Narendra Modi

সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরবেন কেন? নানা জল্পনা মোদীর টুইটে

কেউ মজা করে লিখছেন, ‘‘এ অনেকটা শোলে-তে ট্যাঙ্কে উঠে বীরুর আত্মহত্যার হুমকির মতো!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২০ ০৩:০৫
Share:

নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

যেন আচমকা ‘সন্ন্যাসের ইঙ্গিত’! আজ সন্ধ্যায় নরেন্দ্র মোদীর টুইট, ‘‘রবিবার থেকে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবে নিজের সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছি। (এ বিষয়ে) আপনাদের সকলকে জানাব।’’ একই ঘোষণা বাকি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকেও।

Advertisement

এই টুইট পাতে পড়া মাত্র সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড়। বিজেপির অন্দরে অনেকের প্রশ্ন, ‘‘এর পরে আমাদেরও ছাড়তে বলা হবে নাকি?’’ কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর পাল্টা টুইট, ‘‘ঘৃণা ছাড়ুন। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট নয়।’’ তাতে এক বিজেপি নেতার কটাক্ষ, ‘‘গাঁধী পরিবারের সমস্ত বিপ্লব তো টুইটেই। মোদীজির এই ইঙ্গিতে এমন প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক।’’

ভোট-প্রচারে সোশ্যাল মিডিয়াকে প্রায় শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া মোদী সত্যিই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করবেন কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবু কেউ মজা করে লিখছেন, ‘‘এ অনেকটা শোলে-তে ট্যাঙ্কে উঠে বীরুর আত্মহত্যার হুমকির মতো! আখেরে যা ঘটবে না।’’ আবার মেট্রোর কামরায় প্রশ্ন, ‘‘চিনের মতো ভারতেও মত প্রকাশের সব রাস্তা কি বন্ধ করে দেওয়া হবে? সারা দেশই কাশ্মীর হয়ে যাবে নাকি?’’ কারও জিজ্ঞাসা, ‘‘ভোট-প্রচার থেকে বিরোধীদের নেটে হেনস্থা (ট্রোল)— সব বিষয়ে সিদ্ধহস্ত বিজেপি নেতা ‘সন্ন্যাস’ নিতে যাবেন কেন?’’ কারও আবার মনে হচ্ছে, মার্কিন বহুজাতিককে হটিয়ে হয়তো ‘দেশি অবতার’ আনার কথা ঘোষণা করবেন মোদী। গ্রাহকদের যাবতীয় তথ্য বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার হাতে যাওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন দড়ি টানাটানি চলছে ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে। এই জল্পনায় ইন্ধন জুগিয়েছে আরও কিছু তথ্য।

Advertisement

প্রথমত, সঙ্ঘ পরিবার স্বদেশি সোশ্যাল মিডিয়ার পক্ষপাতী। আজও স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের অশ্বিনী মহাজনের টুইট, ‘‘কখনও এ ভাবে ছেড়ে দেবেন না। বরং টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের দেশি সংস্করণ তৈরিতে সহায়তা করুন।’’ দ্বিতীয়ত, মন্ত্রী ও আমলাদের নিজেদের মধ্যে কথা বলার জন্য হোয়াটসঅ্যাপের ধাঁচে মেসেজিং সার্ভিস তৈরি করছে ন্যাশনাল ইনফর্মেটিক্স সেন্টার। বিভিন্ন সরকারি ওয়েবসাইট তৈরির দায়িত্বে থাকা ওই সংস্থার এই পাইলট প্রকল্পের নাম জিআইএমএস। অনেকের প্রশ্ন, তার পরিধি বাড়িয়ে ‘দেশি হোয়াটসঅ্যাপ’ কি স্রেফ সময়ের অপেক্ষা?

ফেসবুকে ফলোয়ারের সংখ্যায় মোদীকে পিছনে ফেলা রাজনীতিক শুধু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০০৯ সালে যোগ দেওয়া টুইটারেও ফলোয়ারের সংখ্যা ৫.৩৩ কোটি। এহেন প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরে যেতে চাওয়ায় অনেকের প্রশ্ন, মোদী তো সংবাদমাধ্যমের সামনে আসেন না। এ বার সোশ্যাল মিডিয়া থেকেও সরে গেলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের উপায়? প্রধানমন্ত্রীর নমো টিভি, নমো অ্যাপের ভবিষ্যৎ কী? কেউ বলছেন, দিল্লির সংঘর্ষে দেরিতে মুখ খোলা থেকে শুরু করে অর্থনীতি— বিভিন্ন বিষয়ে সরাসরি সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে বলেই কি এমন ভাবনা? বিশেষত তিনি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন অর্থনীতির ভরাডুবি নিয়ে কী ভাবে আক্রমণ করতেন, হালে তা বার বার উঠে আসছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়।

তবে অনেকেরই আশঙ্কা, চিনের ধাঁচে কি এ দেশেও অচল হবে ফেসবুকে অবাধ কথোপকথন বা গুগ্‌লের জি-মেল দেওয়া-নেওয়া? সম্প্রতি সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে যে-ভাবে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করা হয়েছে, এই ঘোষণা তার ‘প্রতিশোধের’ই প্রথম ধাপ নয় তো? ইতিউতি প্রশ্ন, ‘‘দেশের কোনও বড় শিল্পপতি কি এই ব্যবসায় আসছেন? নাকি দেশি প্রযুক্তিতে চলা সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারিতে সুবিধা হবে সরকারের?’’ উত্তর রবিবার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement