ভার্চুয়াল দুনিয়ায় শুধু কথা বলে জনপ্রিয় হয়েছেন, এমন নজির আছে বেশ কিছু। তাঁদের মধ্যে প্রথম সারিতে আছেন সন্দীপ মহেশ্বরী। বহু নেটিজেন তাঁর ফলোয়ার। অনেকেই বলেন, হতাশাগ্রস্ত জীবনে এগিয়ে চলার মন্ত্র দেয় তাঁর কথা।
সন্দীপ মহেশ্বরীর নিজের জীবনের সিংহভাগ জুড়ে আছে স্ট্রাগল। হয়তো নিজেকে আয়নায় দেখতে পান বলেই তাঁর কথা ম্যাজিকের মতো কাজ করে। জীবনের ওঠাপড়াকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন সন্দীপ।
অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবসায় দীর্ঘ দিন ছিলেন সন্দীপের বাবা। কিন্তু সেই ব্যবসা ভেঙে পড়ায় তার জের এসে পড়ে সন্দীপের জীবনে। তখন তিনি ক্লাস টেনের ছাত্র।
এরপর বেশ কিছু ব্যবসার চেষ্টা করেন সন্দীপের বাবা-মা। কনভেয়র বেল্টের ব্যবসা থেকে পাবলিক ফোনের দোকান। কিন্তু কোনও কিছুই সফল হয়নি। বাবার হতাশা দেখে সন্দীপের মনে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে যায়, জীবনে সাফল্য পাওয়া অসম্ভব।
সেই ধারণা পাল্টে যায় মার্কেটিং-এর চাকরি করতে গিয়ে। একটি সেমিনারে গিয়ে শোনেন, একুশ বছরের এক যুবক মাসে আড়াই লক্ষ টাকা বেতন পান। সন্দীপের প্রত্যয় হয়, একজন পারলে তিনিও পারবেন। ক্রমশ জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে থাকে।
জীবন সংগ্রামের পর্বে তিনি প্রথাগত লেখাপড়ার বাইরে একটা অন্য জগতের স্বাদ পান। মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও অসম্পূর্ণ থেকে যায় তাঁর পড়াশোনা। দিল্লির কিরোরিমল কলেজে তিনি ছিলেন বি কম তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। সেই অবস্থায় তিনি কলেজ ছেড়ে দেন।
নতুন জীবন শুরু হয় মার্কেটিং-এর পেশায়। সেখানে অফিসে চাকরি থেকে দরজায় ঘুরে ঘুরে জিনিস বিক্রি— কী করেননি তিনি! ঘরোয়া প্রয়োজনে লাগে, এমন জিনিস বানিয়ে নিজেই বিক্রি করতেন সন্দীপ।
উনিশ বছর বয়সে শুরু মডেলিংয়ের কেরিয়ার। কিন্তু সেখানেও মডেলদের উপর শোষণের হাল দেখে তিনি বীতশ্রদ্ধ। মডেলিং ছেড়ে শিখলেন ফটোগ্রাফি। কিছু দিন পরে নিজের সংস্থা শুরু করলেন। মডেলদের পোর্টফোলিও তৈরি হত সেই সংস্থায়।
পরের বছর, ২০০২ সালে তিন বন্ধুর সঙ্গে মিলে শুরু করলেন একটি সংস্থা। সেটাও বন্ধ হয়ে গেল ছ’মাসের মধ্যে। এরপর তাঁর মনে হল, নিজের ভাবনাচিন্তা ভাগ করে নেবেন। একুশ বছর বয়সে লিখলেন বই।
এরপর ফের পথবদল। ২০০৬ সালে শুরু করলেন ‘ইমেজেস বাজার’। এ বার তিনি একসঙ্গে টেলিকলার, কাউন্সেলর এবং ফটোগ্রাফার। আজ, এই সংস্থার সাত হাজার ক্লায়েন্ট ছড়িয়ে আছে ৪৫টি দেশে।
এই উদ্যোগ তাঁর কেরিয়ারে মাইলফলকের মতো। মাত্র ২৯ বছর বয়সে তিনি দেশের সফলতম অন্ত্রেপ্রেনর বা উদ্যোগী। তাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য, ‘ব্যর্থতাকে ভয় পেয়ো না’ এবং ‘নিজের এবং অন্যদের প্রতি সৎ থাকো’।
তবে নিছক উদ্যোগীর বাইরে তাঁর পরিচয় আরও বিস্তৃত। সারা পৃথিবীতে তাঁর অগণিত ভক্ত। তাঁর কথায় নিজেদের প্রতি বিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন শ্রোতারা। জীবন অনেক বেশি সহজ হয়ে ধরা দিয়েছে তাঁদের কাছে। জানিয়েছেন, সন্দীপের অনুগামীরা।
সন্দীপের কথায়, জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা বা ব্যর্থতাই সবথেকে শিক্ষণীয় হয়ে দেখা দিয়েছে তাঁর সামনে। তাঁর কথায়, সহজ জীবনকে অযথা জটিল করে লাভ নেই। জীবন ‘আসান হ্যায়’। বলছেন অন্ত্রেপ্রেনর, ফটোগ্রাফার, মোটিভেটর, মডেল এবং ইনস্পিরিশনাল স্পিকার সন্দীপ মহেশ্বরী।