হিংসা বিধ্বস্ত মণিপুর। —ফাইল চিত্র।
সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হচ্ছে আগামিকাল থেকে। আর অধিবেশনের প্রথম দিন থেকেই মণিপুরের অশান্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জবাব চেয়ে সরব হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিরোধী নেতৃত্বের। কাল সকালে সংসদ শুরুর আগে বিরোধী দলগুলির বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত রণকৌশল ঠিক হওয়ার কথা।
সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নন, মণিপুর প্রশ্নে একেবারে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা ভেঙে মুখ খোলার দাবিতে একযোগে সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে বিরোধী দলগুলি। দাবি উঠেছে, মুলতুবি প্রস্তাব এনে মণিপুর প্রশ্নে আলোচনা করারও। আজ সর্বদলীয় বৈঠকে শাসক শিবির মণিপুর-সহ সব বিষয়ে আলোচনায় রাজি হওয়ার বার্তা দিলেও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের যে দাবি বিরোধীরা তুলছেন, তাতে সরকার পক্ষ কতটা রাজি হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে মুখ না খুললে এ বারের বাদল অধিবেশনও জলে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
এই অধিবেশনে ২১টি নতুন বিল সংসদে পেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। যার মধ্যে রয়েছে দিল্লির আমলাদের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের হাতে থাকা সংক্রান্ত বিলটি। এ ছাড়াও তথ্য সুরক্ষা আইন, রাজ্যের পাশাপাশি জাতীয় স্তরে জন্ম-মৃত্যুর নথিভুক্তিকরণের মতো বিতর্কিত বিলগুলি। সূত্রের মতে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চেয়ে সরব হওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে বিরোধীদের।
আজ বিরোধীদের বক্তব্যের মূল দাবিই ছিল, মণিপুর প্রশ্নে অবস্থান স্পষ্ট করুক নরেন্দ্র মোদী সরকার। লোকসভার কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘বাদল অধিবেশনে মুলতুবি প্রস্তাব এনে মণিপুর নিয়ে আলোচনা ও প্রধানমন্ত্রীর জবাব চেয়ে সরব হয়েছে কংগ্রেস।’’ সূত্রের খবর, অন্য দলগুলিও কংগ্রেসের ওই দাবিকে সমর্থন করে।
বিরোধীরা যেমন মণিপুর প্রশ্নে সরব হওয়ার কৌশল নিয়েছে, তেমনই পাল্টা হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার বিষয়টি সংসদে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বিজেপির। আজ বিষয় উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এমন ইঙ্গিত দিয়েছে সরকার পক্ষ। সূত্রের খবর, সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী বৈঠকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, মণিপুর-সহ বিরোধীদের তোলা সব বিষয়ে আলোচনায় রাজি সরকার। বিজেপি সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক সন্ত্রাস নিয়ে সংসদের উভয় কক্ষে বিষয়টি তুলে সরব হবে সরকার পক্ষ। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘রাজ্যে শাসক দলের হাতে কংগ্রেস কর্মীরা মার খাচ্ছেন আর দু’দলের শীর্ষ নেতৃত্ব একে অপরের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন। ওই বিপরীত চিত্র কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলগুলির।’’ অনেকের মতে, আসলে এ কথা বলে বিরোধী জোটের দুই বড় শরিক কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে কেন্দ্রীয় স্তরে যে ঐক্যের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, তা ভাঙার কৌশল নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। গত কাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এনডিএ বৈঠকেও বাংলার সন্ত্রাস প্রশ্নে সরব হন। এ দিন বিকেলে শাসক শিবিরের রণকৌশল ঠিক করতে বৈঠকে বসেন এনডিএ শরিকেরা। সূত্রের মতে, মণিপুর, মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয়গুলি নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণের পাল্টা রণকৌশলে সরকারের অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
মণিপুর প্রসঙ্গ তুলে মোদী সরকারের অস্বস্তি বাড়ানোর মতোই দিল্লির আমলাদের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিলটির বিরোধিতাও একযোগে করার পরিকল্পনা নিয়েছেন বিরোধীরা। আম আদমি পার্টির রাজ্যসভা সাংসদ সঞ্জয় সিংহ আজ ওই বিলটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। সূত্রের মতে, ওই বিলটি এই অধিবেশনে পাশ করাতে মরিয়া মোদী সরকার। সেই পরিস্থিতিতে সব বিরোধী দল একজোট হয়ে বিলটির বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লোকসভায় সংখ্যার কারণে বিজেপির বিলটি পাশ করাতে সমস্যা না হলেও রাজ্যসভায় বিরোধী দলগুলি একজোট হলে চাপে পড়বে মোদী সরকার। লোকসভা ভোট এগিয়ে আসতেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আইন আনার প্রশ্নে তৎপর হয়েছে বিজেপি। বিরোধীদের মতে, হিন্দু ভোটের মেরুকরণের উদ্দেশ্যেই ওই আইন আনতে চায় তারা। ওই আইন নিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছে অখিলেশ যাদবের দল এসপি। অন্য দিকে আজ সর্বদলীয় বৈঠকে মহিলা সংরক্ষণ বিলের পক্ষে সওয়াল করেছে বিজেডি। দলের দাবি, তাদের ওই দাবির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে ওয়াইএসআর কংগ্রেস এবং বিআরএস।