কেন্দ্রের দাবি, নাগরিকত্ব হারানোর কোনও প্রশ্ন নেই। —ফাইল ছবি।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) কী, কোথায় এবং কী ভাবে তার মারফত নাগরিকত্বের শংসাপত্র পেতে আবেদন করতে হবে— এ রকম বিভিন্ন বিষয় ইতিমধ্যেই খোলসা করার চেষ্টা করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কিন্তু তাতেও ধোঁয়াশা পুরোপুরি কাটছে না। এখনও স্পষ্ট নয় বহু প্রশ্নের উত্তরও।
প্রশ্ন: ভারতের নাগরিক কারা?
উত্তর: এ দেশের নাগরিকত্ব আইনের ব্যাখ্যা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে—
(১) ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারির আগে যাঁদের অবিভক্ত ভারতে জন্ম এবং স্বাধীনতার পরেও যাঁরা ভারতবর্ষেই থেকে গিয়েছেন, তাঁরা সকলেই ভারতের নাগরিক।
(২) ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারির আগে যাঁদের অবিভক্ত ভারতে জন্ম এবং ওই সময়ের মধ্যে যাঁরা পাকাপাকি ভাবে থাকার জন্য এ দেশে চলে এসেছেন, তাঁরাও তা-ই।
(৩) ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে যাঁরা ভারতে জন্মেছেন, তাঁরা সকলেই ভারতের নাগরিক।
(৪) ১৯৮৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০০৪ সালের ২ ডিসেম্বরের মধ্যে এ দেশে যাঁদের জন্ম, তাঁদের বাবা-মায়ের মধ্যে অন্তত এক জন ভারতের নাগরিক হলেই তিনিও ভারতীয়।
(৫) ২০০৪ সালের ৩ ডিসেম্বর কিংবা তার পরে যাঁদের এ দেশে জন্ম, তাঁদের বাবা-মা দু’জনেই ভারতীয় হলে, তিনিও এ দেশের নাগরিক। কিন্তু বাবা-মায়ের মধ্যে অন্তত এক জন ভারতীয় নাগরিক না হলেই সন্তানের নাগরিকত্বও প্রশ্নের মুখে পড়বে।
প্রশ্ন: সিএএ-তে কাদের আবেদন করার প্রয়োজনই নেই?
উত্তর: নাগরিকত্ব আইনের ব্যাখ্যায় যাঁরা (১) থেকে (৪)-এর মধ্যে, তাঁদের আবেদন করার প্রয়োজনই নেই।
প্রশ্ন: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে কাদের আবেদন করার কথা ভাবতে হচ্ছে?
উত্তর: ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মতো দেশ থেকে যে সমস্ত অমুসলিমরা (হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি) ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে এ দেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন এবং অন্তত পাঁচ বছর ভারতে কাটিয়েছেন, তাঁরা নাগরিকত্বের শংসাপত্র পেতে সিএএ-তে আবেদন জানাতে পারেন বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছে কেন্দ্র।
নাগরিকত্ব আইনের ব্যাখ্যায় যাঁরা (৫) নম্বরের অন্তর্ভুক্ত, তাঁদেরও আবেদনের কথা ভাবতে হতে পারে।
প্রশ্ন: যে সমস্ত নথি চাওয়া হয়েছে, তার তালিকা তো দীর্ঘ। কারও কাছে নথি না থাকলে?
উত্তর: আবেদনকারীর কাছে যদি নাগরিকত্বের আবেদনের জন্য প্রামাণ্য নথি না থাকে, তা হলে জেলা স্তরে থাকা যাচাই-কমিটি বাড়তি নথি জমা দিতে বলতে পারেন। কিন্তু তার পরেও আবেদনকারী নথি দিতে না পারলে, সেই আবেদন খারিজ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ধরে নেওয়া হবে নাকি ফের আবেদনের সুযোগ দেওয়া হবে, সেই বিষয়টি এখনও বিজ্ঞপ্তিতে একেবারেই স্পষ্ট নয়।
প্রশ্ন: সিএএ মারফত নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রশ্নে ধর্ম একটি বড় বিষয়। কিন্তু কার ধর্ম কী, তা কী ভাবে প্রমাণ হবে?
উত্তর: পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের এমন কোনও সরকারি নথি, যাতে ধর্মের উল্লেখ আছে।
দিতে হবে একটি হলফনামাও। তাতে ওই ব্যক্তি যে ধর্মাবলম্বী (হিন্দু/শিখ/বৌদ্ধ/জৈন/পার্সি/খ্রিস্টান), তার প্রতিনিধিত্বকারী কোনও ধর্মীয় সংস্থার প্রধান লিখে দেবেন যে, ভারতে আসা ওই ব্যক্তি আফগানিস্তান/বাংলাদেশ/পাকিস্তান থেকে এসেছেন এবং তিনি কোন ধর্ম পালন করেন।
প্রশ্ন: কোনও হেল্পলাইন নম্বর?
উত্তর: বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, সিএএ মারফত নাগরিকত্ব আবেদনে সহায়তা করতে একটি হেল্পলাইন নম্বর দ্রুত খোলা হবে। আবেদনকারীরা ভারতের যে কোনও প্রান্ত থেকে বিনামূল্যে ওই নম্বরে আবেদন করতে পারবেন। সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ওই নম্বর খোলা থাকবে।
প্রশ্ন: খটকা কোথায়?
উত্তর: ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে যাঁরা কার্যত এক-কাপড়ে এ দেশে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁদের সকলের কাছে আগের দেশের নথি থাকবে কী করে?
যদি তা না-থাকে, তবে এখন কী ভাবে তা জোগাড় করা সম্ভব?