
তিনি নিজেকে এখনও তরুণ ভাবতেই ভালবাসেন। মশলা সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হলেও নিজে কিন্তু স্বল্পাহারী। বিশ্বাস করেন, কম খেলেই দীর্ঘ দিন সু্স্থ ভাবে বাঁচা যায়।
প্রতিদিন ভোর চারটেয় ঘুম থেকে উঠে হাঁটতে যান ধর্মপাল। ফিরে এসে যোগব্যায়ামের পরে হাল্কা প্রাতরাশ। বিকেলে এবং রাতেও হাঁটতে যান তিনি। মনের বয়স বাড়তে দেন না তিনি। স্মার্টফোনে নিয়মিত খবর পড়েন। চেক করেন হোয়াটসঅ্যাপ।
দিল্লির কীর্তিনগর ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায় তাঁর বাসভবন ‘এমডিএইচ হাউজ’ সাজানো ধর্মপাল গুলাটির ছবি দিয়েই। হয় তাঁর বিশাল কাট আউট, নয় তো ছবি বা ক্যালেন্ডার। চারদিকে হাস্যমুখে বিরাজ করছেন ধর্মপাল।
মশলার বিজ্ঞাপনেও প্রধান মুখ ধর্মপালই। তবে বিজ্ঞাপনে অভিনয় করা নেহাতই কাকতালীয়। কোনও এক বিজ্ঞাপনে শুটিং-এর দিন অনুপস্থিত ছিলেন জনৈক অভিনেতা। এ দিকে বাকিদের তো মাথায় হাত। শেষে বিজ্ঞাপন সংস্থার পরিচালকের নির্দেশে ধর্মপাল গুলাটি নিজেই অভিনয় করলেন কনের বাবার ভূমিকায়।
সেই শুরু। এখন এমডিএইচ মশলার বিজ্ঞাপন তাঁকে ছাড়া হয় না। কোনও বিজ্ঞাপনে তিনি নিজে খাবার চেখে বলছেন কোন খাবার সেরা। আবার কোথাও তিনি আশীর্বাদ করছেন নবদম্পতিকে। ধর্মপাল গুলাটি নিজেই এখন ব্র্যান্ড। ছবি : সোশ্য়াল মিডিয়া