ফাইল চিত্র।
মোহন ভাগবত কি নরেন্দ্র মোদীকে আয়না দেখালেন? না কি কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের উপরেও গাফিলতির দায় চাপিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কিছুটা দায়মুক্ত করতে চাইলেন?
সরসঙ্ঘচালকের মন্তব্য ঘিরে এখন মোদী সরকার ও বিজেপির অন্দরমহলে এই জল্পনা তুঙ্গে।
মোহন ভাগবত শনিবার বলেছেন, কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের পরে চিকিৎসকরা দ্বিতীয় ঢেউ সম্পর্কে সাবধান করা সত্ত্বেও সরকার, প্রশাসন ও মানুষ যথেষ্ট সতর্ক হয়নি। তার ফলেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এত দিন বিরোধীরা অভিযোগ তুলছিলেন, মোদী সরকার দ্বিতীয় ঢেউ সম্পর্কে আগেভাগে প্রস্তুতি নেয়নি। এখন তাঁদের বক্তব্য, বিজেপি-আরএসএস মিলে আমজনতার উপরে দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু বিজেপি-র অন্দরে ভাগবতের মন্তব্যের পরে প্রশ্ন উঠেছে, তাঁর কথায় কি মোদীর কোভিড মোকাবিলা সম্পর্কে আরএসএসের অসন্তোষ ফুটে উঠল?
বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী নিজে গত সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ছ’বার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। সংক্রমণ বৃদ্ধি, দ্বিতীয় ঢেউ সম্পর্কে সাবধান করেছেন। পাল্টা প্রশ্ন হল, তা হলে প্রধানমন্ত্রী নিজে বাংলা-সহ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের প্রচারে বিরাট সভা করলেন? কেনই বা কুম্ভে ভিড়ের অনুমতি দিলেন? প্রতিষেধকের বন্দোবস্তে যথেষ্ট সক্রিয় হলেন না কেন?
তথ্যের অধিকার আইনে এক প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, বাজেটে টিকার জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও এখনও পর্যন্ত তার থেকে মাত্র ৪,৪৪৮.৭৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। প্রথমে সিরামের থেকে ২১০ টাকা দরে ৫.৬ কোটি ডোজের কোভিশিল্ড ও ভারত বায়োটেকের থেকে ৩০৯.৭৫ টাকা দরে কোভ্যাক্সিন কেনা হয়েছিল। তার পরে দু’দফায় ১৫৭.৫০ টাকা দরে আরও ২৮.৫ কোটি ডোজের বরাত দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে মাত্র ৩৫.১ কোটি ডোজের বরাত দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রের পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের সরকারের কোভিড মোকাবিলা নিয়েও বিজেপি প্রশ্নের মুখে। বিশেষত গঙ্গায় ভাসমান শব, গঙ্গার তীরে বালিতে পুঁতে রাখা মৃতদেহের ছবি কেন্দ্র ও রাজ্যের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে বলে বিজেপির নেতৃত্বের আশঙ্কা। বিরোধীদের দাবি, মৃত্যুর সংখ্যা ধামাচাপা দিয়ে রাখলেও এতে কোভিডে মৃত্যুর ছবি স্পষ্ট।
আজ প্রধানমন্ত্রী মোদী ফোনে উত্তরপ্রদেশের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে যোগীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তার মধ্যেই বিজেপির ব্যর্থতা আড়াল করতে দলের নেতা অমিত মালবীয়র দাবি, এর আগেও বহু বার জলে শব ভাসতে দেখা দিয়েছে। বহু বছর ধরেই উন্নাও, ফতেপুর, রাবরেলীর কিছু মানুষ নিজের সম্প্রদায়ের রীতি মেনে দাহর বদলে বালিতে মৃতদেহ কবর দেন। অনেকে মনে করেন, বছরের এই সময় দাহ-সংস্কারের জন্য শুভ নয়। তাই তাঁরা মৃতদেহ জলে ভাসিয়ে বা বালিতে পুঁতে দেন। বিজেপি নেতা এই দাবি করলেও আজ মোদী সরকারেরই জলশক্তি মন্ত্রক রাজ্যগুলিকে চিঠি দিয়ে জলে শব ভাসানো বা নদীর তীরে দেহ পোঁতা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে।
বিজেপি ও আরএসএস নেতারা মনে করছেন, ভাগবতের মন্তব্যের অন্তর্নিহিত অর্থ যা-ই হোক না কেন, এখনই সঙ্ঘের সঙ্গে মোদীর সংঘাত বাধবে না। কারণ মূলত মোদীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণেই আরএসএসের সাধারণ সম্পাদকের পদে দত্তাত্রেয় হোসাবলে উঠে এসেছেন। ভাগবতের পরে তিনিই আরএসএসের দ্বিতীয় ব্যক্তি। তবে সংঘাত না বাধলেও অস্বস্তি থেকেই যাচ্ছে। বিজেপির এক নেতা বলেন, “২০১৪-য় এই ১৬ মে-তেই লোকসভা ভোটের ফলাফলে মোদীর নেতৃত্বে বিজেপির জয় ঘোষণা হয়েছিল। এখন এমনই পরিস্থিতি, সে কথাও কারও মনে নেই।”