দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল। —ফাইল চিত্র।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ১০০ কোটি টাকার ঘুষ চেয়েছিলেন বলে আদালতকে জানাল ইডি। তাদের অভিযোগ, সিবিআই তদন্তে এই তথ্য জানা গিয়েছে। তদন্তে এ-ও জানা গিয়েছে যে, কেজরীওয়াল তাঁর দলের তহবিলের জন্য ওই অর্থ চেয়েছিলেন। বুধবার দিল্লির রউস অ্যাভিনিউ আদালতে শুনানি ছিল কেজরীওয়ালের জামিনের মামলার। সেখানেই কেজরীর জামিনের বিরোধিতা করে আদালতে ওই যুক্তি দেন ইডির আইনজীবী।
আবগারি মামলায় অভিযুক্ত কেজরীর হেফাজতের মেয়াদ বুধবারই শেষ হওয়ার কথা ছিল। মেয়াদ শেষে আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর জামিন হয়নি। কেজরীর জামিনের বিরোধিতা করে তাঁকে জেল হেফাজতেই রাখার পক্ষে সওয়াল করে ইডি। শেষে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর হেফাজতের মেয়াদ ৩ জুলাই বাড়িয়ে দেয় দিল্লির রউস অ্যাভিনিউ কোর্ট।
বুধবার রউস অ্যাভিনিউ আদালতে বিচারক ন্যায় বিন্দুর এজলাসে এই মামলার শুনানি চলছিল। কেজরীর পক্ষে আদালতে সওয়াল করেন অভিজ্ঞ আইনজীবী বিক্রম চৌধুরী। উল্টো দিকে ইডির তরফে ছিলেন, অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু। ইডির আইনজীবী রাজু আদালতে বলেন, ‘‘সিবিআই তদন্তে জানা গিয়েছে কেজরীওয়াল ১০০ কোটি টাকার উৎকোচ চেয়েছিলেন।’’ তা ছাড়াও আদালতে তাঁর যুক্তি, ‘‘কেজরী যে অপরাধ করেননি, তা এখনও প্রমাণ করতে পারেননি তিনি।’’
অন্য দিকে, কেজরীর আইনজীবী চৌধুরী আদালতকে জানান, এই টাকা লেনদেনের কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই। যা আছে তা কেবলই কিছু দাবি এবং অভিযোগ। যাঁরা নিজেরাই আবগারি মামলায় নানা অভিযোগে অভিযুক্ত, তাঁরা ওই দাবি করছেন। আর এ-ও জানা গিয়েছে যে, তাঁদের জামিন পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। ফলে তাঁদের দাবি বা অভিযোগ নির্ভরযোগ্য কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তা না হলে ২০২২ সাল থেকে চলা মামলায় তারা এত দিন চুপ করে থাকত না। হঠাৎ ২০২৪ সালে তারা মুখ খুলল কেন?
চৌধুরী আদালতকে বলেন, ‘‘ইডির তদন্ত রিপোর্টে স্পষ্ট, তারা তাদের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে এ বিষয়ে তদন্ত করছে। কেজরীওয়াল যা-ই করুন, তাতেই তাদের আপত্তি। উনি যদি এক গ্লাস জলও চান, তা নিয়েও আপত্তি করবে তারা। এটা কি বিচার হচ্ছে, না কি নিপীড়ন হচ্ছে?’’
এর পাল্টা ইডির আইনজীবী সওয়াল করেন কেজরীর নিজেকে নিরাপরাধ প্রমাণ করার যুক্তি নিয়ে। তিনি আদালতকে বলেন, এখানে বিচার্য বিষয় একটাই। অর্থ তছরুপ যে হয়েছে, সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। জানার বিষয় হল, তাতে কেজরীওয়ালের ভূমিকা কী ছিল। আদালত একটু খতিয়ে দেখলেই বুঝবে, কেজরীওয়াল বা তাঁর আইনজীবীর তরফে এমন কোনও বক্তব্য বা প্রমাণ দেওয়া হয়নি, যা থেকে বোঝা যাবে তিনি এই অপরাধ করেননি।
দু’পক্ষের যুক্তি এবং পাল্টা যুক্তির দীর্ঘ শুনানির পরে বিচারক কিছু ক্ষণের বিরতি নেন। পরে তিনি জানান দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরীওয়ালকে এখনই জামিন দিচ্ছে না আদালত। বদলে আরও ১৪ দিন তাঁর জেল হেফাজতের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হচ্ছে।